ইউএনজিএতে ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ: গণতন্ত্র, মানবিকতা ও বৈশ্বিক অংশীদারিত্বে নতুন বার্তা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৭ এএম
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৮০তম অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের অংশগ্রহণ বাংলাদেশের দায়িত্বশীল বৈশ্বিক ভূমিকাকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এতে গণতান্ত্রিক শাসন, মানবিক সংহতি ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে প্রতিফলিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে তিনি প্রধান উপদেষ্টার ইউএনজিএ সফরের সাফল্যের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
শফিকুল আলম জানান, অধ্যাপক ইউনূস নিউইয়র্কে ইউএনজিএ-র উচ্চপর্যায়ের অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি বৈশ্বিক সম্প্রদায়কে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য রাখেন, বিশ্বনেতাদের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন এবং গণতন্ত্র, মানবিক নেতৃত্ব ও ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান উপস্থাপন করেন।
ইউএনজিএ ভাষণে ইউনূস বাংলাদেশে গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থার প্রতি অটল অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি স্বাধীন, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে বৈশ্বিক মহলকে আশ্বস্ত করেন যে বাংলাদেশ জনগণ ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের লালিত গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় প্রস্তুত।
এই সফরে তিন রাজনৈতিক দলের ৬ প্রতিনিধি ইউনূসের সঙ্গে যোগ দেন, যা বাংলাদেশি গণতান্ত্রিক যাত্রায় একটি ঐক্যবদ্ধ বার্তা বহন করেছে। তারা প্রবাসী নেতৃবৃন্দ, কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দেন।
বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একাধিক কৌশলগত বৈঠকে গণতান্ত্রিক শাসন, বাণিজ্য, জলবায়ু সহনশীলতা ও মানব উন্নয়ন ছিল আলোচনার মূল বিষয়। ইতালি, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, আলবেনিয়া, কসোভো ও ভুটানের নেতাদের সঙ্গে এসব বৈঠক বাংলাদেশের বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব জোরদারে সহায়ক হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপো গ্রান্ডি, ইউনিসেফ নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল, বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা, আইএমএফ ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা ও নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমাসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়োজিত নৈশভোজেও ইউনূস যোগ দেন।
রোহিঙ্গা সংকট এই সফরের অন্যতম প্রধান ইস্যু ছিল। ইউনূস নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের ওপর জোর দেন এবং আন্তর্জাতিক মহলের মনোযোগ যেন হারিয়ে না যায় সে আহ্বান জানান। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রতিশ্রুতি আসে।
এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘকে অনুরোধ করেছেন বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের অগ্রগতি বিষয়ে একটি স্বাধীন মূল্যায়ন করতে, যা দেশের জবাবদিহি ও উন্নয়নযাত্রায় আন্তর্জাতিক আস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
সফরে কসোভো, আলবেনিয়া ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমশক্তি রপ্তানির নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। শফিকুল আলমের মতে, এসব সুযোগ প্রবাসী আয় বাড়াতে এবং নতুন অংশীদার দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে সহায়ক হবে।



