
প্রিন্ট: ২৭ জুন ২০২৫, ০৪:১৭ পিএম
চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক অংশীদারিত্ব বাস্তবায়ন এখন অগ্রাধিকার পাবে : প্রধান উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০১ এএম

ছবি : সংগৃহীত
সম্প্রতি চীন সফরের অভিজ্ঞতা ও অর্জন মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে আরও গতিশীল করার কৌশলগত রূপরেখা তুলে ধরেছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রোববার (২০ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি জানান, চীনের সঙ্গে আলোচিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে যেসব উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করাই এখন আমাদের লক্ষ্য। আমরা চাই না যে আলোচনা পর্যায়েই থেমে থাকুক—এর বাস্তব প্রয়োগ দেখতে চাই।”
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনও তার বক্তব্যে বাংলাদেশের আগ্রহের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেন, “এগুলো আমাদের জন্যও অগ্রাধিকারের বিষয়। দুই থেকে তিন বছর চুক্তির অপেক্ষায় না থেকে দ্রুত বাস্তবায়ন শুরু করতে চাই।”
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অবকাঠামো, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে সমঝোতা হয়। বিশেষভাবে মোংলা ও আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন, চারটি নতুন চীনা জাহাজ কেনা, এবং স্বাস্থ্য খাতে নতুন হাসপাতাল নির্মাণ—এগুলো গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়।
বিনিয়োগ বোর্ড (বিডা) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানান, “অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে সেগুলো ডেভেলপারদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”
চীনা রাষ্ট্রদূত আরও জানান, জুনের মধ্যে বাংলাদেশে চারটি জাহাজ সরবরাহের বিষয়ে কাজ এগিয়ে চলেছে। পাশাপাশি, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী শিগগির বাংলাদেশ সফর করবেন এবং ১০০ সদস্যের বিনিয়োগ প্রতিনিধি দল নিয়ে আসবেন, যারা নতুন বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজবে।
বিডা একটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের পরিকল্পনা করছে, যেখানে চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে খাতভিত্তিক আলোচনা করা হবে।
স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে এক হাজার শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণে চীনের আগ্রহের কথা আবারও জানানো হয়। চট্টগ্রামে একটি বার্ন ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পও আলোচনায় উঠে আসে।
চীনের কুনমিং ও বাংলাদেশের চট্টগ্রামের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে বলে জানানো হয়। এ ছাড়া, বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসা ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে চীন উদ্যোগ নিচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত বিনিময় বাড়াতে বাংলাদেশে একটি চীনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন, যাতে তরুণরা চীনা সংস্কৃতি সম্পর্কে আরও গভীরভাবে জানতে পারে।
তিস্তা নদীসহ সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনায় যৌথভাবে ৫০ বছরের একটি দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়। পাশাপাশি পাট রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনা এবং লোকোমোটিভ খাতে চীনা বিনিয়োগ প্রসারের ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা। চট্টগ্রাম ও সৈয়দপুরে রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের পরিকল্পনাও আলোচনায় আসে।
বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিউর রহমান, বিডা চেয়ারম্যান আশিক মাহমুদ বিন হারুন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ তৈয়ব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন।