Logo
Logo
×

জাতীয়

হাসিনার সাক্ষাৎকার রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:৩৮ পিএম

হাসিনার সাক্ষাৎকার রয়টার্স, এএফপি ও দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে প্রকাশিত

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হলেও এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমা চাইতে রাজি নন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ভারতে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা বলেছেন, তার দল আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে না দিলে তাদের লাখ লাখ সমর্থক এ নির্বাচন বয়কট করবে।

বুধবার রয়টার্স, এএফপি ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টে শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকার একযোগে প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ 'প্রত্যাখ্যান' করেছেন এবং চলমান বিচারকে 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে মন্তব্য করেছেন।

জাতিসংঘের স্বাধীন প্রতিবেদনের হিসাব অনুযায়ী, জুলাই অভ্যুত্থানে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত এবং হাজারো মানুষ আহত হয়।

বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটররা শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ চেয়েছেন।

হাসিনা দাবি করেছেন, অডিওটির কথাগুলো ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ—আমি নিজে বাহিনীগুলোকে আন্দোলনে গুলি চালাতে বলেছি—এটা মিথ্যা।’

তবে তিনি স্বীকার করে বলেছেন যে, 'চেইন অব কমান্ডের ভেতরে কিছু ভুল অবশ্যই হয়েছিল।'

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৩ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণার তারিখ জানাবে।

হাসিনার অভিযোগ, তাকে 'আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়নি।'

তবে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি কিংবা কোনো আইনজীবীও নিয়োগ দেননি।

মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হলে 'অবাক বা ভীত হবেন না' উল্লেখ করে শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, 'ক্যাঙ্গারু কোর্টে মামলা চলছে, অপরাধী বানিয়ে রায় আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে।'

হাসিনা বলেন, 'আমি নিহত প্রতিটি শিশু, ভাইবোন, আত্মীয় ও বন্ধুর জন্য শোক জানাই।' কিন্তু এজন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। তার দাবি, সরকার উৎখাতের জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা অস্থিরতা তৈরি করে চক্রান্ত করেছিল।

'নিহতদের জন্য আমি শোক জানাই। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশকে গুলি চালাতে বলেছিলাম—এই মিথ্যা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করি,' বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি অভিযোগ করেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন 'অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে'। এটা 'জনগণের মত প্রকাশের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে', যা 'একটি বিপজ্জনক নজির হতে যাচ্ছে' বলে উল্লেখ করে তিনি।

আওয়ামী লীগের ওপর নিষেধাজ্ঞা ‘শুধু অবিচারই নয়, এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ মন্তব্য করে রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পরবর্তী সরকারের বৈধতা আসবে নির্বাচনের মাধ্যমেই। কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে—তারা ভোট দেবে না। যদি কার্যকর রাজনৈতিক ব্যবস্থা চান, তাহলে এত মানুষকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না।”

শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত চলাকালে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বর্তমানে নিষিদ্ধ আছে। 'এই পরিস্থিতিতে কোনো নির্বাচন হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বিভেদের বীজ বপন করবে,' বলেন শেখ হাসিনা।

এএফপির কাছে হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, মামলাগুলো 'কোনো প্রমাণসাপেক্ষে করা হয়নি।' ট্রাইব্যুনালটি 'রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের দ্বারা গঠিত হয়েছে' বলেছে মন্তব্য করেন তিনি।

শেখ হাসিনা 'সব অপরাধের কেন্দ্রবিন্দু' উল্লেখ করে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতের কাছে 'দোষী প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদণ্ড' চেয়েছেন।

শেখ হাসিনা রয়টার্সকে বলেন, 'পরবর্তী সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে বৈধতা থাকা আবশ্যক। দেশের লাখ লাখ মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তারা ভোট দেবে না।' 'সমর্থকদের অন্য দলেও ভোট দিতে' বলেননি শেখ হাসিনা।

তার আশা, নির্বাচনের আগে তার দল কার্যক্রম চালাতে পারবে। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টকে হাসিনা বলেন, তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ।'

'ভারতের বাইরে আশ্রয় নেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই' বলেও জানান তিনি।

হাসিনা বলেন, তিনি দিল্লিতে 'নিরিবিলি ও স্বাধীনভাবে' বসবাস করছেন। মাঝে মাঝে শহরের লোধি গার্ডেনে তিনি হাঁটতে যান, যদিও অতীতে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ঘটনার কারণে তিনি সতর্ক আছেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য সাংবিধানিক শাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসা জরুরি। দেশের ভবিষ্যৎ কোনো একক ব্যক্তি বা পরিবার নির্ধারণ করে দিতে পারে না।'

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার এখন অগ্রাধিকার 'বাংলাদেশের কল্যাণ ও স্থিতিশীলতা।' যদিও তার দল আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আইনি ও কূটনৈতিক পথ খোঁজার চেষ্টা করছে।

'বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, সেটা দিতে হলে ইউনূসকে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পুনর্বহাল করতে হবে,' এএফপিকে বলেন শেখ হাসিনা।

আর ৫ অগাস্ট দেশত্যাগের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে শেখ হাসিনা ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, “দেশে থাকলে শুধু আমার জীবন নয়, আমার আশপাশের মানুষদের জীবনও হুমকিতে পড়ত।”

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন