
প্রিন্ট: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৯:৩১ এএম
দেশজুড়ে আবুল খায়ের গ্রুপের দখলের সাম্রাজ্য

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে উঠেছে ভয়াবহ সব অভিযোগ—জমি দখল, দুর্নীতি, অনিয়ম ও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি। দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছায়াতলে থেকে দুর্নীতিকে পেশায় পরিণত করে প্রতিষ্ঠানটি এখন রীতিমতো ‘রাক্ষুসে’ রূপ ধারণ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গোটা দেশের পাহাড়, নদী, খাল-বিল, বনভূমি, এমনকি মসজিদ-মন্দিরও রেহাই পায়নি আবুল খায়ের গ্রুপের দখলদারিত্বের হাত থেকে। ‘শিল্পায়নের’ নামে গরিবের ভিটেমাটি কেড়ে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বড় বড় স্থাপনা। আবার এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে গোপনে বিদেশে অর্থ পাচারও করেছে প্রতিষ্ঠানটি, এমন অভিযোগ উঠেছে একাধিক সরকারি সংস্থার প্রতিবেদন ও ভুক্তভোগীদের বক্তব্যে।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী এলাকায় ১৯৫২ সালে বিড়ির ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করা আবুল খায়ের গ্রুপ বর্তমানে স্টিল, সিমেন্ট, সিরামিক, ঢেউটিন, দুধ, সিগারেটসহ নানান পণ্যে বিশাল ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তবে এসব ‘সফলতা’র পেছনে রয়েছে শর্টকাট পথ—দখল, প্রভাব খাটানো ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কৌশল।
মুন্সীগঞ্জের মুক্তারপুরে শাহ সিমেন্ট নামে প্রতিষ্ঠানটির মাত্র ২০ বিঘা জমি থাকলেও তারা প্রায় ৬০০ বিঘা জমি দখল করেছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং মাদামবিবির হাট এলাকায় দুটি খাল ভরাট করে নির্মাণ করেছে স্থাপনা। গাজীপুরের কালীগঞ্জে সরকারি খাসজমি, নদীর জমি, এমনকি মসজিদ-মন্দিরের জমিও দখল করেছে গ্রুপটি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বারবার প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং অভিযোগকারীদের হয়রানি, হুমকি ও মিথ্যা মামলায় জড়ানোর নজির রয়েছে। উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও কিছুদিন পর আবারও জমি দখল করে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেছে তারা।
পেট্রোবাংলার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রুপটি ঘুষ দিয়ে তিনটি গ্যাস সংযোগে দ্বিগুণ লোড নেয় এবং ১১ কোটি ৯০ লাখ টাকার গ্যাস বিল বাকি রেখেছে।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির কোনো শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও চট্টগ্রামের শীতলপুর ফ্যাক্টরির ইনচার্জ ইমরুল কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ইদানীং অনেকেই অভিযোগ করছে, কারণ তারা আমাদের কাছ থেকে সুবিধা নিতে চায়। যেসব অভিযোগ এসেছে, সেগুলো ভিত্তিহীন।’’
অন্যদিকে, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এখন জমি দখলসহ নানা অনিয়মে জড়িত আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে।
জনগণ, ভুক্তভোগী ও পরিবেশবাদীদের আহ্বান—অবিলম্বে আবুল খায়ের গ্রুপের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশের সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে।