Logo
Logo
×

জাতীয়

'রাসেল ভাইপার' বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে করণীয় ও বর্জনীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪, ১০:০৭ পিএম

'রাসেল ভাইপার' বা চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে করণীয় ও বর্জনীয়

রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ। ছবি : সংগৃহীত

দেশে সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত হিংস্র ও বিষধর সাপ রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার উপদ্রব উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। এ সাপের আক্রমণে আতঙ্কে দিন পার করছেন জনসাধারণ। বাংলাদেশে একটা সময় বিলুপ্ত বলা হলেও বিষধর সাপ হিসেবে পৃথিবীতে পঞ্চম অবস্থান থাকা রাসেল ভাইপার এখন দেশজুড়ে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কারণ চিকিৎসকদের মতে, এ সাপের বিষ হেমাটোটক্সিক, যার কারণে ছোবল দিলে আক্রান্ত স্থানে পঁচন ধরে ও এন্টিভেনমও (প্রতিষেধক) কাজ করে না। ছোবলের মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ফুলে যায় ক্ষতস্থান। এই সাপের কামড়ে শরীরের দংশিত অংশে বিষ ছড়িয়ে অঙ্গহানি, ক্রমাগত রক্তপাত, রক্ত জমাট বাঁধা, স্নায়ু বৈকল্য, চোখ ভারী হয়ে যাওয়া, পক্ষাঘাত, কিডনি ও ফুসফুসের সংক্রমণসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

দেশজুড়ে রাসেল ভাইপারের শিকার থেকে বাঁচতে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ফা-তু-জো খালেক মিলা (জোহরা মিলা) বলেন, শুধু রাসেল ভাইপার নয়, যে কোনো সাপের কামড়ের শিকার হলেই ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে যে সাপ দংশন করেছে, তা চিহ্নিত করার জন্য সেই সাপের ছবি তুলে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শও দেন জোহরা মিলা।

একইসঙ্গে দংশনের শিকার ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা দেয়া না হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।

সাপটির দংশনের শিকার ব্যক্তিদের চিকিৎসার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে চিকিৎসক আরো বলেন, রাসেল ভাইপারের এন্টিভেনম থাকলেও সেটা খুব একটা কাজ করে না।

২০১৫ সালের দিকে আমরা প্রথম রাসেল ভাইপারে কামড়ানো রোগী পেয়েছিলাম। সে সময় আক্রান্ত হাত-পা কেটে ফেলেও রোগীকে বাঁচানো যায়নি। তাই সাপটির কবল থেকে বাঁচতে সচেতনতাই কার্যকর পথ।


রাসেল ভাইপারসহ অন্যান্য সাপে কামড়ালে যা করবেন:

  • শান্ত থাকুন এবং অতিদ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।
  • শুধু রাসেল ভাইপার নয়, যে কোনো সাপের কামড়ের শিকার হলেই ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না। ওঝার কাছে না গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শে নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্ভব হলে যে সাপ দংশন করেছে, তা চিহ্নিত করার জন্য সেই সাপের ছবি তুলে স্থানীয় বন কর্মকর্তা ও চিকিৎসককে দেখাতে হবে।
  • শরীরের যে স্থানে সাপ কামড়েছে সেটি যতটা সম্ভব কম নড়াচড়া করুন। ঘড়ি বা অলঙ্কার পড়ে থাকলে তা খুলে ফেলুন।
  • কাপড়ের গিঁট ঢিলা করুন, তবে খুলবেন না।

সাপে কামড়ালে যা করবেন না:

  • কামড়ের স্থান থেকে চুষে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
  • কামড়ের স্থান আরও কেটে বা সেখান থেকে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে বিষ বের করে আনার চেষ্টা করা।
  • বরফ, তাপ বা কোনও ধরনের রাসায়নিক ক্ষতস্থানে প্রয়োগ করা।
  • আক্রান্ত ব্যক্তিকে একা ফেলে যাওয়া।
  • কামড়ের স্থানে শক্ত করে বাঁধা। এর ফলে বিষ ছড়ানো বন্ধ হবে না এবং আক্রান্ত ব্যক্তি পঙ্গুও হতে পারেন।
  • বিষধর সাপ ধরা থেকেও বিরত থাকা উচিত। এমনকি মৃত সাপও সাবধানতার সাথে ধরা উচিৎ, কারণ সদ্যমৃত সাপের স্নায়ু মারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সতেজ থাকতে পারে এবং তখন তা দংশন করতে পারে।

উল্লেখ্য, রাসেল ভাইপার সাপটি বাংলাদেশ থেকে অনেক বছর আগেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু গত ১০-১২ বছর আগে থেকে আবারো এই সাপের কামড়ের আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণত বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দা সাপটি এই অঞ্চলে আবারো কীভাবে ফিরে এসেছে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই গবেষণা গবেষণা শুরু হয়ে গেছে দেশে।

এছাড়া দেশের অন্তত ২৫টি জেলায় ছড়িয়ে গেছে রাসেল ভাইপার। পৌঁছে গেছে চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী পর্যন্ত। এর সব চেয়ে বেশি বিচরণ লক্ষ্য করা গেছে ঢাকার অদূরবর্তী মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার অববাহিকায়, যার ছোবলে চলতি বছর এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ১০ জন, যাদের অধিকাংশই কৃষক এবং জেলে। এমনকি মানিকগঞ্জে সাপটির কামড়ে গত তিন মাসে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন