
প্রিন্ট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৬:০১ পিএম
নাবিল গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি: ইসলামী ব্যাংকে ১৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ!

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মে ২০২৫, ০২:৪২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম (স্বপন) বর্তমানে ব্যাংকপাড়ার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বড় কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকা সত্ত্বেও, প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়াই তিনি বিপুল পরিমাণ ঋণ পাচ্ছেন। ইসলামী ব্যাংক থেকে ৮০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আগের ঋণের কিস্তি পরিশোধের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের দাবি, আমিনুল ইসলাম তার নিজ নামে থাকা ঋণগুলোর পরিশোধ নিয়মিত রাখলেও, ভুঁইফোঁড় কোম্পানির মাধ্যমে নেওয়া ঋণগুলোর দায় স্বীকার করছেন না। ইসলামী ব্যাংক থেকে সরকার পরিবর্তনের পর নতুন করে নাবিল গ্রুপ ৮০০ কোটি টাকার ঋণ পেয়েছে।
জালিয়াতির অভিনব কৌশল
নাবিল গ্রুপ ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে। আরও ৪ হাজার কোটি টাকার ঋণে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে, বিশেষ করে জামানত জালিয়াতির। সাধারণত জামানত জমা দিয়ে ঋণ নেওয়ার নিয়ম থাকলেও, এখানে ঋণ নেওয়ার পর জামানত সংগ্রহ করা হয়েছে। ঋণের টাকায় খোলা এফডিআরকেই জামানত হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।
ব্যাংকের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায়, ঋণ জালিয়াতির টাকায় গ্রুপটি দেশে এক হাজার একর জমি কিনেছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরিপন্থী। তিনটি ব্যাংক থেকে নেওয়া এসব ঋণের অর্থ অবৈধভাবে বিদেশে পাচারের অভিযোগও উঠেছে।
দুদক ও অন্যান্য সংস্থার তদন্ত
বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএফআইইউ, দুদক, এনবিআর ও সিআইডি নাবিল গ্রুপের আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। গত ২৪ মার্চ আদালত আমিনুল ইসলাম, তার স্ত্রী ইসরাত জাহান ও তাদের চার প্রতিষ্ঠানের ১৭৮ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছে।
নাবিল গ্রুপের ১৪ কর্মী ও সুবিধাভোগীর নামে খোলা ৯টি কোম্পানিকে ইসলামী ব্যাংক ৯ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। অথচ, এসব ব্যক্তি গ্রুপের কর্মী হিসেবে বেতন পান, যার কারণে ঋণগুলোকে বেনামি বলে মনে করা হচ্ছে।
নাবিল গ্রুপের ঋণ পরিশোধে অনিশ্চয়তা
ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহক হিসেবে নাবিল গ্রুপের মোট ঋণ ১৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা, যা আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে দেওয়া হয়েছে। তবে খেলাপি না হলেও, আদায়ের কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট করার উদ্যোগ নিয়েছে, যেখানে অনিয়মের গুরুত্ব অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা
নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলামকে জামায়াতে ইসলামীর এক সম্মেলনে দেখা যাওয়ার পর রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দলের কোনো পর্যায়ে কর্মী নন।
নাবিল গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। ব্যাংক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কীভাবে ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্ট মহল।