
প্রিন্ট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১২:২৯ পিএম
যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ০৫:২৫ পিএম

ছবি : যৌথবাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ
দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরে আসার পর অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে পুনরায় জড়িয়ে পড়লে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর নজরদারি শুরু করে।
রোজার ঈদের পরপরই কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর সোনার বাংলা রোডে একটি তিন রুমের বাসা ভাড়া নেন সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ। তিনতলা বাড়ির নিচতলায় তারা অবস্থান করছিলেন, যেখানে দোতলা ও তিনতলায় ছাত্ররা বাস করতেন। বাড়ির মালিক প্রয়াত বিএনপি নেতা মীর মহিউদ্দিনের পরিবার।
স্থানীয়রা জানান, তারা সাধারণ মানুষের মতো থাকছিলেন এবং কেউ চিনতে পারেননি যে তারা দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী। তবে, গত ৫ আগস্ট তারা দেশে ফেরার পর আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর খবর গোয়েন্দাদের হাতে আসে। এরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান চালায়।
মঙ্গলবার ভোরে সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ দল ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলে। অভিযান চলাকালে বাসার নিচতলা থেকে চারজনকে আটক করা হয়। তাদের একটি কালো হাইয়েস মাইক্রোবাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্র মতে, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ দীর্ঘদিন ভারতের মাটিতে আত্মগোপনে ছিলেন। সুব্রত বাইন প্রথমে কলকাতায় আশ্রয় নেন এবং পরে নেপালে পালিয়ে যান। ২০১২ সালে নেপালের একটি কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ কেটে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি ভারতে ফিরে আসেন। তবে, শেষ পর্যন্ত কলকাতায় পুলিশের হাতে ফের গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন জেলে ছিলেন।
সুব্রত বাইন ১৯৯৭ সালে ‘সেভেন স্টার’ গ্রুপ গঠন করেন, যার সদস্য ছিলেন তানভিরুল ইসলাম জয়, টোকাই সাগর, টিক্কা, সেলিম ও চঞ্চল। ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রকাশ করলে সেখানে তার নাম ছিল এক নম্বরে।
অন্যদিকে, মোল্লা মাসুদ মতিঝিল-গোপীবাগ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। তার বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০টির বেশি হত্যা মামলা, যার মধ্যে রয়েছে ট্রিপল মার্ডার, মুরগি মিলন হত্যাকাণ্ড, এবং চাঁদাবাজির একাধিক অভিযোগ। ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর তিনি ‘আবু রাসেল মো. মাসুদ’ নামে পরিচিত হন এবং কলকাতায় এক ভারতীয় নারীকে বিয়ে করে সেখানে বসবাস করছিলেন।
সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের দেশে ফেরার পর অপরাধ জগতের বিভিন্ন সদস্যদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ পুনরায় স্থাপিত হয়। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আবারও চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাদের ওপর নজরদারি শুরু করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, তাদের গ্রেপ্তারের ফলে ঢাকার অপরাধ জগতের বড় একটি চক্র ভেঙে যাবে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং এর আগে ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের নামে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছিল।
সরকার ও নিরাপত্তা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দেশ থেকে পালিয়ে থাকা এই অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।
এই ঘটনাটি এখন গোটা দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে, যেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, তারা রাজধানীকে অপরাধমুক্ত করতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।