
প্রিন্ট: ০১ জুলাই ২০২৫, ১২:৩২ এএম
জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম বুধবার সকালে মুক্তি পাচ্ছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ মে ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে খালাস পাওয়ার পর আগামীকাল বুধবার (২৮ মে) সকালে মুক্তি পাচ্ছেন। খালাসের রায়ের কাগজপত্র কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে এবং তা যাচাই-বাছাই শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আজহারুল ইসলামের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির। তিনি জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে তাকে আজ রাতেই নয়, বুধবার সকালে মুক্তি দেওয়া হবে।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে আজহারুল ইসলাম মুক্তি পাবেন। দলটির বিভিন্ন ইউনিট ইতিমধ্যেই এই উপলক্ষে তাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় মিডিয়া উইংয়ের প্রধান ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের জানান, “আমরা আমাদের নেতা মজলুম এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাবো।”
এর আগে মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ আজহারের আপিল গ্রহণ করে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় দেয়া মৃত্যুদণ্ডসহ অন্যান্য সাজা থেকে সম্পূর্ণ খালাস দেন। আদালত বলেন, তার বিরুদ্ধে অন্য কোনো মামলা না থাকলে তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এটিএম আজহারুল ইসলামকে রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ ছয়টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে। তার মধ্যে তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, একটি অভিযোগে ২৫ বছর এবং অন্য একটি অভিযোগে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
আদালতে আজহারের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক ও মোহাম্মদ শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষের হয়ে শুনানি পরিচালনা করেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। রায় ঘোষণার সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আজহারুল ইসলামের খালাস ও মুক্তি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে, এবং এ বিষয়টি ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করে। আপিল বিভাগের রায়ে দুই, তিন, চার (সংখ্যাগরিষ্ঠ মত), এবং ছয় নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়, আর পাঁচ নম্বর অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।
ওই দিন আসামিপক্ষে ছিলেন প্রয়াত জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। ২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। এরপর ২০২০ সালের ১৯ জুলাই এ টি এম আজহারুল ইসলাম আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন। ২৩ পৃষ্ঠার আবেদনে তিনি মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করেন।
পুনর্বিবেচনার শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তার আপিলের অনুমতি দেয়। এরপর তিনি আপিল করেন।