
প্রিন্ট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:০৫ এএম
সংখ্যালঘু ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের বক্তব্য

অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৪ পিএম

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চার ব্যানারে গত ১০ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে গত ৬ মাসে (জানুয়ারি থেকে জুন ) ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসহ গত ১১ মাসে ২৪৪২ সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতার ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লিখিত ২৭ জন নিহত হওয়ার ঘটনাসমূহ পর্যালোচনা করে ২২ ঘটনায় নিয়মিত হত্যা মামলা এবং ৫টির ক্ষেত্রে অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ।
জানা গেছে , হত্যাকাণ্ডের কারণ সমূহের মধ্যে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে দুই (ভাতিজা চাচাকে হত্যা, চাচাতো ভাইদের মধ্যে মারামারির ফলে ১জন নিহত), আর্থিক লেনদেন সংক্রান্তে ২ জন (তন্মধ্যে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের টাকা পাওনা কে কেন্দ্র করে ১ জন), ডাকাতি/দস্যুতার ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের শিকার ৭ জন, সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য সন্দেহে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের গুলিতে ১ জন নিহত হয়েছে।
এছাড়াও তরমুজ ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে মারামারিতে ১ জন, গলায় ফাঁস নিয়ে ৩ জনের আত্মহত্যা, মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এমন ১১ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় (ভবঘুরে/মানসিকভাবে অসুস্থ মহিলার সন্দেহজনক মৃত্যু, জুম চাষে গিয়ে খেয়াং নারী নিহত, তামাক ক্ষেত হতে পাতা কুড়াতে যাওয়া নারীর মৃতদেহ উদ্ধার, বাড়ির পাশ হতে জখমহীন মৃতদেহ/অন্যান্য স্থান থেকে মৃতদেহ উদ্ধার ইত্যাদি) তদন্ত চলমান রয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসমূহে মোট ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ১৫ জন আসামি বিজ্ঞ আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন এবং ১৮ জন আসামি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। কোন হত্যাকাণ্ডই সাম্প্রদায়িক সহিংসতা/ সাম্প্রদায়িকতার কারণে সংঘটিত হয়নি মর্মে তদন্তে পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রেস উইং।
সংবাদ সম্মেলনে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, গণধর্ষণ সংক্রান্তে মোট ২০ ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ২০ ঘটনার মধ্যে ১৬ টি ঘটনার অভিযোগে মামলা রুজু হয়েছে এবং ২৫ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনটি ঘটনা সংক্রান্তে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি। রাজশাহীর তানোরে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তের সাথে পূর্ব হতে বাদীনির পারিবারিক দ্বন্দ্ব ছিল মর্মে জানা যায়। মাগুরার শ্রীপুর হরিনন্দীগ্রামে কিশোর কুমার রায়ের বাড়িতে ডাকাতির পর সহধর্মীনীকে গণধর্ষণের ঘটনাটিতে কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি এবং ঘটনাটি পুলিশ তদন্ত করে প্রাথমিকভাবে সত্যতা পায়নি।
সংগঠনটি জানায় সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে গত বছরের ৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত; ২০১০ যার মধ্যে ১৭৬৯ সম্প্রদায়িক আক্রমণ এবং হামলার ঘটনা । বাংলাদেশ পুলিশ উক্ত ১৭৬৯ ঘটনা যাচাই-বাছাই করে ৫৬ জেলায় মোট ১৪৫৭ ঘটনার সত্যতা পায়।
উক্ত ১৪৫৭ ঘটনার মধ্যে মোট ৬২ ঘটনায় মামলা রুজু হয় এবং ৯৫১ ঘটনায় জিডি দায়ের করা হয়। ৬২ ঘটনায় মোট ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তে দেখা যায় যে ১৭৬৯ ঘটনার মধ্যে ১৪৫২ ঘটনা (৮২.৮ শতাংশ) ৫ই আগস্ট, ২০২৪ এ সংগঠিত হয়। ১২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক বিরোধ সংক্রান্ত। ১৬১ ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়নি। ৫ই আগস্ট ২০২৪ হতে ২ জানুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত পূজা মন্ডপ/উপাসনালয় সংক্রান্তে মোট ১২৭ সহিংসতার ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় যার মধ্যে ৬৬ ঘটনায় মামলা এবং ৬১ ঘটনায় জিডি লিপিবদ্ধ করা হয়। রুজুকৃত মামলায় মোট ৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে চুরি, প্রতিমা, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নি-সংযোগ, জমি দখল, উচ্ছেদ, উচ্ছেদের চেষ্টা ইত্যাদি সংক্রান্তে মোট ৬০টি ঘটনার অভিযোগ করা হয়। উক্ত ঘটনা সমূহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে মন্দির বা পারিবারিক মন্দিরের মূর্তি, অলংকার, আসবাবপত্র, দান বাক্সের টাকা ইত্যাদি সংক্রান্তে বাংলাদেশ পুলিশ ২০টি চুরির ঘটনার সংবাদ পায়।
উক্ত ২০ ঘটনায় ১৪ নিয়মিত মামলা রুজু করা হয় এবং ৫ ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রতিমা, মন্দির, পারিবারিক মন্দিরে ভাঙচুরের মোট ২৪ ঘটনার সংবাদ পাওয়া যায় এবং এ সংক্রান্তে মোট ১৮ মামলা ও ৪টি ঘটনা জিডিতে লিপিবদ্ধ করা হয়। এসকল মামলায় মোট ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং ১০ জন আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে। একটি চুরির ঘটনায় এবং দুইটি ভাঙচুরের ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়া যায়নি।
এছাড়া চারটি অগ্নি-সংযোগের ঘটনার মধ্যে দুটি অগ্নি-সংযোগের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য পাওয়া যায়নি। ৪ ঘটনায় জমি ও সীমানা সংক্রান্ত সমস্যা ছিল মর্মে জানা যায় তন্মধ্যে দুটি ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমাধান হয়। ছয়টি জায়গা দখলের অভিযোগের সংবাদে তদন্তে প্রকৃতপক্ষে জায়গা দখলের তথ্য পাওয়া যায়নি। খিলক্ষেত থানাধীন বাংলাদেশ রেলওয়ের জায়গার অস্থায়ী পূজা মন্ডপটি মূলত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বগুড়ায় শ্মশানঘাটের পিলার ঠিকাদার কর্তৃক ভেঙে ফেলার ঘটনায় প্রশাসনের উদ্যোগে পুনরায় শ্মশান ঘাট নির্মাণ করে দেয়া হয়।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংঘটিত অন্যান্য ঘটনাসমূহ পরবর্তীতে সুনির্দিষ্টভাবে সরবরাহ করা হবে বলে জানানো হয়েছে। তথ্য পাওয়া গেলে সুনির্দিষ্টভাবে ঘটনা সমূহের বিস্তারিত জানানো হবে।
সংঘটিত প্রত্যেকটি ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে এবং সকল স্থাপনা ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।