ঢাকায় ২১ লাখের বেশি ভবন ঝুঁকিতে, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংস হতে পারে লাখো স্থাপনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ এএম
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নিয়মনীতি উপেক্ষা করে নির্মিত বহুতল ভবনগুলো ঢাকাবাসীর মৃত্যুঝুঁকি ভয়াবহভাবে বাড়িয়ে তুলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ও সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. জিল্লুর রহমানের সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—ঢাকায় ২১ লাখ ৪৬ হাজার ভবন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর ১৩ শতাংশ এলাকায় ভবন নির্মাণের উপযুক্ত পরিবেশই নেই।
ভূমিকম্প ঝুঁকি সূচক অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ ২০ নগরের তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বহুদিন ধরেই শহরের ১৩ শতাংশ জায়গায় যেকোনো ধরনের নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। কিন্তু আবাসন খাতের অনিয়ন্ত্রিত বিস্তার সেই সতর্কবার্তাকে কার্যত অগ্রাহ্য করছে।
ড. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো অপসারণ না করে তার ওপরই নতুন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে এসব ভবনে বসবাসকারী মানুষ মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছেন।’
রাজউকের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে পাঁচটি বড় ফল্ট অঞ্চল রয়েছে—মধুপুর ফল্ট, দাউকি ফল্ট, প্লেট বাউন্ডারি ফল্ট–১, ফল্ট–২ এবং ফল্ট–৩। প্রতিটি ফল্টই রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৮.৫ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে সক্ষম। বিশেষ করে মধুপুর ফল্টে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে রাজধানীর অন্তত সাড়ে ৮ লাখ ভবন ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।
বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, ঢাকায় প্রায় ২১ লাখ বাসাবাড়ি রয়েছে—এর মধ্যে ১৫ লাখ এক থেকে দুইতলা ভবন, আর ৬ লাখের বেশি চারতলা বাসা। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘ঢাকার আশপাশে যদি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তবে রাজধানীর এক-তৃতীয়াংশ ভবন ধসে পড়তে পারে। এতে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লাখ মানুষ হতাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।’
অধ্যাপক জিল্লুর রহমান আরও জানান, মেঘনা-শীতলক্ষ্যা অববাহিকায় অবস্থিত শ্যালো থ্রাস্ট ফল্ট অগভীর স্তরে সরে গেলে শক্তিশালী ভূমিকম্পের সম্ভাবনা বাড়ে। তার মতে, অদূর ভবিষ্যতে রিখটার স্কেলে ৭ থেকে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বাংলাদেশে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকায় অপরিকল্পিত নগরায়ণই বিপদের প্রধান কারণ। জলাশয় ভরাট করে তৈরি সুউচ্চ ভবনগুলো দুর্বল মাটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে, ফলে ৫ থেকে সাড়ে ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হলেও ভবন হেলে পড়া বা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এই প্রেক্ষাপটে ঢাকার সব ভবনের রাজউকের মাধ্যমে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী জরুরি নিরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন অধ্যাপক মেহেদী আনসারী। তিনি বলেন, ভবনগুলোকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যেতে পারে—
সবুজ: ঝুঁকিমুক্ত
হলুদ: সংস্কার প্রয়োজন
লাল: অবিলম্বে খালি করে শক্তিশালীকরণ জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই কঠোর পদক্ষেপ না নিলে সম্ভাব্য বড় মাপের বিপর্যয় ঠেকানো সম্ভব হবে না।



