
প্রিন্ট: ২৭ জুন ২০২৫, ০৪:১৬ এএম
শুকিয়ে যাচ্ছে দেশের ৮১টি নদী, ভয়াবহ পরিবেশ সংকটের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৪২ পিএম

সাইদুলি নদী। ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের বহু নদী এখন চরম পরিবেশগত সংকটের মুখে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দেশের ৮১টি নদী শুষ্ক মৌসুমে প্রায় পুরোপুরি শুকিয়ে যায়। ‘বাংলাদেশের শুকিয়ে যাওয়া নদী’ শিরোনামে এ গবেষণা পরিচালনা করেছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি), যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের নদী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে।
গবেষণা বলছে, এক সময় যেসব নদী কৃষি, জীববৈচিত্র্য এবং স্থানীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি ছিল, আজ সেগুলোর অনেকটাই পানিশূন্য অথবা পলিতে ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের নদীগুলোর অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। দূষণ, অতিরিক্ত পলি জমা ও দ্রুত নগরায়নের কারণে এসব এলাকায় প্রাকৃতিক জলপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ অবস্থার প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদন, জলজ প্রাণী ও মানুষের জীবিকার ওপর। আরডিআরসি জানিয়েছে, খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ২৫টি নদী শুকিয়ে গেছে, রাজশাহীতে ২০টি, রংপুরে ১৫টি, চট্টগ্রামে ৬টি, ময়মনসিংহে ৫টি, ঢাকায় ৪টি এবং বরিশাল ও সিলেটে ৩টি করে নদী বিপর্যয়ের মুখে।
শুকিয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে আলয়, আত্রাই, বেতনা, ভৈরব, চিত্রা, ধরলা, গড়াই, কপোতাক্ষ, কুশিয়ারা, মহানন্দা, মাথাভাঙ্গা, মুহুরী, নবগঙ্গা, পদ্মা ও যমুনার কিছু শাখা নদীসহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জলপ্রবাহ।
গবেষণায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা-মেঘনা (বিজিএম) অববাহিকাতেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। উজানে বাঁধ নির্মাণ ও পানির গতিপথ নিয়ন্ত্রণের কারণে এসব নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে, যার ফলে কোটি মানুষের জীবনধারা ও প্রাকৃতিক পরিবেশে নেমে এসেছে বিপর্যয়। জলস্তরের অপ্রত্যাশিত ওঠানামা নদী-নির্ভর মানুষ ও প্রাণীকূলের জীবনকে করেছে দুর্বিষহ।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নদী দূষণ কমানো, নদীভাঙন রোধ এবং পানির প্রাকৃতিক প্রতিবেশ পুনরুদ্ধারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে আরডিআরসি। তবে শুধু জাতীয় উদ্যোগ নয়, গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ২৪,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী, খাল ও স্রোতধারা রয়েছে। বর্ষাকালে এর মধ্যে প্রায় ৬,০০০ কিলোমিটার নৌচলাচলের উপযোগী থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩,৮০০ কিলোমিটারে।
গবেষকরা মনে করেন, নদীগুলো রক্ষায় এখনই উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পানি, প্রাণ ও পরিবেশ—সবকিছুর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।