পরিবার ও সমাজে পুরুষের ইতিবাচক অবদানকে তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস। নারী-পুরুষের যুগপৎ পথচলাই মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিয়েছে যুগে যুগে। দায়িত্বশীলতা, নির্ভরতা ও দৃঢ়তার প্রতীক হিসেবে পুরুষ সমাজ ও পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য— ‘পুরুষ ও বালকদের উদযাপন ও সমর্থন করা।’
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের সূচনা করেন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর ইউনিভার্সিটি অব দ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইতিহাসবিদ ড. জেরোম টিলাকসিং, ১৯৯৯ সালে। এরও আগে ষাটের দশক থেকে বিভিন্ন দেশে এ দিবস পালনের দাবি উঠলেও বিস্তৃত পরিসরে পালিত না হওয়ায় তা ছড়িয়ে পড়তে সময় লেগেছে। ড. টিলাকসিংয়ের নেতৃত্বে বৃহৎ আকারে উদযাপন শুরু হলে বিশ্বের বহু দেশ এতে সাড়া দিতে শুরু করে।
দিবসটির লক্ষ্য সম্পর্কে আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবসের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে—পুরুষ ও বালকদের ইতিবাচক অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, সমাজে পুরুষদের চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা, লিঙ্গসমতা ও মানবিক মূল্যবোধকে শক্তিশালী করা এর উদ্দেশ্য।
বিশ্বের নানা দেশে আজ সেমিনার, আলোচনা, সাংস্কৃতিক আয়োজন এবং সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন—#InternationalMensDay—এর মাধ্যমে দিবসটি উদযাপন হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় ইন্টারন্যাশনালমেন্সডে ডটকম তাদের মূল অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে, যেখানে পুরুষ অধিকার নিয়ে কাজ করা নেতারা অভিজ্ঞতা ও করণীয় তুলে ধরবেন।
এ বছর দিবসের প্রেক্ষাপটে দেওয়া বিবৃতিতে ড. টিলাকসিং বলেন, আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস পৃথিবীকে সুস্থ ও নিরাময় করতে একটি বৈশ্বিক মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে। এ দিবসের আদর্শ ও বার্তা হতাশাগ্রস্তদের আশা, নিঃসঙ্গদের সাহস এবং ভগ্নহৃদয়দের সান্ত্বনা দেয়। আমাদের লক্ষ্য বিভাজন দূর করে মানবিক ও যত্নশীল বিশ্ব গড়ে তোলা। তিনি আরও বলেন, এ দিবস এখন এক বিশ্বজনীন আন্দোলন—যা অনেকের জীবনে স্থিতিশীলতা ও অনুপ্রেরণা এনে দিয়েছে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা হিসাবরক্ষক সৈয়দ নাজমুল হোসেন মনে করেন, পুরুষের অবদানকে স্বীকৃতি দিলে সমাজে মানবিকতারও বিকাশ ঘটবে।
ইন্টারন্যাশনাল মেন্স ডে ডটকম উদযাপনের পথও নির্দেশ করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনে ‘সাহসী পুরুষ’—যেমন সেনাসদস্য, পুলিশ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্মী—এদের অবদানকে সম্মান জানাতে আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি দাতব্য প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় সংগঠন, ব্যবসা ও শিক্ষা খাতে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখা পুরুষদেরও সম্মানিত করার পরামর্শ দিয়েছে।
ঢাকার লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক সৈয়দা নাজনীন আখতার বলেন, নারী-পুরুষ তুলনা কখনোই সমতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না; বরং উভয়ের অবদান মিলেই সমাজ এগিয়ে যায়। নারী হিসেবে আমরা পুরুষের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। তবে নারীর অবদানকেও সমানভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। নারী-পুরুষ মিলে দেশটাই সমৃদ্ধ হয়।



