Logo
Logo
×

রাজনীতি

দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত: জিএম কাদের

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৮ পিএম

দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত: জিএম কাদের

ছবি : সংগৃহীত

‘আমরা শান্তি চেয়েছিলাম, আমরা একটি সুন্দর দেশ চেয়েছিলাম। আমরা অভিযোগ পাচ্ছি, হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চলছে, বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুদের ওপর আগেও অত্যাচার ও নির্যাতন চলেছে। হিন্দু সম্প্রদায় বিচার চেয়ে আশ্বস্ত হতে পারছে না। মানুষ যতটা অত্যাচারিত তার চেয়ে কয়েকগুন বেশি ভীত ও সন্ত্রস্ত। শুধু হিন্দুরাই নয়, দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত।’— মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় পার্টি কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিলনায়তনে শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষ্যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এ মন্তব্য করেন তিনি বলেন।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম (গোলাম মোহাম্মদ) কাদের বলেন, ‘আমরা এমন একটা সমাজ চাই, যে সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী বা নাগরিকদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। এ দেশের সকল নাগরিকই এ দেশের মালিক। আমরা সবাই মিলে আমাদের দেশ গড়ব—যে সমাজে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তাবোধ করে না, সে সমাজকে সভ্য সমাজ বলা যায় না।’

তিনি বলেন, এখন দেখা যাচ্ছে দাগী আসামি ও খুনিদের জেলখানা থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে অসহায় ও নিরাপদ মানুষদের জেলখানায় আটকে রাখা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও দুঃখ প্রকাশ করা হচ্ছে মিথ্যা মামলার বিষয়ে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজনৈতিক কারণে যাদের আটক করা হচ্ছে তাদের জামিন দেওয়া হচ্ছে না। জুলাই হত্যাকান্ডের ঘটনায় অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, কিন্তু যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাদের জামিন হচ্ছে না।

জিএম কাদের বলেন, ‘আমি মনে করি, সম্মানিত বিচারকবৃন্দ ন্যায় বিচারের জন্য শপথ নিয়েছেন। তাই, তারা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করবেন।’

তিনি বলেন, যাকেই সরকারের কঠিন প্রতিপক্ষ মনে করা হচ্ছে তাদেরকেই এ ধরণের মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এভাবেই সাধারণ মানুষকে দমন করা হচ্ছে।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, দেশে দুর্নীতি কমেনি। কিছুদিন আগে একজন অবসরপ্রাপ্ত সচিব অভিযোগ করেছেন অন্তত সরকারের ৮ জন উপদেষ্টার বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, পোস্টিং দিয়ে, পদোন্নতি দিয়ে এবং বিভিন্নভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে ওই উপদেষ্টারা শতশত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এখন টাকা ছাড়া দেশে কোনো কাজই হয় না।

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, অনেক উপদেষ্টাকেই ব্যক্তিগতভাবে চিনি এবং জানি যে তারা অত্যন্ত সৎ। কিন্তু তাদের ডিপার্টমেন্টে যদি হরিলুট চলে তাহলে উপদেষ্টাবৃন্দ কি দুর্নীতির দায় এড়াতে পারেন? প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী যারা বর্তমান সরকারের নিয়োগদাতা বা অভিভাবক তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইংরেজ দার্শনিক ও রাজনীতিবীদ লর্ড এটনের একটি বিখ্যাত বক্তব্য হলো, ক্ষমতা মানুষকে দুর্নীতির দিকে নিয়ে যায়; এবং সর্বময় ক্ষমতা মানুষকে নিশ্চিতভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত করে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দেখছি দেশ এখন দুর্নীতির সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। সর্বময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো দৃশ্যমান অ্যাকশন নেই। বর্তমান সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অ্যাকশন না নিলেও নিরপরাধ এবং সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অ্যাকশন নিচ্ছে।

জিএম কাদের বলেন, সনাতন ধর্ম মতে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্য শ্রীকৃষ্ণের আবির্ভাব হয়েছিল, যাতে সমাজে সু-শাসন থাকে, আর সু-শাসন থাকলেই মানুষের আত্মায় শান্তি মেলে। এখন আমাদের দেশে চলছে দুষ্টের পালন আর শিষ্টের দমন।

তিনি  বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা নাকি আওয়ামী লীগের সাথে থাকে। এখন যাকে তাকে আওয়ামী লীগের দোসর ট্যাগ দিয়ে নির্যাতন করায় যেন কোনো অপরাধ নেই। হিন্দু সম্প্রদায়ের নতুন প্রজন্মের অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে না। কিন্তু, তাদেরও আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। হিন্দু সমাজের সদস্যরা অনেক বেশি দেশপ্রেমিক, তারা বাংলাদেশকে নিজের দেশই মনে করে। হিন্দু সমাজের যারা দেশ ত্যাগ করে ভারতের গেছে, তারা বাধ্য হয়েই গেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের ভাইদের দেশে রাখতে পারিনি। প্রতিটি ন্যায়সংগত আন্দলন-সংগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা সাহসিকতার সাথে অংশ নেয়। হিন্দুদের প্রতি বর্তমান সরকার ও তাদের সঙ্গীদের দৃষ্টিভঙ্গির আমরা প্রতিবাদ করি। হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা দ্বিধা করব না।’

জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান  বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সংগ্রাম করে হলেও অধিকার আদায় করতে হবে। হিন্দুদের যৌক্তিক আন্দোলন সংগ্রামে আমরা আগের মতোই পাশে থাকব। আমাদের নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ একজন অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। চাকরি-বাকরিসহ নানাবিধ বৈষম্য থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।’ 

তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার দেশ চালাতে ব্যর্থ। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দায়-দায়িত্ব এই সরকারকেই নিতে হবে। আপনারা সুন্দরভাবে দেশ চালাতে না পারলে দায়িত্ব থেকে সরে যান। দেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। দেশকে ভালোর দিকে না নিতে পারলেও খারাপের দিকে নিবেন না।’ 

সাংদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। জাতীয় পার্টির যেসব নেতার কারণে দেশের মানুষ আমাদের দোসর বলে আখ্যা দেয়, সেই নেতারাই এখন সরকারের সাথে যোগাাযোগ করে জিএম কাদের বিহীন জাতীয় পার্টি গড়তে চায়। আমি সরকারের সকল অপকর্মের সমালোচনা করছি, তাই সরকারের একটি অংশ জাতীয় পার্টির বহিস্কৃত নেতাদের লাঙ্গল প্রতীক দিতে চাচ্ছেন বলে তারা প্রচার করছেন। আমাদের সৌভাগ্য, জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ আছে। কিছু ভাড়াটে লোকজন নিয়ে এবং গঠনতন্ত্র অমান্য করে কাউন্সিল করলেই দলের নেতৃত্ব পাওয়া যায় না। নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরাই জাতীয় পার্টি হিসেবে নিবন্ধিত। দলীয় ফোরামে কথা না বলে তারা বহিস্কৃতদের একত্রিত করে সরকারের একটি অংশের সহায়তায় জিএম কাদের বিহিন জাতীয় পার্টি গড়তে চাচ্ছে, যা কখনোই সফল হবে না।’

তুষার ঘোষের সভাপতিত্বে ও সমরেশ মন্ডল মানিকের সঞ্চালনায় এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন: জাতীয় পার্টি মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, ‘বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’-এর সভাপতি অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, যুব ইউনিটের সভাপতি শিবু সাহা, সনাতন পার্টির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. সুমন কুমার রায়, জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক নির্মল দাস, বাংলাদেশ ভক্ত সংঘ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অনিল পাল, জাতীয় হিন্দু মহাসংঘের উপদেষ্টা কৃষ্ণ নন্দি, মানবাধিকার নেত্রী সুমা বড়াল।

অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান খলিল, ভাইস চেয়ারম্যান মো. হেলাল উদ্দিন, আখতার হোসেন দেওয়ান, চেয়ারম্যানের প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী, দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন