
প্রিন্ট: ২৪ জুন ২০২৫, ০২:৫৪ এএম
আ.লীগ নিষিদ্ধ ও জাতীয় সরকার গঠনের দাবিতে জুলাই মঞ্চের শহীদি মার্চ

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৫ এএম

ছবি : সংগৃহীত
গণহত্যার বিচার দাবি এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছে জুলাই মঞ্চ। শনিবার (১৯ এপ্রিল) সংগঠনের ৬২তম দিনে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে ৫ম শহীদি মার্চ পালন করে তারা। শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে সংগঠনের নেতারা একগুচ্ছ দাবি তুলে ধরেন।
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসেন বলেন, "যেসব বাহিনীর সদস্যরা গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত, তারা এখনো সরকারি চাকরিতে বহাল। অনেককেই এখনো গ্রেপ্তার করা হয়নি, মামলার কার্যক্রমও ঝিমিয়ে পড়েছে। শহীদ পরিবারগুলো ন্যায়বিচার নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এই বিচার যেন অন্তর্বর্তী সরকার শেষ করার আগেই সম্পন্ন হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অগ্রগতি এখনো আশানুরূপ নয়। আমরা এও দেখছি, কিছু উপদেষ্টা ও প্রশাসনিক ব্যক্তি এই বিচার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে এবং ড. ইউনূসের সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।"
তিনি আরও বলেন, "ফ্যাসিবাদের দেশি-বিদেশি দোসররা এর পেছনে রয়েছে। জাতীয় সরকার গঠন ছাড়া এই চেতনার পূর্ণ প্রতিফলন সম্ভব নয়। তাই আমরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার চাই।"
আরেক প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, "'২৪-এর বিপ্লব ছিল দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে গণজাগরণ। অথচ আজও সেই দুর্বৃত্তরাই রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সক্রিয়। সুষ্ঠু বিচার এবং প্রশাসনিক সংস্কার ছাড়াই যদি নির্বাচন দেওয়া হয়, তবে তা শহীদদের সঙ্গে বড় ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা হবে।"
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “যদি অন্তর্বর্তী সরকার মনে করে এসব দায়িত্ব পালন তাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তবে অবিলম্বে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। এই সরকারই সংস্কার ও বিচার নিশ্চিত করে নির্বাচন আয়োজন করবে।”
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি অর্ণব হুসাইন বলেন, “৯ এপ্রিলের ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশনা বাতিল না করলে আমরা কমিশনার কার্যালয় ঘেরাও করবো। এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জুলাই গণহত্যার আসামিদের গ্রেপ্তারের আগে কমিশনার অফিসে অবহিত করতে হবে। এটি কার্যত ফ্যাসিবাদের পক্ষ নেওয়া।” তিনি অভিযোগ করেন, এই নির্দেশনার পরপরই আওয়ামী লীগ যাত্রাবাড়ীতে ঝটিকা মিছিল করে, যা তাদের ‘কিলিং মিশন’ আবার চালু করার ইঙ্গিত দেয়।
শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম বলেন, “আমার সন্তানের হত্যাকারীরা এখনো ধরা পড়েনি। আমরা বিচার চাই—আর কোনো বিলম্ব নয়। পুলিশ লীগ ও আওয়ামী লীগের যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনুন।”
শহীদ শাকিলের মা হেলেনা বেগম বলেন, “ড. ইউনূস সরকার না থাকলে আমরা বিচার থেকে বঞ্চিত হবো। এই সরকারের মেয়াদে আমরা আমাদের সন্তানের হত্যার বিচার দেখতে চাই।”
মার্চ শেষে জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি দল যাত্রাবাড়ী থানার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়—“বাংলাদেশে প্রতিটি শহীদ পরিবারের কাছে পুলিশের প্রতিনিধি দল সরাসরি গিয়ে ক্ষমা চাইবে এবং শহীদদের কবর জিয়ারত করবে।”
তাসমিয়া রহমানের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন শহীদ মেহেদী হাসানের মা পারভীন বেগম, আহতদের পরিবারের সদস্য, হাসিব বিল্লাহ, মো. ইমরান, খোকন মিয়া ও মো. আনিসুল ইসলাম।
জুলাই মঞ্চের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে জানানো হয়—গণহত্যার বিচার, আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ এবং প্রশাসনিক সংস্কার না হলে কোনো নির্বাচন মেনে নেওয়া হবে না।