
প্রিন্ট: ২৬ জুন ২০২৫, ০৩:৫৭ পিএম
৯ বছরেও বিচার হয়নি তনু হত্যার, তদন্তে নেই অগ্রগতি

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ০৫:০৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ৯ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো আসামি শনাক্ত হয়নি। মামলার কোনো অগ্রগতি নেই, এমনকি এখন পর্যন্ত চার্জশিটও দেওয়া হয়নি।
আজ ২০ মার্চ, বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের নবম বার্ষিকী। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও বিচার না পাওয়ায় হতাশ তনুর পরিবার। তার বাবা ইয়ার হোসেন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ন্যায়বিচার চেয়েছেন।
তনুর বাবা ও মামলার বাদী ইয়ার হোসেন বলেন, "এতদিন আওয়ামী লীগ সরকার ছিল, তাই বিচার হয়নি। তারা চায়নি এই মামলার বিচার হোক। এখন আমরা ড. ইউনূস সরকারের কাছে বিচার চাই।"
তিনি আরও বলেন, “নয় বছর ধরে বিচারের অপেক্ষায় আছি। আল্লাহ যদি বিচার করেন! এখন নতুন সরকার দেখি কী করে।”
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেন, "নয় বছর ধরে যারা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। ওরা মামলাটাকে নষ্ট করে দিয়েছে। এত বছর লাগছে কেন?"
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, "যখন মেয়েটা বেঁচে ছিল, তখন আলোতে ছিলাম। এখন নয় বছর ধরে অন্ধকারে আছি।"
২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লার ময়নামতি সেনানিবাসের পাওয়ার হাউসের কাছে কালভার্টের পাশের ঝোপ থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন ২১ মার্চ তনুর বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এরপর থেকে একাধিকবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হলেও মামলার কোনো সমাধান হয়নি।
১. প্রথম তদন্ত – ২১ মার্চ ২০১৬, এসআই সাইফুল ইসলাম (কোতোয়ালি মডেল থানা)
2. দ্বিতীয় তদন্ত – ২৫ মার্চ ২০১৬, ওসি মনজুর আলম (ডিবি, কুমিল্লা)
3. তৃতীয় তদন্ত – ১ এপ্রিল ২০১৬, পরিদর্শক গাজী মোহাম্মদ ইব্রাহীম (সিআইডি, কুমিল্লা)
4. চতুর্থ তদন্ত – ২৪ আগস্ট ২০১৬, সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন আহম্মদ (সিআইডি, নোয়াখালী-ফেনী)
5. পঞ্চম তদন্ত – ২১ অক্টোবর ২০২০, পরিদর্শক মজিবুর রহমান (পিবিআই, ঢাকা)
6. ষষ্ঠ তদন্ত – ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম (পিবিআই, ঢাকা)
বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, "আমি ঈদের আগে কুমিল্লায় যাব। এই মামলার তদন্ত হুট করে করা যায় না। কিছু প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই আমাদের কাজ করতে হয়।"
তবে তনুর পরিবারের অভিযোগ, তদন্ত কর্মকর্তারা তাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না। এ বিষয়ে তরিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা তদন্ত করছি, সময় হলে দেখা করব।”
"এই হত্যাকাণ্ডের ক্লু একদিন বের হবেই"
কুমিল্লার সংস্কৃতিকর্মী খায়রুল আনাম রায়হান বলেন, "তনু হত্যাকাণ্ড সারাদেশের মানুষের হৃদয়ে দাগ কেটেছে। কেউ চাইলে মামলাটি ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারে, কিন্তু চিরকাল নয়। ধর্ষণের পর একটি মেয়েকে হত্যা করা হলো, এরপর তার লাশ পাওয়া গেল নিরাপত্তা এলাকায়! এই হত্যাকাণ্ড যারা ধামাচাপা দিচ্ছে, তাদের বিবেককে প্রশ্ন করা উচিত।"
তনুর নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আগামীকাল শুক্রবার (২১ মার্চ) বাদ জুমা তার গ্রামের বাড়ি মুরাদনগরের মির্জাপুর গ্রামে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। কুমিল্লায় ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারও কর্মসূচি পালন করবে।
৯ বছরেও বিচারহীনতায় হতাশ তনুর পরিবার ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা এখন নতুন সরকারের দিকে তাকিয়ে আছেন, এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার পাবার আশায়।