আজ সন্ধ্যায় একসঙ্গে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৪৫ এএম
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং দেশের প্রথম গণভোট—দুটি ভোটেরই ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে আজ ১১ ডিসেম্বর। সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে রেকর্ড করা ভাষণ প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন। ভাষণ প্রচার হওয়ামাত্রই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে নির্বাচনী প্রক্রিয়া, আর সারা দেশের দৃষ্টি এখন থমকে আছে সেই ঘোষণার মুহূর্তে।
তফসিল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বুধবার রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি ও কমিশনাররা। পরে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একসঙ্গে আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতিও অর্থবহ ভোট আয়োজনের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। ইসি সদস্য আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ৮ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারির যেকোনো দিনে ভোট আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বুধবার বিকেল ৪টায় সিইসির মূল ভাষণটি রেকর্ড করে বিটিভি–বেতারের বিশেষ টিম। এতে থাকবে ৩০০ আসনের ভোট আয়োজনের সার্বিক প্রস্তুতি, ব্যালট পেপারের রং, গণভোটের পদ্ধতি, বর্ধিত ভোটের সময় এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার বিস্তারিত। এবার একসঙ্গে দুই ভোটের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় ভাষণের প্রতিটি লাইন অতিরিক্তভাবে যাচাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি জানতে চান ভোটার তালিকা হালনাগাদের অগ্রগতি, গণভোটের পদ্ধতি, ব্যালটের নকশা, ভোটের সময়সীমা, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের প্রস্তুতি—সবকিছু। বিশেষভাবে তিনি আগ্রহ দেখান ‘আউট অব কান্ট্রি ভোটিং’ এবং ‘ইন কান্ট্রি পোস্টাল ভোট’-এর কার্যপ্রণালিতে। ব্রিফিং শুনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং পূর্ণ সহায়তার আশ্বাস দেন।
এর আগে মঙ্গলবার সিইসি ও কমিশনাররা সাক্ষাৎ করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে। আদালতে থাকা সীমানাসংক্রান্ত মামলা, ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটির ভূমিকা এবং নির্বাচনি কার্যক্রমে আদালতের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধান বিচারপতি দ্রুত বিচারিক নিষ্পত্তিসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
প্রচলিত রেওয়াজ ভেঙে এবার তফসিল ঘোষণার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছে নাসির কমিশন। তিনি জানান, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্ণ সমর্থন দেবে।
এই প্রথম জাতীয় নির্বাচন এবং গণভোট একই দিনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাড়তি সময়ের প্রয়োজন বিবেচনায় ভোটের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। মক ভোটিংয়ে দেখা গেছে দুটি ব্যালট নিতে ভোটারদের সময় বেশি লাগে, তাই কেন্দ্রগুলোতে অতিরিক্ত গোপন কক্ষ, আলাদা লাইন এবং প্রয়োজন হলে বুথ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গণভোটের ব্যালট ও ভোটবাক্সও পৃথক করা হয়েছে।
এদিকে হালনাগাদ ভোটার তালিকায় জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত যুক্ত হয়েছে লাখো নতুন ভোটার। তফসিল ঘোষণার পর ১৫ দিনের মধ্যে সরকারি কর্মচারী, আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং নির্বাচন–সম্পর্কিতদের পোস্টাল ব্যালটের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে আলাদা নির্দেশনা আছে, যাতে মাঠে কোনো পক্ষপাত বা চাপ সৃষ্টি না হয়।
পর্যবেক্ষণে থাকছে ৮১টি দেশীয় সংস্থা, যারা নির্বাচন আচরণবিধি, ভোটের পরিবেশ, সমান সুযোগ এবং গণভোটের পুরো প্রক্রিয়া নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে।
আজকের ভাষণ প্রচারের পরই নির্বাচন ও গণভোটের পথচলা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটিই হতে যাচ্ছে আগামী বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপরম্পরা।



