Logo
Logo
×

জাতীয়

অনুসন্ধান কমিটি : কারাগারের নিরাপত্তায় যেসব ত্রুটি পেল

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক :

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৫, ১০:১৬ এএম

অনুসন্ধান কমিটি : কারাগারের নিরাপত্তায় যেসব ত্রুটি পেল

ফাইল ছবি - হামলা-ভাঙচুরের পর বিধ্বস্ত নরসিংদী জেলা কারাগার

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এবং অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর সারাদেশে যে পাঁচটি কারাগারে ‘বিদ্রোহ পরিস্থিতি’ তৈরি হয় এবং আসামিদের পালিয়ে যাওয়া, অস্ত্র লুট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে; সব কটিতেই ‘কারাগারের কাঠামোগত ত্রুটি’র বিষয়টি পর্যবেক্ষণে এনেছে অনুসন্ধান কমিটি।

হামলা-লুট-আসামিদের পালিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতির ‘কারণ ও কর্তৃপক্ষের করণীয় নির্ধারণে’ ওই অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

কমিটি তদন্ত শেষ করে এরইমধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দিয়েছে। সেখানে ‘মোটাদাগে’ কিছু কারণ নির্ধারণ করে ভবিষ্যতের জন্য কিছু করণীয়-পদক্ষেপের সুপারিশ এসেছে বলে কারা অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যখন বন্দিরা কারাগারের ভেতর বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন অভ্যন্তরে থাকা কারা কর্তৃপক্ষ সীমিত জনবল নিয়ে ভেতরের বন্দি ও বাইরের লোকজনের ‘রোষে’ পড়ে যায়।

জরুরি পরিস্থিতিতে কারারক্ষীরা যে বাইরের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নেবেন, সেই পরিস্থিতি তখন ছিল না। অন্য জায়গা থেকে কারারক্ষী এনে জনবল বাড়িয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অবস্থাও ছিল না সে সময়।

কারা অধিদপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে এবং নিরাপত্তা সরঞ্জামও সীমিত। তারপরেও যা আছে তা দিয়ে দীর্ঘক্ষণ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দুয়েকটি জায়গায় কারারক্ষীদের উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রেও দুর্বলতা ছিল। তারা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিল, করণীয় কী হবে- সে বিষয়ে তারা কোনো নির্দেশনা পাচ্ছিল না।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। সে সময় সারাদেশে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সেসব ঘটনায় কারারক্ষীদের গুলিতে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। নিহতদের মধ্যে জামালপুর জেলা কারাগারে সতজন এবং গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার ছয়জন ছিলেন। আহত হন দুই শতাধিক কারারক্ষী। এ ছাড়া কারাগারের অস্ত্র, গোলাবারুদ থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত লুটের ঘটনা ঘটে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে ‘বিদ্রোহের’ ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার, সাতক্ষীরা, শেরপুর, কুষ্টিয়া ও নরসিংদী কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান।

পালিয়ে যাওয়া বন্দিদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড পাওয়া আসামি ছাড়াও বিভিন্ন নিষিদ্ধ ‘জঙ্গি’ সংগঠনের আসামিরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে গ্রেপ্তার ও নিজ ইচ্ছায় অনেকে ফিরে এলেও বড় একটা অংশ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন গত ১০ মার্চ বলেছিলেন, জেল পালানো সাতশর মতো বন্দি এখনও পলাতক, যাদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন ও জঙ্গি মিলে ৬৯ জন রয়েছেন।

এর প্রায় তিন মাস পর ১৫ জুন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এখনও পলাতকের সংখ্যাটা ৭২৪ই আছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত, যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ও জঙ্গি মিলে পলাতকের সংখ্যাটাও ৬৯ জন।”

এর মধ্যে জঙ্গি কতজন, সেটা আলাদাভাবে জানাতে না পারলেও নরসিংদী জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যে নয়জন জঙ্গি ছিলেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

কারা সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, “নরসিংদী ও শেরপুর কারাগারের আসামি পালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছিল। সেই কারাগার দুটির সার্ভারও ধ্বংস হয়ে যায়, যে কারণে সেখানকার বন্দিদের সংখ্যা এবং বিস্তারিত তথ্য খোয়া গেছে।”

সে সময় কারারক্ষীদের ব্যবহৃত ৯৪টি অস্ত্র লুট হয়েছিল। এর মধ্যে ৬৫টি পরে উদ্ধার সম্ভব হলেও এখনও হদিস মেলেনি ২৯টি অস্ত্রের।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নরসিংদী কারাগার থেকে পলাতক দেড় শতাধিক, কাশিমপুর কারাগারের শতাধিক, কুষ্টিয়ার ২০ জন, শেরপুরের সাড়ে তিন শতাধিক এবং সাতক্ষীরা কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া অন্তত ৫০ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।

ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নরসিংদী জেলা কারাগারে প্রথম হামলার ঘটনা ঘটে। ১৯ জুলাই সেই কারাগারে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপর সরকার পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট প্রায় একযোগে অনেক কারাগারে বন্দিদের ‘বিদ্রোহ’, হামলা ও পালানোর ঘটনা ঘটে।

‘বিদ্রোহ পরিস্থিতি’ তৈরি করে ৬ অগাস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দি পালিয়ে যান। সেদিন বিকালে বন্দিরা সেখানে বিদ্রোহ শুরু করেন। তারা কারাগার ভেঙে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

কারারক্ষীরা থামানোর চেষ্টা করলে বন্দিরা তাদের ওপর চড়াও হয়। একপর্যায়ে বন্দিদের কেউ দেওয়াল ভেঙে, কেউ দেওয়াল টপকে, আবার কেউ দেওয়ালের সঙ্গে বিদ্যুতের পাইপ লাগিয়ে কারারক্ষীদের মারধর করে পালিয়ে যায়।

খবর পেয়ে সেনাবাহিনী কমান্ডো অভিযান চালিয়ে বিদ্রোহ দমন করে। সে সময় গুলিতে ছয়জন মারা যান। এ ছাড়া বন্দিদের হামলায় আহত হন অন্তত ২৫ নিরাপত্তাকর্মী।

গাজীপুরের কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ফিরেছেন ৫৬ বন্দি। এখনও পলাতক আছেন ১৪৬ জন।

সে সময় বন্দিদের একটা অংশ কারা ভবনের আসবাবপত্র ও মালামালে অগ্নিসংযোগ করে। ভাঙচুর করা হয় বেশ কিছু সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া কারাগারে আসামিদের তালিকাভুক্তির রেজিস্ট্রার খাতার পাশাপাশি অপরাধের শাস্তি রেজিস্ট্রার পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নিরাপত্তাব্যবস্থা দেশের যে কোনো কারাগারের চেয়ে ভালো। সে কারণে অপেক্ষাকৃত বিপজ্জনক আসামিদের এখানে রাখা হয়।

এই কারাগারে অন্য বন্দিদের সঙ্গে জঙ্গিরাও ছিলেন। তবে কতজন জঙ্গি পালিয়েছেন তা আলাদাভাবে জানা যায়নি।

শেরপুর জেলা কারাগারে হামলাটি হয় সরকার পতনের পরপরই। সরকার পতনের খবরে ৫ আগস্ট বিকালে শেরপুর শহরে হাজার হাজার মানুষ আনন্দ মিছিল বের করে। সেই মিছিল থেকেই মানুষ গিয়ে কারাগারে হামলা চালায়।

হামলাকারীরা কারাগারের প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কারাগারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। কারারক্ষীরা জীবন নিয়ে পালিয়ে বাঁচেন। চার মাস সাত দিন পর ১২ ডিসেম্বর কারাগারটি পুনরায় চালু করা যায়।

সেদিন কারাগার থেকে ৫১৮ বন্দি পালিয়ে যায় জানিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বলেছে, হামলাকারীরা কারাগারের নয়টি অস্ত্র, চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি ও কারাবন্দিদের জন্য মজুত রাখা খাদ্যসাগ্রীসহ টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়।

এ ছাড়া কারাগারের মূল্যবান নথিপত্র, গাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। লুট হওয়া সব অস্ত্র এবং চায়নিজ রাইফেলের ৮৬৪টি গুলি, শটগানের ৩৩৬টি গুলি পরে উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় তৎকালীন জেলার লিপি রানী সাহা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলার তদন্ত শেষ হয়নি এখনও।

শেরপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শফিউল আলম বলেন, পলাতক ৫১৮ বন্দির মধ্যে ২৮৬ জনকে বিভিন্ন সময়ে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন ৭২ জন। এ ছাড়া এখনও ২৩২ জন বন্দি পলাতক।

এর মধ্যে ৬৫ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৪০ জন ভ্রাম্যমাণ আদালতে স্বল্প মেয়াদের। অন্যরা বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত। বাকিরা বিচারাধীন মামলার হাজতি আসামি।

তিনি বলেন, জেলা কারাগারের ১১টি ভবনের মধ্যে গণপূর্ত বিভাগ ছয়টি ভবনের কাজ শতভাগ সম্পন্ন করেছে। বাকি পাঁচটি ভবনের কাজ ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে সব ভবনেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ভবনের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র পাওয়া গেছে। সেইসঙ্গে কারাগারের সিসি ক্যামেরার কাজ চলমান রয়েছে।

জেলা কারাগারের ধারণক্ষমতা ১২৫ জন হলেও বর্তমানে ৪২৬ জন বন্দি আছেন বলে কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।


নরসিংদীতে সব আসামির পলায়ন, পুড়েছে ২৯ হাজার নথি


ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়। সেখানে থাকা জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দি পালিয়ে যান। লুট হয় ৮৫টি অস্ত্র। পুড়িয়ে দেওয়া হয় ২৯ হাজার নথি।

কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পালিয়ে যাওয়া ৮২৬ বন্দির মধ্যে জেলা প্রশাসনের প্রচারে সাড়া দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন ৬৪৬ বন্দি। পলাতক থাকা বাকি ১৮০ জনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় ৩৫ জনকে। এখনও পলাতক রয়েছেন ১৪৫ জন। এ ছাড়া উদ্ধার হয়নি লুট হওয়া ৬৫টি অস্ত্র।

হামলার পর পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বন্দিদের আশপাশের জেলায় রাখতে হয়েছে। কিছুদিন পর কারাগার মেরামত করে তাদের আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

নরসিংদীর জেল সুপার মো. শামীম ইকবাল বলেন, হামলার সময় ২৯ হাজার মামলার নথিপত্র পুড়ে গেছে। এতে বন্দিদের সাজা খাটার সময়সহ আসামিদের সব তথ্যে বিভ্রাট হচ্ছে। কে কী ধরনের মামলার আসামি তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না। প্রযুক্তির ব্যবহারসহ আদালত থেকে এসব তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন, কারাগারের ভাঙা অবকাঠামো মেরামত করা হলেও তা আবার ভেঙে পড়ছে। দিন দিন বাইরের সড়ক উঁচু হওয়ায় কারাগারের দেওয়াল নিচু হয়ে বাইরে থেকে অনেকটা অরক্ষিত দেখা যায়। এ ছাড়া ধারণক্ষমতার চেয়ে তিন গুণ বেশি বন্দি থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

৩৪৪ জন ধারণক্ষমতার এ কারাগারে বর্তমানে ৯১০ জন বন্দি রাখা হয়েছে।


‘নথি খোয়া গেলেও বিচারে প্রভাব পড়ছে না’

নথি না থাকলেও আসামিদের বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে কারা সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের কাছে আসামির সঙ্গে শুধু একটি কাগজ আসে। মামলা বা বিচারিক সব নথিপত্র আদালতে এবং তদন্ত কর্মকর্তার কাছেই থাকে। সে অনুযায়ী বন্দিদের নথিগুলো পর্যায়ক্রমে পুনরায় সংযোজন করা হচ্ছে।”

“কখনও আদালত থেকে কোনো আসামিকে আমাদের কাছে চাইলে, আমরা তখন গিয়ে নাম ধরে ডাকি। ডাকার পর হয়তো দেখা গেল তিনি আছেন। সেক্ষেত্রে ফিরে আসার তালিকায় দেখা গেল একজন যোগ হলো, যিনি হয়তো অন্য একটা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন।

কারা সদর দপ্তরের ওই কর্মকর্তা বলেন, “তাই অফিসিয়ালি সংখ্যাটা একই রকম থাকলেও প্রতিনিয়ত ২-১ জন যোগ-বিয়োগ হয়। এমনও হতে পারে পলাতকদের কেউ অন্য কোনো মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে অন্য কারাগারে আছেন।”

পলাতকদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা এবং পরোয়ানা জারির বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক সৈয়দ মোতাহের হোসেন বলেন, “তারা চেষ্টা করছেন, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করছেন। তবে এখনও ধরা পড়েনি, তারা সার্চ করছে।”

পলাতকদের মধ্যে কাউকে আদালতে হাজির করতে বলা হলে কী জবাব দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা আদালতকে সুনির্দিষ্টভাবে বলছি,ওমুক দিন পালিয়ে গেছে। তাকে জেলপলাতক হিসেবেই দেখাচ্ছি।”


‘উদ্দেশ্যমূলক যোগসাজশ’ পায়নি অনুসন্ধান কমিটি


কারাগার থেকে যারা পালিয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে বেশকিছু জঙ্গিও রয়েছেন; যাদের সাজা হয়েছিল কিংবা বিচারাধীন ছিলেন। এর আগে আদালতে হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে এবং ঢাকার নিম্ন আদালত এলাকা থেকেও জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।

তবে সেসব ঘটনার সঙ্গে জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের সময় কারাগারে হামলা ও বিদ্রোহের কোনো যোগসূত্র পায়নি অনুসন্ধান কমিটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কারা অধিদপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “কারাগার থেকে আসামি বেরিয়ে যাওয়ার পর তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের। এর সঙ্গে কারাগারের নিরাপত্তার কোনো সম্পর্ক নেই।”

এমনকি এসব ঘটনার সঙ্গে কারা অভ্যন্তরের কোনো কর্মকর্তার ‘উদ্দেশ্যমূলক যোগসাজশ’ ছিল কি-না তাও নির্ধারণ করতে পারেনি অনুসন্ধান কমিটি।

কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, “কমিটি এমন কিছু পায়নি। বন্দিদের মধ্যে কার নেতৃত্বে এমন ধরনের ঘটনা ঘটেছিল সেটাও কারাগারের কমিটি নির্ধারণ করেনি।”

ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা এড়াতে অনুসন্ধান কমিটি যেসব সুপারিশ করেছেন এর মধ্যে ‘কাঠামোগত উন্নতি’ ও জনবল বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

কমিটি তিন স্তরের দেওয়াল স্থাপন করতে বলেছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, “যেখানে প্রথম ধাপের দেওয়ালটি থাকবে স্বচ্ছ, সেটি লোহার হতে পারে। যার মধ্য দিয়ে বাইরে থেকে দেখা যাবে। দ্বিতীয় ধাপে নিরাপত্তা দেওয়াল থাকবে এবং সর্বশেষ তৃতীয় ধাপের দেওয়ালটি সলিড থাকবে, অর্থাৎ সেটি হবে আরসিসি ঢালাইয়ের।

“যে ধরনের দেওয়াল তৈরি করতে বলেছে কমিটি, সেটি তাৎক্ষণিকভাবে সম্ভব নয়। এটি সময়সাপেক্ষ ও অনেক ব্যয়বহুল। তবে জনবল বাড়ানোর কথা বলেছে, সেটা হয়তো পর্যায়ক্রমে বাড়ানো সম্ভব হবে।”

কারা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, যেসব কারাগার হামলা-‘বিদ্রোহের’ ঘটনা ঘটেছে, তারা অভ্যন্তরীণভাবে তদন্ত কমিটি করেছে। সেসব তদন্ত কমিটি এসবের কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি কিছু সুপারিশও করেছে। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব কারণ ও সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন আকারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন মন্ত্রণালয় সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য পদক্ষেপ নেবে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শামীম খান বলেন, “কারা অধিদপ্তর থেকে প্রস্তাব এসেছে। আমরা এগুলো নিয়ে কাজ করছি। কারাগারগুলোকে আরো আধুনিক এবং সময়োপযোগী করার চেষ্টা অব্যাহত আছে।”

অধিকাংশ কারাগারেই ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ বেশি বন্দি রয়েছে। এসব বন্দিদের অনেকেই জামিনের অধিকার রাখেন। সে ধরনের আইনি প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া হলে কারাগারের কিছু চাপ কমত বলে মনে করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা।



Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন