
প্রিন্ট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ১০:২০ পিএম
শুধু শাল নয়, স্থানীয়দের অংশগ্রহণেও ফিরছে মধুপুরের সবুজ বন: রিজওয়ানা হাসান

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ০৬:২৯ পিএম

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, মধুপুরের অবক্ষয়িত শালবন পুনরুদ্ধারে সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি বলেন, এ বছর ৭৫০ একর এবং আগামী তিন বছরে আরও ৬ হাজার ৬১০ একর এলাকায় শালবন রোপণ করা হবে।
টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুর জাতীয় উদ্যানের দোখলায় আন্তর্জাতিক জীববৈচিত্র্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা জানান, শালের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে সহযোগী বৃক্ষও রোপণ করা হচ্ছে। শালবনে শুধু শালগাছই থাকবে না—১০০টি গাছের মধ্যে ৭০টি হবে শাল এবং ৩০টি সহযোগী প্রজাতির গাছ। তবে কোনো বিদেশি গাছ রোপণ করা হবে না, বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, শালবনের সীমানা নির্ধারণের কাজ চলছে এবং ‘রাজাবাড়ী’ এলাকায় সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় জনগণের অধিকার রক্ষার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১২৯টি মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তবে বনজমি দখল ও বন বিভাগের কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা গুলো প্রত্যাহার করা হবে না। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এখানে কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। আমি বন বিভাগের কর্মীদের সে নির্দেশনা দিয়েছি।
উপদেষ্টা বলেন, এটা কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, এটা একটি ঘোষণা—বনবিনাশ রোধে বনবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং প্রথাগত বনবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
গারো জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তিনি সতর্কবার্তা দিয়ে বলেন, শত শত একর জমিতে আনারস বা কলা চাষ করতে পারবেন না। শালবন ধ্বংস করে সেখানে হরমোন ও পেস্টিসাইড দিয়ে চাষাবাদের সুযোগ দেওয়া হবে না।
বনভূমি বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বন বিভাগের প্লট কেউ পাবে না—না ধনী, না দরিদ্র। নদীভাঙা বা দরিদ্রদের জন্য বন্দোবস্ত হবে খাসজমিতে, বনভূমিতে নয়।
আলোচনার আগে স্থানীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে এক হাজার শালগাছের চারা রোপণের মাধ্যমে শালবন পুনঃপ্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু করেন উপদেষ্টা।
পরে তিনি রাজাবাড়ী এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মাধ্যমে মধুপুর শালবন পুনঃপ্রতিষ্ঠা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন এবং শালবনে ময়ূর ও পুকুরে কাইট্টা মাছ অবমুক্ত করেন।
সকালেই তিনি টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে বেলুন উড়িয়ে ভূমি মেলা ও পাঁচ লাখ বৃক্ষরোপণের কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী রেজা খান। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নাভিদ শফিউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরোজ জামান এবং মধুপুরের জয়েনশাহী আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি অজয় মৃ ও বর্তমান সভাপতি ইউজেন নকরেক।