কূটনৈতিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে মুখোমুখি ঢাকা–দিল্লি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১১ এএম
ঢাকা ও দিল্লির মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কে উত্তেজনা এখন চরমে পৌঁছেছে। ভারতের দিল্লি, কলকাতা, মুম্বাই, আগরতলাসহ বিভিন্ন শহরে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক কমিশনের সামনে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চালাচ্ছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীরা জোর করে মিশনের ভেতরে ঢোকার চেষ্টাও করেছে। এতে ভারতজুড়ে বাংলাদেশি কূটনীতিক ও মিশনকর্মীদের মধ্যে গভীর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তাজনিত কারণে একাধিক মিশনে সাময়িকভাবে ভিসাসেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মাকে তলব করে ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের সব মিশনের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনায় তদন্ত এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা। এর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে নয়াদিল্লিও বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে তলব করেছে।
চলমান উত্তেজনা কোন দিকে যাচ্ছে এবং এর পরিণতি কী হতে পারে, তা নিয়ে মুখ খুলেছেন দেশি-বিদেশি কূটনীতিক ও বিশ্লেষকেরা। ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকসান্দার গ্রিগোরিয়েভিচ খোজিন বলেছেন, ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে উত্তেজনা আর বাড়তে দেওয়া উচিত নয়। তার মতে, প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতেই পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।
বিমসটেকের সাবেক মহাসচিব ও রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম মনে করেন, এই উত্তেজনা প্রশমনে দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনা জরুরি। তিনি বলেন, উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপ এখন কূটনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। ভারতে নির্বাচন সামনে থাকায় সংখ্যালঘু ইস্যুতে মোদি সরকারের ওপর চাপ রয়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ বাড়ছে। তবে কূটনৈতিক ভাষা ও আচরণে সংযম বজায় না রাখলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করেন।
ভারতের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশ মিশনের সামনে সহিংস বিক্ষোভের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে গত মঙ্গলবার ঢাকায় আবারও ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম এই ঘটনাকে পূর্বপরিকল্পিত সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন হিসেবে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানান। তিনি বলেন, এসব ঘটনা শুধু কূটনীতিকদের নিরাপত্তাই নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রীতিনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশ সরকার আশা করছে, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
গত ১০ দিনে দুইবার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মোট ছয়বার প্রণয় ভার্মাকে তলব করা হলো। অন্যদিকে দিল্লিতেও বাংলাদেশ হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহকে পাল্টা তলব করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নয়াদিল্লি, কলকাতা ও মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ মিশনের সামনে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লাঠিচার্জ ও গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। কলকাতা ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশ ভিসা সেন্টারে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহাবুবুল আলম জানান, নিরাপত্তা বিবেচনায় নয়াদিল্লি, আগরতলা ও শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের ভিসাসেবা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। ভারতের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
একদিকে মিশনের সামনে বিক্ষোভ, অন্যদিকে তলব-পাল্টা তলবের ঘটনায় বাংলাদেশ–ভারত সম্পর্কে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা দ্রুত প্রশমিত না হলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।



