
প্রিন্ট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৭ এএম
নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রমী আয়োজন

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ১০:১২ পিএম

ছবি- যুগের চিন্তা
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম জেলায় যোগদানের ছয় মাস পুর্তি উপলক্ষে আজ সাংবাদিকদের সামনে নিজেই হাজির হয়ে তার কর্মকান্ড সম্পর্কে জানতে চাইলেন। তার আয়োজনকে সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম উল্লেখ করে জেলা প্রশাসকের ভুয়সী প্রশংসা করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকগণ। নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ বলেন, আমি আমার সাংবাদিকতার দীর্ঘ জীবনে দেখিনি কোন জেলা প্রশাসক নিজে থেকে এমন মিট দ্যা প্রেস আয়োজন করে নিজের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চেয়েছেন।
জেলা প্রশাসককে একজন জনবান্ধব অফিসার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,এই জেলা প্রশাসক তার স্পেচের বাইরে গিয়েও জেলাবাসীর উন্নয়নে অনেক কাজ করছেন। এটা আসলে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সাধারণ মানুষের মধ্যেও তার গ্রহণ যোগ্যতা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে জেলার শীর্ষ এই সাংবাদিক নেতা আরো বলেন, সবাই নারায়ণগঞ্জ জেলায় আসেন কোটি কোটি টাকা কামানের জন্য। কিন্তু এই ডিসি সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টিও জেলার এই তরুণ অভিভাবকের প্রসংশা করে বলেন, ১ লক্ষ গাছ লাগানো, ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করা একজন জেলা প্রশাসকের সরকারী কাজ না। কিন্তু উনি উপযাজক হয়েই এইগুলো করছেন। উনি এই ছয় মাসেই উনার যে ভালো ইনটেনশন আছে, সেটা প্রমাণ করেছেন উল্লেখ করে আফজাল হোসেন পন্টি আরো বলেন, উনার এই ধরণের ভালো সামাজিক কাজের কারণে পরবর্তীতে যারা এই জেলায় জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে আসবেন,তাদের উপরেও একটা চাপ সৃষ্টি হবে।
এদিকে যানযটকেই নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সাংবাদিকদের সহয়তা কামনা করেছেন জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিয়া।
তার দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাস পূর্তি উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আজ সকালে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দায়িত্ব পালনে তাকে সার্বিক সহয়তার জন্য।
জেলার অভিভাবক হিসেবে স্থানীয় সাংবাদিকগণ জেলা প্রশাসককে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। তিনি তাদের প্রতিটি মতামত ও পরামর্শ মনোযোগ সহকারে শুনেন এবং প্রয়োজনীয় নোট নেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি বিগত ছয় মাসে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে তাঁর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন।
জেলা প্রশাসক তার গৃহীত 'গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ' কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং কর্মসূচির স্লোগান-সমৃদ্ধ টোকেন উপহার হিসেবে তুলে দেন।
জেলা প্রশাসক একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে গত ছয় মাসে রুটিন কাজের বাইরে সম্পন্ন হওয়া জনগুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করেন।
তিনি এ সময় বাংলাদেশে সব জেলার আগে নারায়ণগনঞ্জে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন।
গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ' কর্মসূচির অধীনে ১ লক্ষ গাছ রোপণ,৮ জোড়া কমিউটার ট্রেন চালু ও ২ টি রেল ক্রসিং মেরামত, পানাম সিটি রেপ্লিকা নির্মাণ ও সার্কিট হাউজ ফোয়ারা নির্মাণ,পর্যটন আকর্ষণ বৃদ্ধি ও শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের কথা উল্লেখ করেন। চার দশক পর মীর জুমলা রোড উদ্ধার ও সংস্কার,দীর্ঘদিন ধরে বেদখল থাকা একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উদ্ধার ও সংস্কার করা হয়েছে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
জেলায় স্বাস্থ্য খাতে বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে এনআইসিউ স্থাপন করেছি। ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে ডেঙ্গুর কিট বিতরণ, হুইল চেয়ার বিতরণ এবং ইমার্জেন্সি ইউনিট সংস্কারসহ স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সার্কিট হাউজের পেছনের রাস্তা উদ্ধার ও সংস্কার এবং চাষাঢ়া মোড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছি নাগরিক নিরাপত্তা ও সুবিধা বৃদ্ধি করতে। গ্রীন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসুচীর আওতায় গত দুই মাসে ১২৫ ট্রাক ব্যানার,ফেস্টুনসহ ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করেছি। ঈদ ও রমজান মাস ছাড়াও ট্রাক সেলের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি। নাগরিক সেবাকে সহজীকরণসহ My Gov প্ল্যাটফর্ম চালু করার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
জেলার একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্কুল ব্যাগ, ড্রেস,জুতা,খেলাধুলার সামগ্রী বিতরণ, কারাগারসহ ২০টি লাইব্রেরিতে ৫৯ ধরণের বই বিতরণ, শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে বিভিন্ন সহায়তামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে পেট্রোল পাম্পগুলোতে 'নো হেলমেট নো ফুয়েল' প্রচারাভিযান চালু করেছি।
জেলা প্রশাসক তাঁর চলমান কাজগুলোর অগ্রগতিও তুলে ধরে বলেন ঈদগাহ নির্মাণ, খাল খনন ও জলাবদ্ধতা নিরসন, ১৭ কিমি খাল উদ্ধার, ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে ১০ বেডের CU চালু, কালেক্টরেট মসজিদ ও কালেক্টরেট স্কুল ভবন নির্মাণ, ড্রাইভার-হেলপারদের ডাটাবেইস তৈরি এবং নির্দিষ্ট পোশাক ও আইডি কার্ড প্রদান, যানজট নিরসনে ৮ পয়েন্ট নির্ধারণ এবং অটোরিক্সা এলাকাভিত্তিক রং নির্দিষ্টকরণের কার্যক্রম চলমান আছে।
ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের প্রবেশমুখে 'গেট অব ডান্ডি' নির্মাণ, ডিসি পার্ক আধুনিকায়ন, ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে গ্যালারি নির্মাণ এবং পঙ্খীরাজ খাল পুনঃসংস্কার কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ জেলা প্রশাসককে গত ছয় মাসে তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। উন্মুক্ত আলোচনায় সাংবাদিকরা নারায়ণগঞ্জের অন্যতম প্রধান সমস্যা যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এছাড়াও ডিসি অফিসের সামনে যাত্রী ছাউনি তৈরি, খানপুর হাসপাতালের পাশে ড্রেনেজ ব্লকেড সমস্যা সমাধানে মিনি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, শীতলক্ষ্যা নদীর দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ, হাজীগঞ্জ দুর্গের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, দুর্গন্ধমুক্ত পানির ব্যবস্থা, হাসপাতাল অব্যবস্থাপনা দূরীকরণ, চাষাঢ়া মোড়ে রাস্তা সংস্কার, জেলা পরিষদ ফুটওভার ব্রিজ স্থানান্তরপূর্বক ডিসি অফিসের সামনে স্থাপন এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ঢাকা সড়ক বিভাগের আওতাধীন থেকে নারায়ণগঞ্জ সড়ক বিভাগের আওতাধীন এনে সংস্কার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জেলা প্রশাসক উপর্যুক্ত সকল সমস্যা আমলে নিয়ে সকলকে সাথে নিয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করার আশ্বাস প্রদান করেন।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব সভাপতি আবু সাউদ মাসুদ জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন পন্টিমাত্র ছয় মাসে এমন একটি জবাবদিহিমূলক প্রেস ব্রিফিং আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তারা উভয়ই নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জেলা প্রশাসক উপস্থিত সকলকে প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উপস্থিত থাকার জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান এবং সকলের সহযোগিতায় একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ নারায়ণগঞ্জ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করে করেন।