
প্রিন্ট: ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৪:৪২ এএম
তেলের দাম বাড়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতি হুমকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২৫, ১১:১৪ এএম

পাল্টাপাল্টি হামলা শুরু হওয়ার পর বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছেই। দেশ দুটির এই সংঘাত বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধাক্কা। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত, বিশেষ করে হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতি ব্যারেল তেলের দাম ৯০ থেকে ১২০ মার্কিন ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। বাংলাদেশের মতো আমদানি নির্ভরশীল দেশগুলোকে এ ধরনের পরিস্থিতিতে আকাশচুম্বী আমদানি ব্যয় মেটাতে হতে পারে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমদানি তেলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল বাংলাদেশের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি ‘বিশ্ববাজারে পণ্যের দামের ব্যারোমিটার’ হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ খাতে মুদ্রাস্ফীতি হবে এবং পারিবারিক বরাদ্দেও ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।
মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, জ্বালানি উদ্বেগের পাশাপাশি ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা বিশ্ব বাণিজ্য ও সরবরাহ শৃঙ্খলকেও হুমকিতে ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে অব্যাহত উত্তেজনার ফলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সৃষ্টি হতে পারে। এর প্রধান কারণ হলো সারা বিশ্বে তেলের দাম বৃদ্ধি, বাণিজ্যিক রুট ব্যাহত হওয়া ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রবৃদ্ধির গতিপথকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
ড. সেলিম রায়হান বলেন, ক্রমবর্ধমান রপ্তানিমুখী অর্থনীতি হিসেবে বাংলাদেশ নির্বিঘ্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও স্থিতিশীল জ্বালানি মূল্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, তেল সরবরাহ শৃঙ্খল স্থিতিশীল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহকে ঘিরে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বব্যাপী তেলের দাম এরই মধ্যে বেড়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) উভয়ই রেকর্ড দাম বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নবনির্বাচিত সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, জ্বালানি ঘাটতির মধ্যেও পোশাকশিল্প তার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় মুখোমুখি হওয়া চ্যালেঞ্জের পরে মূল্যবৃদ্ধি বা সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার মতো আরেকটি ধাক্কা ভয়াবহ হতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ এবং বৈদেশিক মুদ্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস রেমিট্যান্সও সম্ভাব্য ঝুঁকির সম্মুখীন, যদিও সেটি পরোক্ষ ঝুঁকি।
যদিও সম্প্রতি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনরুদ্ধারে শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী অস্থিতিশীলতা এই অঞ্চলে লাখ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী কর্মীর কর্মসংস্থান এবং উপার্জনকে প্রভাবিত করতে পারে।