যুক্তরাষ্ট্রে বেশি করে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:০২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রে আরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী পুনর্বাসনের আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তার অফিসকক্ষে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ আহ্বান জানান।
উপদেষ্টা বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করছে। তারা ইতোমধ্যেই বেশ কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করেছে। আমি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও বেশি রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আহ্বান জানাই।
জবাবে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স জানান, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসনে অন্যতম বৃহত্তম দাতা। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি বাংলাদেশের স্থানীয় এনজিওগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে প্রায় ১৭ হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করেছে এবং এই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ইস্যু, সন্ত্রাস দমন, রোহিঙ্গা সমস্যা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পুলিশ সংস্কার, সীমান্ত পরিস্থিতি, সংখ্যালঘু ইস্যু, কৃষি খাতে সহযোগিতা-সহ বিভিন্ন পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বড় অংশীদার। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যায়। সন্ত্রাস দমন ও নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে তারা উন্নত প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র প্রদান করে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে আসছে। তিনি মানবাধিকার ইস্যুতে পুলিশ এবং মানবপাচার ইস্যুতে বিজিবি ও কোস্টগার্ডকে আরও বেশি হারে প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান সহযোগিতা অব্যাহত থাকার অঙ্গীকার জানিয়ে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স বলেন, আমরা উচ্চ শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের অনুমতি দেওয়ার হার পূর্বের চেয়ে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছি। আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আরও বেশি প্রশিক্ষণ দেবো। তবে কর্মকর্তারা যেন প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে এসে স্ব স্ব দায়িত্ব পালন করে, তা নিশ্চিত করতে হবে যাতে এটি আরও ফলপ্রসূ হয়।
তিনি বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যে নিরাপত্তা ও সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে সর্বোচ্চ সহযোগিতা রয়েছে। তিনি এ সময় সন্ত্রাস দমন ইস্যুতে পারস্পরিক তথ্য বিনিময় ও এ সংক্রান্ত ডাটাবেজ আপডেটের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্সের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক রয়েছে। আগামী মাসে এ বিষয়ে ভারতের দিল্লিতে দুই দেশের মধ্যে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে বৈঠক হবে।
সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেন, বাংলাদেশে কোনও সংখ্যালঘু নির্যাতিত হচ্ছে না। এটি ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার। সংখ্যালঘু শব্দটি আমরা ব্যবহার করতে চাই না। সবাই বাংলাদেশের নাগরিক ও সবার সমান অধিকার রয়েছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের বিষয়ে গত ৫ আগস্টের পর যে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, সেগুলো মূলত রাজনৈতিক কারণে, ধর্মীয় কারণে নয়।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রেসিডেন্ট লিগ্যাল অ্যাডভাইজার রাহুল ক্যাল, ল' এনফোর্সমেন্ট অ্যাটাচে মাইকেল ডব্লিউ হিন্টজ, পলিটিক্যাল মিলিটারি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জশ পোপ, অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিয়নাল সিকিউরিটি অফিসার স্টিফেন কোভাকসসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।