ট্রাম্পকে নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:০৭ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালালেও আন্তর্জাতিক সমর্থনের কারণে তারা ব্যাহত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, "সারা বিশ্বজুড়ে আমাদের ব্যাপক সমর্থন তৈরি হয়েছে, যার ফলে প্রতিপক্ষ সুবিধা করতে পারছে না। তারা বিভিন্ন গল্প ছড়াচ্ছে, কিন্তু টিকিয়ে রাখতে পারছে না। এমনকি ট্রাম্পকে নিয়ে অপপ্রচার চালানোর চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।"
শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, "বিশ্বের ছোট-বড়, ধনী-গরিব সব রাষ্ট্রই আমাদের সমর্থন দিয়েছে, কেউ দ্বিধা প্রকাশ করেনি। আন্তর্জাতিক মহল আমাদের সহযোগিতা করতে চায়, সংস্কারের ক্ষেত্রেও তারা পাশে থাকবে। তারা আমাদের পরিকল্পনার কথা শুনে বলে, 'তোমরা এগিয়ে যাও, আমরা আছি।'"
তিনি আরও বলেন, "আমাদের দুটি শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে—একটি অভ্যন্তরীণ, অপরটি আন্তর্জাতিক। এই দুই সমর্থনের মাধ্যমে আমরা যদি নতুন বাংলাদেশ গড়তে না পারি, তাহলে দোষ আমাদেরই।"
আইনকানুন ও স্বচ্ছ নির্বাচন প্রসঙ্গে
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা এমন আইন প্রণয়ন করতে চাই, যা একবার তৈরি হলে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলতে থাকবে। একটি স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, যেখানে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না যে জয়-পরাজয়ে কারও হস্তক্ষেপ রয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "বর্তমানে যে নির্বাচন প্রক্রিয়া চলছে, সেখানে বৈধভাবেও কেউ জয়ী হলে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। এটি আমাদের মানসিকতার সঙ্গে গেঁথে গেছে যে, কোনো কলকাঠি নাড়ানো ছাড়া দেশে কিছু সম্ভব নয়। অথচ আমরা চাই, নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটি সুষ্ঠু রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।"
জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনের সমর্থন
ড. ইউনূস বলেন, "জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দিয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনেই প্রমাণ হয়েছে, কীভাবে অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। এর ফলে প্রতিপক্ষের অপপ্রচার ধোপে টিকছে না।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা আয়নাঘরে গিয়ে দেখেছি, কত নির্মমভাবে মানুষ নির্যাতিত হয়েছে। যারা বছরের পর বছর বন্দি ছিল, তাদের অভিজ্ঞতা গুম-তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "আমরা এমন একটি বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন থাকবে না। আইনকানুনের ক্ষেত্রে কোনো অস্পষ্টতা থাকবে না, যা সবাই মানতে বাধ্য হবে। এজন্যই বড় পরিসরে কমিশন গঠন করা হয়েছে।"
তিনি আরও বলেন, "এটি শুধু একাডেমিক আলোচনা নয়, বাস্তবভিত্তিক আলোচনা। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি আইন প্রণয়ন করা, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কৃতজ্ঞচিত্তে অনুসরণ করবে।"
ড. ইউনূস বলেন, "আমরা লণ্ডভণ্ড অবস্থা থেকে দায়িত্ব নিয়েছি এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সফল হতে। গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা আমাদের প্রচণ্ড সাহস জুগিয়েছে, কারণ সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা পর্যন্ত আমাদের সমর্থন দিয়ে গেছেন।"
তিনি বলেন, "দেশে মতভেদের প্রবণতা থাকলেও, একটি বিষয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ—নতুন বাংলাদেশ গড়ার সংকল্পে। আমরা যদি দ্বিতীয় অধ্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারি, তবে তৃতীয় অধ্যায়ের জন্য কোনো চ্যালেঞ্জ থাকবে না।"
তিনি আরও বলেন, "যারা বাংলাদেশের জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তারা ফিরে আসার জন্য মরিয়া। তাই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। মতভেদ থাকলেও, আমরা একসঙ্গে পথ চলব।"
এই সংলাপে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক কমিটি, এলডিপি, এবি পার্টি, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস, ডেমোক্রেটিক লেফট ইউনিটি, লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, গণঅধিকার পরিষদ, জাতীয় গণফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, গণফোরাম, আমজনতার দল, লেফট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অংশ নেয়।