গাজীকে তো হত্যা করা হয়েছে জেলখানায় : শিকদার
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০৭ পিএম
ছবি-যুগের চিন্তা
যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, আমাদের সাংবাদিকতার আদি পিতাদের একজন হলেন কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২২ সালে যখন তিনি 'ধূমকেতু' বের করলেন, তখন সাংবাদিকতার খোলস তিনি পাল্টে দিলেন। এইজন্য বলা হয়, গণমুখী সাংবাদিকতার প্রতিকৃতি নজরুল।
তিনি বলেন, আর এই গণমুখী সাংবাদিকতার শেষ ব্যক্তিটা হলেন আমাদের রুহুল আমিন গাজী। তাকে তো হত্যা করা হয়েছে জেলখানায়। কারণ বিনা চিকিৎসায় একটা লোককে রাখা মানে তাকে খুন করতে চাওয়া। তো এই ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলো, সকালে সূর্য উঠলো, আমরা যখন পরস্পরের সঙ্গে বুক মেলাচ্ছি, আনন্দ করতেছি, উল্লাস করতেছি, সেই সময় রুহুল আমিন গাজী চলে গেলেন। যাই হোক, আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই।
যুগান্তর সম্পাদক বলেন, ফ্যাসিবাদ আমলে যখন পদ চুম্বন ও পদ লেহন সাংবাদিকতা চলেছে, সেখানে রুহুল আমিন গাজী অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে
ফ্যাসিবাদ বিরোধী লড়াইয়ের অগ্ৰনায়ক ছিলেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের ঐক্যের প্রতীক।
বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বিএফইউজে'র সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে ১৫-১৬ বছরের লড়াইটা আমরা করলাম, এই লড়াইয়ে সাংবাদিক সমাজের বিরাট অংশ পর্যুদস্ত হয়ে গেছিল দালালি, পদলেহন, পদচুম্বন সাংবাদিকতায়। আর একটা অংশ যারা চেষ্টা করেছে লড়াই করার জন্য, এই লড়াই যারা করতে চেয়েছেন তাদের একেবারে সামনের কাতারের একদম অগ্রনায়ক ছিলেন রুহুল আমিন গাজী।
আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আমাদের সাংবাদিক ইউনিয়নের মধ্যে গাজীর মত এরকম সাহসী মানুষ আগের জামানায় দুই একজনকে দেখেছি, কিন্তু এই পর্বে রুহুল আমিন গাজীর চাইতে সাহসী মানুষ আমি আসলে দেখিনি। আমরা সাংবাদিকতার ইতিহাস যখন লিখব, আমি সাংবাদিকদের শৌর্য-বীর্য নিয়ে কথা বলব, তাদের অহংকার নিয়ে কথা বলব, তখন নিশ্চয়ই রুহুল আমিন গাজীর নামটা উজ্জ্বলভাবে সেখানে প্রতিভাত হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কবি হাসান হাফিজ বলেন, সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজীর ত্যাগ, নিষ্ঠা ছিল বিরল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি যে আপষহীন ভাবে কাজ করে গেছেন তা সকলের অনুসরণীয়। তার জীবনী নিয়ে বের করা দরকার। তার মত নেতা বর্তমানে আমরা খুঁজে পাই না।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলার যে সাহস তা রুহুল আমিন গাজীর ভেতরে ছিলো। যার কারণে তাকে দীর্ঘদিন কারাবরণ করতে হয়ে। রুহুল আমিন গাজী ছিলেন দেশ ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপোষহীন। সাংবাদিকদের অধিকারে তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। যার কারণে শেখ হাসিনার রোষানলে পড়েছেন। উনার মতো ত্যাগি নেতা খুব কমই দেখি।
ঢাকা রিপোর্টারস ইউনিটির সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের রোষানলে পড়ে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী ১৭ মাস কারা বরণ করেছেন। তাকে ঠিক মতো চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। তার এ অকাল চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, রুহুল আমিন গাজী ভাইকে হত্যা করা হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে। তাকে চিকিৎসা না দিয়ে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন কারাগারে আটক রাখা হয়েছিলো। আমরা তার মুক্তি চেয়ে আন্দোলন করেছি, কিন্তু স্বৈরাচার সরকার আমাদের কথা মোনেননি। যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদের বিচার হয়েছে।
ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলমের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরোও বক্তব্য রাখেন , রুহুল আমিন গাজীর একমাত্র ছেলে আফফান আবরার আমীন, ঢাকা মেইলের নির্বাহী সম্পাদক হারুন জামিল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি এটিএম মহসিন, খাইরুল বাশার, উইমেন জার্নালিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক লাবিন রহমান, জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শাহনাজ পলি, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক দিদারুল আলম, বিএফ ইউজের দপ্তর সম্পাদক আবু বকর, ডিউজের সহ-সভাপতি রফিক মোহাম্মদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি আবু সালেহ আকন, ডিআরইউর সাবেক সভাপতি মোরসালিন নোমানী, ইলিয়াস হোসেন, ডিইউজের সাবেক সভাপতি সরদার ফরিদ আহমেদ, ডিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সৈয়দ আবদাল আহমেদ প্রমুখ।



