Logo
Logo
×

রাজনীতি

নব্য বিএনপি নেতার থাবায় লন্ডভন্ড গাইবান্ধা-৫

Icon

গাইবান্ধা,প্রতিনিধি :

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৯ পিএম

নব্য বিএনপি নেতার থাবায়  লন্ডভন্ড গাইবান্ধা-৫

সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭ টি ইউনিয়ন মিলে গঠিত গাইবান্ধা-০৫ আসন। ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর নতুন যোগদান করে বিএনপির এক নেতার থাবায় লন্ডভন্ড হয়ে পড়েছে দলের কার্যক্রম। তিনি যোগদান করার পরই এক পক্ষকে কাছে নিয়ে টাকার খেলায় মেতে উঠেছেন। পদপদবী বাগিয়ে নিতে নিজের বলয়ের লোকদেরকে কাছে নিয়ে প্রকাশ্য গ্রুপিং করছেন। নেতাকর্মীদের নিজের বলয়ে নিয়ে আনতে না পারলেই ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার, কারণ দর্শানোর নোটিশ, মামলা হামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। 

এছাড়াও প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসন করতে ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক পদে দাপট খাটিয়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের  নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলা পর্যন্ত তার থাবায় কেউ রেহাই পাচ্ছে না। অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ। 

২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আসনটির সাবেক নমীনি হাসান আলী সরকার রাজনীতি থেকে অবসরে গেলে পর্যায়ক্রমে আসনটির হাল ধরে সোনাতলা সরকারী নাজির আক্তার কলেজের সাবেক জিএস মাইনুল ইসলাম শামীম, জেলা বিএনপির সম্পাদক রাজী রাহী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা শিল্পপতি কামরুজ্জামান সোহাগ, ঢাকার ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম নয়ন। 

২০১৪ সালে এক তরফা নির্বাচনের পর হাজী রাহী নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে, কামরুজ্জামান সোহাগ ও ময়নুল ইসলাম শামীম দলের হাল ধরে প্রত্যেকটি প্রোগ্রাম সচল রাখার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন ১৪৪ টি ওয়ার্ড বিএনপির মধ্য অন্তত ১০০ ওয়ার্ড বিএনপির নেতারা। ২০১৮ সালের ভোটের সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় হাই-কমান্ড মনোনয়ন দেন কৃষকলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ১৭ বছরের সহ-সভাপতি ফারুক আলম সরকারকে। দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে তারই ভোট করতে নিজেদের কর্মীদের উৎসাহিত করেন সাবেক দুই-ছাত্রনেতা ও তৎকালীন জেলা বিএনপির সদস্য, শামীম ও সোহাগ। শুধু কর্মীদের নয় নিজে ভোট করতে গিয়ে সাঘাটা থানায় ০২ টি মিথ্যা মামলার আসামী হয় কামরুজ্জামান সোহাগকে। 

যদিও ভোটের পরে ফারুক আলম সরকারের সাথে এক বছর গ্রুপিং করে রাজনীতি চাঙ্গা রাখেন কামরুজ্জামান সোহাগ। কিন্তু গ্রুপিং রাজনীতি নোংরামির দিকে গড়ালে কামরুজ্জামান সোহাগ ও ফারুক আলম সরকার এক মন্চে প্রোগ্রাম শুরু করেন ২০১৯ এর শেষ দিক থেকে। তারপর থেকে সবাই মিলে এক সাথে দল গোছানো শুরু করেন তারা। সাঘাটা ফুলছড়ি দুই উপজেলার প্রত্যেক টা ওয়ার্ড কমিটি গঠন, ফুলছড়ি উপজেলা বিএনপি এর কাউন্সিল থেকে শুরু করে বিএনপির সকল অংগ সংগঠনের কমিটি গঠনে ছিলো না কোন বিভেদ। দলের দুর্দিনে একই মঞ্চে দাড়িয়েছিলেন, সকল মনোনয়ন প্রত্যাশী। যার ফলে গাইবান্ধা-০৫ আসন টি পরিণত হয়েছিল বিএনপির দুর্গে।  

আগষ্ট পরবর্তী পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, আসন টিতে আওয়ামী সমর্থিত ব্যবসায়ী বগুড়ার রোসার্স হোটেল ও বার এর মালিক নাহিদুজ্জামান নিশাদকে দলে যোগদান করায় একদল সুযোগ সন্ধানী অর্থলোভী নেতা। নাহিদুজ্জামান নিশাদ জেলা বিএনপি তে যোগদানের আবেদনে সদস্য পদের আবেদন করলেও টাকা খেয়ে কেন্দ্রীয়সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও আব্দুল খালেক। দলের কেন্দ্রীয় দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা অর্থের বিনিময়ে তাকে সহ-সভাপতি পদ প্রদান করা হয়। তার সুপারিশপত্রে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের সুপারিশ ছিলো না। 

পট-পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় দফতর থেকে দলের ওয়ার্ড থেকে শুরু করে কেন্দ্র পর্যন্ত সব জায়গাতে যোগদান প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিষিদ্ধ থাকলেও দিনকাল অফিসের এক কর্মচারীর কুটচালে প্রথম যোগদান হয় গাইবান্ধাতে। তাও আবার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হিসেবে। যে কখনো কোনদিন বিএনপির সমর্থকও ছিলো না। তাকে জেলা বিএনপির সহ-সহ-সভাপতির পদ দেওয়াতে হতবাক হয় যায় জেলা বিএনপির সকল নেতাকর্মী। কথিত আছে এই পদ বাগিয়ে নিতে ৮ কোটি টাকা খরচ করেছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বৈধতা দিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা (নিজের মুখের স্বীকারোক্তি ভিডিও ফুটেজ আছে) আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ী নাহিদুজ্জামান নিশাদ। ২০২৪ সালের নভেম্বরের শেষার্ধে দলে যোগদান করেই দলের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করার জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এই আওয়ামী পন্থী ব্যবসায়ী।

তিনি যোগদান করার পর থেকেই দুই উপজেলা গ্রুপিং প্রকাশ রূপ নিয়েছে। সাঘাটা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির মাঝে ধরেছে ফাটল। ওই নেতার ইশারায় সম্পূর্ণ একটি সুস্থ ধারার দলকে রেষারশিয়ার কাদা সরাসরি রাজনীতিতে পরিণত করেছেন। নিজের গ্রুপিং এর লোকজনকে প্রতিদিন নেশা করার টাকা যোগান দিচ্ছেন। এতে করে বেপরোয়া হয়ে ওঠা ওই নেতাকর্মীরা নিজের দলের তাগিদের প্রতি খড়ক হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে উপজেলা ও ইউনিয়ন বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানান, আজকের এই পরিণতির জন্য ওই নেতাই দায়ী। এই গেল দেড় মাস আগেই জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ব্যানারে অন্য নেতার নাম থাকার কারণে ওই নেতা নাহিদুজ্জামান নিষেধ মঞ্চে বসেননি। তার গ্রুপের লোকজনকে নিয়ে তুলে উঠে চলে যান। 

এতে প্রোগ্রাম ভন্ডুল হয়ে পড়ে। উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেলিম আহমেদ তুলিপকে বারবার চেষ্টা করেও নিজের অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে যোগ করতে না পেরে এবং নিজের বলে নিতে না পেরে ব্যাপক টাকা খরচ করে মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করে সম্প্রতি তাকে বহিষ্কার করিয়া নেন। টাকার খেলায় যা ইচ্ছে তাই করছেন তিনি। উপজেলার বিএনপির আহবায়ক কমিটির কাউন্সিল নিয়েও শুরু হয়েছে ব্যাপক নাটকিয়তা ও কাদা মাখামাখি। উপজেলার আটটি ইউনিয়নের কাউন্সিলেকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে গ্রুপিং করাচ্ছেন। 

আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ হাসানের রিপন ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়ার অনুসারী প্রকাশ্য আওয়ামী লীগের সমর্থক ও পদধারি নেতাকর্মীদের বিএনপিতে ভিড়াচ্ছেন। উপজেলার সাঘাটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট এর সাথে সখ্যতা গড়া আওয়ামী লীগ কর্মী রেজাউল করিম রনিকে ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক পদে। এসব ইউনিয়নের পদগুলো নিজের বলাই বাগিয়ে নিতে নেতাকর্মীদের হুমকি দিচ্ছেন। 

উপজেলা পর্যায়ে ওই নেতার হয়ে কাজ করছেন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মহিন প্রধান লাবু, এনামুল হক শিল্পী, আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন। নিজের বলে না আসায় সাঘাটা উপজেলার জুমারবাড়ি ইউনিযন বিএনপির আহবায়ক আবু তাহের মন্ডল ও বুলবুল আহমেদকে গত ১২ জুন অব্যাহতি দেওয়া হয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ককে এক রকম জোর করে প্রেসার দিয়েই নিজ ইচ্ছা হাসিলের লক্ষ্যে এ কাজ করেন ওই নেতা। যা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব মোহাম্মদ আলী স্বীকার করেছেন। তাদের এই ঠুনকো অজুহাতে দুই নেতাকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারণ দর্শানো নোটিশ দেন জেলা বিএনপি। 

উপজেলা বিএনপির শূন্য থাকা সদস্য সচিবের পদ পূরণ করতে গত ১৮ জুন উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোশতাক আহমেদ মিলনকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যচিব নিযুক্ত করা হয়। ওই নেতার মনমতো না হয় মিলনকে তার দুইদিন পরেই কেন্দ্র থেকে অব্যাহতির ব্যবস্থা করেন। এমন ঘটনায় ওই ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব নিয়োগ দান করা গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক ডাক্তার মাইনুল হাসান সাদিক ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন্নবী টুটুল হতভম্ব হয়ে পড়ে। এ ধরণের অনেক ঘটনায় তর থাবায় দুই উপজেলায় এমপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন ধরণের মন্তব্য করলেও তাদেরকে শাসানো হচ্ছে। যে কারণে কেউই মুখ খুলছে না। 

৫ আগস্টের পর নাহিদুজ্জামান নিশাত দলে যোগদানের পর নানা সমালোচনা নেমে আসে দুই উপজেলায়। এই আসনের সাবেক এমপি ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, আওয়ামী লীগের দোসর বগুড়ার সাবেক এসপি আসাদুজ্জামান, বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি মমতাজুর রহমান মমতাজসহ একাধিক আওয়ামী লীগ নেতার সাথে প্রকাশ্য ছবি থাকায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে দুই উপজেলায়। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সব ছবি ভেসে বেড়িয়েছে। এক সময় দুইগ্রুপ জেলার মনোনয়ন প্রার্থীরা একই মঞ্চে একই সাথে সকল প্রোগ্রামের যোগ দিতেন। হাতে হাত ধরে দলীয় প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতেন। দুই উপজেলার নেতৃবৃন্দ এখন জানান, এসব এখন শুধুই স্মৃতি। একজন নেতার হস্তক্ষেপের সবকিছু এখন লন্ডভন্ড।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন