Logo
Logo
×

জাতীয়

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্ভোগ বাড়ছে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৪, ১০:৩২ এএম

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, দুর্ভোগ বাড়ছে

কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও জামালপুরে নদ-নদীর পানি কমে গেলেও দুর্ভোগ বাড়ছে। নদীর পানি কমলেও প্লাবিত এলাকার পানি ধীরগতিতে নামছে। ছবি : সংগৃহীত

তিস্তা নদীর পানি বেড়ে আবারও রংপুরের নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপচরগুলো প্লাবিত হয়েছে। এদিকে কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে পানি কমলেও বাড়ছে দুর্গত অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ। বন্যাদুর্গত অঞ্চলের প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদকদের পাঠানো খবরে এসব তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আগামী এক সপ্তাহের পূর্বাভাসেও বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল হবে বলে জানানো হয়েছে। 

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল শনিবার একটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের ১৫টি জেলার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত। বন্যার্ত মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি সহযোগিতা করছেন আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৩ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তর মধ্যাঞ্চলে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, অরুণাচলে মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টি হতে পারে। এ সময় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর কাছাকাছি নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি লাভ করতে পারে। তবে ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি বেড়ে কুড়িগ্রামের কিছু নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়তে পারে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে। তবে তা বিপদসীমার ওপরে যাওয়ার আশঙ্কা কম। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মেঘনা, সুরমা, কুশিয়ারা নদীর পানি কমে সিলেট, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল বন্যামুক্ত হতে পারে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানায়, উজানের পাহাড়ি ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি আবারও বাড়ছে। এতে করে গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো আবারও প্লাবিত হয়েছে। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। সকাল ৬টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে করে গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লহ্মীটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নতুন করে প্লাবিত এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষজন। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ঘরবাড়ি নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে চর ও দ্বীপচরের বাসিন্দারা। 

বন্যার পানি কমছে, বাড়ছে দুর্ভোগ 

কুড়িগ্রামের ১৬ নদ-নদীর পানি দুদিন ধরে কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে জেলার ৯ উপজেলার ৫৫ ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি আর গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ত্রাণসহায়তা কার্যক্রম চলমান থাকলে গো-খাদ্য সংকট নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বানভাসিরা।

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে জেলার ৯ উপজেলার দুই লাখ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তাঘাট তলিয়ে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কয়েক দিনের বন্যায় নাগেশ্বরী উপজেলার দুটি বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। চর, দ্বীপ ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের ঘরে চাল-ডাল থাকার পরও রান্না করে খেতে পারছেন না। অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবারের লোকজন নিয়ে উঁচু স্থানে অবস্থান করছেন। উপায় না পেয়ে অনেকের নৌকায় রাত কাটাতে হচ্ছে। এমন দুর্ভোগে সরকারি-বেসরকারিভাবে সহযোগিতার আশা করছেন।

সদর উপজেলার রলাকাটা গ্রামের আখের আলী বলেন, টানা ১০ দিন ধরে ঘরে-বাইরে পানি। মাচার ওপর ছোট বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। কাজ কামাই নাই, খাওয়ার কষ্ট, থাকার কষ্ট। কী করি কোথায় যাই? 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, জেলার বন্যাকবলিতদের জন্য গত শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ৫৪২ মেট্রিক টন চাল, ৩২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও ২৩ হাজার ১২০ প্যাকেট শুকনো খাবার ৯ উপজেলায় বিতরণ চলমান।

সুনামগঞ্জে নদীর পানি কমলেও লোকালয়ে বাড়ছে

গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে তৃতীয় দফায় সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে তা বিপদসীমার নিচেও চলে এসেছে। তবে নদীর পানি কমলেও বাড়ছে লোকালয়ের। বিশেষ করে হাওরপারের নিচু এলাকার সড়ক ও কিছু বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

মাটিয়ান হাওর পারের সূর্য্যেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বজনা পাল। হাওরের পানি বাড়লে তার মনের আতঙ্ক বাড়ে। গত ১৬ জুনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ঘরের ভেতর পানি ওঠে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও ৩০ জুন থেকে আবারও ঘরে পানি প্রবেশ করে। এখন তৃতীয় দফা হাওরের পানি তার বসতঘরে প্রবেশ করেছে। ঘরজুড়ে কাদামাটি হলেও মাচার ওপর পরিবার নিয়ে বাস করছেন তিনি। বজনা পাল বললেন, পানি আরও বাড়ছে। এক মাস ধরে ঘরের ভেতর চাঙ্গ (মাচা) বানিয়ে আছি। মেঝে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। মেরামত করার সামর্থ্য নেই।

শুধু বজনা পাল নয়, এলাকার সড়কের পাশে নিচু জায়গার বাসিন্দাদের ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করেছে। এক মাসের ভেতর তিনবার এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে তাদের। নদীর পানি দ্রুত কমলেও এসব এলাকার পানি ধীরগতিতে কমছে। চিকসা গ্রামের বাসিন্দা কোকিলা বেগম বলেন, বাড়ির উঠানে পানি উঠেছে। বাড়ির পেছনের ছুলা ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। এখনও পর্যন্ত কেউ এসে খোঁজখবরও নেয়নি। 

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এই বৃষ্টিপাতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়াও নদীর পানি আরও কমে যাবে।

জামালপুরে কমছে যমুনার পানি

জামালপুরে কমছে যমুনা নদীর পানি। গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদঘাটে বিপদসীমার ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছিল। বন্যার পানিতে এখনও ডুবে আছে বেশিরভাগ এলাকার রাস্তাঘাট ও মানুষের বাড়িঘর। টানা এক সপ্তাহ ধরে পানি জমে থাকায় দুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ রয়েই গেছে। 

গত ৩ জুলাই থেকে জামালপুরে যমুনার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। এতে প্লাবিত হয় জেলার ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ন জনপদ। ভেঙে যায় গ্রামীণ জনপদের কাঁচা-পাকা রাস্তা ও ব্রিজ-কালভার্ট। পানির কারণে বন্ধ হয়ে যায় দুর্গত এলাকার ৩৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২০টি কমিউনিটি ক্লিনিক, পানিতে তলিয়ে যায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, দুর্গত এলাকায় পানি জমে থাকার কারণে মোট ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও নিরূপণ করা যায়নি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা জানান, এবারের বন্যায় জেলার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে আখ ও পাট ছাড়া অন্যান্য ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। 

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, আজ রবিবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা, বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় ও বরিশাল বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন