BETA VERSION বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
Logo
ইউনিকোড কনভার্টার
Logo
  • হোম
  • সর্বশেষ
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • সারাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • চাকরি
  • মিডিয়া

সব বিভাগ ভিডিও আর্কাইভ ইউনিকোড কনভার্টার
Logo

প্রিন্ট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:৫৯ এএম

Swapno

জাতীয়

কোটা বাতিলের দাবি

অনড় আন্দোলনকারীরা, সরকারও হার্ডলাইনে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ১০:১৪ এএম

অনড় আন্দোলনকারীরা, সরকারও হার্ডলাইনে

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাজধানীর শাহবাগে অবস্থান নেয় কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বিকালে। ছবি : সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক মাসের স্থিতাবস্থার আদেশ দেওয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনড় রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবারও রাজধানীসহ সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন তারা। আজ শুক্রবার বিকাল সাড়ে চারটায় তারা সারা দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে আবারও বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। 

অন্যদিকে গত বুধবার আদালতের আদেশের পর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আদালতের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে তাদের উদ্দেশে। বিভিন্ন মহলের আহ্বানের পরও শিক্ষার্থীদের রাজপথে অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না সরকারের দায়িত্বশীল মহল। গত ১ জুলাই থেকে চলা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে পুলিশ বাহিনী ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করলেও গতকাল তাদের কঠোর অবস্থান নিতে দেখা গেছে। শুরু থেকে বাধাহীনভাবে আন্দোলন চালিয়ে এলেও গতকাল শিক্ষার্থীরা কুমিল্লা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশি প্রতিবন্ধকতা ও সহিংসতার মুখে পড়েন। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। 

এ ছাড়া আন্দোলন শুরু হওয়ার পর গত কয়েক দিন নমনীয় স্বরে কথা বললেও গতকাল থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অনড় অবস্থানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে সুশীল সমাজের অনেকেও। তারা বলছেন, আন্দোলনকারীরা জনজীবনকে জিম্মি করে আইনি পন্থায় না গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছেন। তারা একে ‘অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি’ বলে আখ্যায়িত করছেন। কেউ কেউ আন্দোলনকে ‘সীমা অতিক্রম’ হিসেবে অবহিত করেছেন। এই আন্দোলনের পেছনে অন্য কারও ইন্ধন রয়েছে, এমন ‘আশঙ্কা’ও প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ডিএমপি জানিয়েছে, আদালতের এই আদেশের পর এখন কেউ রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবে।

যা বলছেন তিন দায়িত্বশীল মন্ত্রী

গত বুধবার আদালতের দেওয়া রায়ের পর কোটাব্যবস্থার চলমান আন্দোলন নিয়ে এই দিন সরকারের তিনজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা লক্ষ করছি, বিষয়টি নিয়ে যখন বিজ্ঞ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, তার প্রতি কোনোরকম সম্মান প্রদর্শন না করে তথাকথিত বাংলা ব্লকেডের কর্মসূচি দিয়ে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা জনজীবনকে জিম্মি করে আইনি পন্থায় না গিয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের বিরুদ্ধে শক্তি প্রদর্শন করছে, যা অনভিপ্রেত ও সম্পূর্ণ বেআইনি। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পুরোপুরি সমাপ্তি না হওয়া পর্যন্ত সব পক্ষকে ধৈর্যধারণ করতে হবে। তারুণ্যের শক্তি ও আবেগকে পুঁজি করে কোনো অশুভ মহল যদি দেশে অরাজক পরিস্থিতি ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যারা কোটা আন্দোলনকে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ দিতে চায়, তাদের খায়েশ পূরণ হতে দেব না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, ‘অনেকে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে।’ শিক্ষার্থীরা যেন ভুল পথে না এগোয়, সে আহ্বান রেখে তিনি বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস (সীমা অতিক্রম) করে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ থেকে সম্প্রতি কোটাব্যবস্থা নিয়ে একটি নির্দেশনা এসেছে। ছাত্ররা মনে করেছেন এটি ঠিক হয়নি, তাই তারা রাস্তায় নেমেছেন। সরকার তাদের (আন্দোলনকারীদের) কথা শুনবে। কিন্তু শোনার একটা সীমা থাকে। তারা সেই সীমা পার করে ফেলেছেন।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, ‘রায় যেখানে নেই, আন্দোলন কেন? এরপর আর রাস্তায় থাকার প্রয়োজন নেই। তারা আদালতে এসে কিছু বলতে চাইলে বলতে পারেন। এখন আর তাদের রাস্তায় অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’ শিক্ষার্থীরা রাস্তা থেকে না সরলে পুলিশ কী ব্যবস্থা নেবে, এ প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা কি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাবেন? পুলিশ কখন অ্যাকশনে যায়? যখন দেখে অগ্নিসংযোগ হচ্ছে, জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, অনৈতিকভাবে কেউ পরিস্থিতি তৈরি করছে। তখন পুলিশ অ্যাকশনে যাবে।’

একই বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এখানে এখন আদালতের আদেশের বাইরে নির্বাহী বিভাগের করণীয় কিছু নেই। যেটা যেখানে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত, সেটা সেখানে নিষ্পত্তি হতে হবে। আদালতে না গিয়ে রাস্তায় থেকে এটা নিষ্পত্তি হবে না।’ চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ‘ষড়যন্ত্রের গন্ধ’ পাওয়া যাচ্ছে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘উচ্চ আদালতের আদেশ না মেনে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে কারও ইন্ধনে তারা কাজ করছে কি না, সে অভিযোগ কিন্তু থাকছে।’

রাস্তা বন্ধ করলে ব্যবস্থা : ডিএমপি 

ডিএমপি জানিয়েছে, আদালতের আদেশের পর এখন কেউ রাস্তা বন্ধ করে মানুষের দুর্ভোগ সৃষ্টি করলে পুলিশ প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেবে। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) (অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) ড. খ. মহিদ উদ্দিন এ কথা জানান।

মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘আজ থেকে শিক্ষার্থীদের আর জনদুর্ভোগ করার কোনো অবকাশ আছে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশ মনে করে না। যারা আন্দোলন করছেন তাদের প্রতি পুলিশের অবশ্যই ভালোবাসা, সহমর্মিতা আছে। কিন্তু সেই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, দেশের প্রচলিত আইন ও সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য।’

রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চলছে : ছাত্রলীগ

এদিকে কোটা আন্দোলন শুরুর পর থেকে অনেকটা নীরব থাকলেও গতকাল বৃহস্পতিবার নীরবতা ভেঙে কথা বলেছেন ছাত্রলীগের নেতারা। কোটাপদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক রূপ’ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে মনে অভিযোগ করেন সংগঠনের নেতারা। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অবিলম্বে ক্লাস-পরীক্ষায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ কোনো বাধা দেবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা তাদের আন্দোলনকে স্বাগত জানিয়েছি। তবে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থী সমাজকে জিম্মি করে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করলে ছাত্রলীগ তা রুখে দেবে।

শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ ইউজিসির

আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। গতকাল বৃহস্পতিবার ইউজিসি সচিব ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘সকল প্রতিবাদকারী কোমলমতী ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো। দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য/প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ তাদের ছাত্র-ছাত্রীদের স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন মর্মে এই আদালত আশা করেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারবেন। আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।’

পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগে অবরোধ

গতকাল পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভেঙে শাহবাগ অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। বিকাল ৫টার দিকে শাহবাগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল গেটের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন তারা। পরে শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় পর্যন্ত সড়ক অবরুদ্ধ রেখে রাত সাড়ে ৮টায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে রাস্তা ছাড়েন তারা। দুপুরের পর থেকে শাহবাগ এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করলেও বড় কোনো অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষে দুই গণমাধ্যম কর্মী আহত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  

এর আগে বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে সংগঠিত হন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা শাহবাগে এসে অবরোধ করেন। চানখাঁরপুল মোড় ও ঢাকা মেডিকেল মোড় অবরোধ করেন ঢাবির শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে শাহবাগের এই অবরোধে যোগ দেন। বিকাল ৪টায় তারা প্রধান ফটকের তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে রওনা হন। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও গুলিস্তানে পুলিশ বাধা দিলেও তারা তা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে যান। তিতুমীর কলেজ, তেজগাঁও কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ আশপাশের নানা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার্থীরাও মিছিলে অংশ নেন। ফলে এই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ভয়াবহ দুর্ভোগে পড়তে হয় অফিস ফেরতসহ গন্তব্যে যাত্রা করা সাধারণ মানুষদের। 

তবে পুলিশের বাধার মুখে শাহবাগ আসতে পারেননি ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এরপর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেন তারা। বিকাল ৪টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা কলেজের প্রধান ফটক থেকে শাহবাগে যোগ দেওয়ার জন্য মিছিল বের করেন ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত মোড়ে এ মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ।  পুলিশের বাধায় এগোতে না পেরে সায়েন্সল্যাব মোড় ও নীলক্ষেত মোড় অবরুদ্ধ করে রাখেন তারা।

শেকৃবির শিক্ষার্থীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আহত ৮

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ৮ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষার্থীদের মধ্য ৩ শিক্ষার্থী সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। বিকালে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ করলে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশি বাধা অতিক্রম করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংলগ্ন মিরপুর-ফার্মগেট সড়কে অবস্থান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

কুমিল্লায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ তিন সাংবাদিক আহত

পুলিশের হামলাকে উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোড অবরোধ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বেলা ৩টায় অবরোধে যাওয়ার সময় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের রাস্তায় তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে দুই দফায় লাঠিচার্জ এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। হামলায় আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীসহ তিন সাংবাদিক। পরে সাড়ে ৪টার দিকে মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। তাদের বিক্ষোভের মুখে পিছু হটে পুলিশ। 

কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। আমরা তাদের প্রতিপক্ষ নই। কেউ যদি দেশের কোনো ব্যস্ততম রাস্তা বেআইনিভাবে আটকে রাখে, আমাদের দায়িত্ব সেটিকে ক্লিন রাখা। আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি।’

চট্টগ্রামে পুলিশের হামলায় আহত ২০

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও অধিভুক্ত কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দফায় দফায় পুলিশের হামলায় আন্দোলনের সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তালহা মাহমুদ রাফিসহ অন্তত বিশ জন আহত হয়েছেন। বিকালে মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা নগরীর ২ নম্বর গেটে পৌঁছলে অতর্কিতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় রাফিসহ ১২ জন আহত হয়। এর আগে চট্টগ্রামের বটতলী রেল স্টেশন অবরোধ করতে দুপুর আড়াইটায় শিক্ষার্থীরা রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছলেও তারা প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে পারেননি। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর পলোগ্রাউন্ড মাঠের রাস্তা হয়ে মিছিল করে টাইগার পাসের কাছাকাছি আসেন। সেখানে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সামনে ও পেছন থেকে অবরোধ করে রাখে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি হয় শিক্ষার্থীদের। এতে ছাত্রীসহ ৮ জন আহত হন।‌ পরে শিক্ষার্থীরা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে টাইগার পাস-ওয়াসা-জিইসি মোড় হয়ে দুই নম্বর গেট পৌঁছেন।

সারা দেশেও পুলিশের মুখোমুখি শিক্ষার্থীরা

পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বাধা উপেক্ষা করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবরোধ করেন। তারা বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করতে এসে দেখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে তালা দেওয়া হয়েছে। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে মহাসড়কে অবস্থান নেন। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা সাড়ে ৩টায় ঘণ্টাখানেক সড়কটি নিজেদের দখলে রাখেন তারা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। 

পাবনা শহরের পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন পাবনা সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে এক ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে তারা প্রশাসন-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুরোধে ক্যাম্পাসে ফিরে যান। 

পলিশের অনুরোধ উপেক্ষা করে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বেলা সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন তারা।

পুলিশের লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরা। বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে মিছিল বের করে মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন তারা। এরপর সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করতে গেলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পুলিশ লাঠিচার্জও করে। কিন্তু বাধা ও লাঠিচার্জ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। 

আন্দোলনে বাধা ছাত্রলীগের

কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়টির বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের পর ওই ছাত্রকে হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তার নাম মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। 

অন্যদিকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে রয়েছেনÑ রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান (বাবু), সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা। 

এছাড়া রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও (বেরোবি) শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে আন্দোলন পণ্ড করে দেয় ছাত্রলীগ। 

নতুন কর্মসূচি

কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিক সমাধানের লক্ষ্যে এক দফা দাবিসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং বাধার ঘটনার বিচারের দাবিতে আজ শুক্রবার বিকাল ৪টা দিকে সারা দেশের সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ঘোষণা করেছেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল রাত ৯টার দিকে আন্দোলনের সমন্বয়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমরা সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাব, নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আমাদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন।’ 

তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের আংশিক রায়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছে। হাইকোর্টের আংশিক রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা সংস্কার করতে পারে। এ বিষয়টিই আজ স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু শেকৃবিতে কেন লাঠিচার্জ করা হলো? শাবিপ্রবিতে হামলা করা হয়েছে, চবিতে ছাত্রীদের ওপর নারী পুলিশ হামলা করেছে, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা হয়েছে, রাবিতে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। মাভাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। যারা হামলা করেছে, তারা অতি উৎসাহী। হামলাকারী পুলিশদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।’ 

কোটাবিরোধী আন্দোলন সরকার শিক্ষার্থী আন্দোলন সরকারি চাকরি

এ সম্পর্কিত আরো খবর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সব খবর

সব খবর

আরো পড়ুন

Logo

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: jugerchinta24@gmail.com

আমাদের কথা যোগাযোগ শর্তাবলি ও নীতিমালা গোপনীয়তা নীতি বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা

অনুসরণ করুন

২০২৫ যুগের চিন্তা ২৪ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

ঠিকানা: ২১/বি (৫ম তলা), গার্ডেন রোড, পশ্চিম তেজতুরীবাজার, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ | যোগাযোগ: +৮৮০১৩৩৯৪০৯৮৩৯, +৮৮০১৩৩৯৪০৯৮৪০ | ই-মেইল: jugerchinta24@gmail.com