
প্রিন্ট: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৬:৩৯ পিএম
ছাত্রলীগের যুগ্মসম্পাদক এখন এনসিপির যুগ্মসমন্বয়কারী

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ২৮ জুন ২০২৫, ১১:০৬ এএম

ছবি - কুমারখালী পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আলী
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটিতে যুগ্মসমন্বয়কারী পদ পেয়েছেন আসাদুজ্জামান আলী নামে সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা। তিনি কুমারখালী পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ নিয়ে জেলায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
গত শনিবার (২১ জুন) এনসিপি কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ১২ সদস্যবিশিষ্ট সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দেন।
আসাদুজ্জামান আলী কুষ্টিয়ার কুমারখালী পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের এলোঙ্গি গ্রামের আবদুর সামাদ পাখির ছেলে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখার সদস্যসচিব পদও পেয়েছিলেন৷
অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পদ পাওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আসাদুজ্জামান আলী। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মামলা বাণিজ্য, শেলটার বাণিজ্য, ঘুষ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতি ও অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া তার বাবা পাখির বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনা-প্রতিবাদ শুরু করেন স্থানীয় ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া ও জনসাধারণের অনাস্থার কারণে আসাদুজ্জামান আলীর সদস্যপদ বাতিলসহ সব দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত ৩ মার্চ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান ও সদস্যসচিব মোস্তাফিজুর রহমান সই করা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানান, আসাদুজ্জামান আলী কুমারখালী পৌর শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্মসাধারণ সম্পাদক। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি পাওয়ার প্র্যাকটিস করতেন। প্রভাব খাটিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সময়ে বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিলেন। নিজের স্বার্থের জন্য তিনি বারবার ভোল পাল্টান। নানা অপকর্মের কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুষ্টিয়া জেলা শাখার আহ্বায়ক হাসিবুর রহমান বলেন, গত ২১ জুন কুষ্টিয়ায় চারটি উপজেলা শাখার সমন্বয় কমিটির অনুমোদন দেয় এনসিপি। এর মধ্যে কুমারখালীর কমিটিতে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী পদ পেয়েছেন। এটা খুবই দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া এবং জনসাধারণের অনাস্থার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমারখালী শাখা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসাদুজ্জামান আলী খান বলেন, আমি জীবনবাজি রেখে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছি। মৃত্যুর ভয় না করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজপথে ছিলাম ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছি। স্বৈরাচার সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে আমার। আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম, এখন এনসিপি করি। আন্দোলন শুরুর আগে আমি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। আমি এখন উপজেলা এনসিপি কমিটির যুগ্মসমন্বয়কারী৷
তিনি আরও বলেন, আমার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষের লোকজন বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে। আমি ও আমার বাবা কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত নই। হেয় করা ও ফাঁসানোর জন্য আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ তোলা হয়। প্রতিপক্ষের লোকজন আমার বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটিয়েছিল। আমি কোনো ধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত, এটা কেউ প্রমাণ করতে পারলে আমি কুষ্টিয়া কুমারখালী ছেড়ে চলে যাব৷