Logo
Logo
×

আইন-আদালত

পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক

৬৫ হাজার বেতনের কর্মকর্তার অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ

Icon

অনলাইন ডেস্ক :

প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:১১ পিএম

৬৫ হাজার বেতনের কর্মকর্তার অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ

মোহাম্মাদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মাকসুদুর রহমান।

স্ত্রী নাসরিন আক্তারের নামে ৩০ ভরি স্বর্ণের গহনা
৬টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার লেনদেন
বিকাশে অস্বাভাবিক লেনদেন
ঢাকায় কমপক্ষে ৬টি প্লট ও ফ্ল্যাট
গণঅভ্যুত্থানের পরেও আগের নিয়মেই একটি প্রতিষ্ঠান চলছে, দুঃখজনক : টিআইবি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) মতে, দেশের পাসপোর্ট অধিদপ্তর শীর্ষ দূর্নীতির খাতগুলোর একটি। এর সত্যতা প্রমাণ করেছেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ঢাকা পশ্চিম (মোহাম্মাদপুর) উপ-পরিচালক মাকসুদুর রহমান। মাত্র ৬৫ হাজার টাকা বেতন পেয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সাম্রাজ্য। ঢাকায় ফ্ল্যাট, গুলশান ও লালবাগের মত জায়গায় বেশ কয়েকটি প্লট কিনেছেন নামে-বেনামে। স্ত্রীর নামে করেছেন ৩০ ভরির বেশি গহনা। আলাদিনের চেরাগ পেয়েছেন যেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের চাকরি পেয়ে। আর এসবই সম্ভব হয়েছে তার পরিচালিত দালাল চক্রের মাধ্যমে।

সম্প্রতি একটি অভিযোগ আসে মোহাম্মাদপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সংক্রান্ত। অভিযোগে বলা হয়, টাকার বিনিময়ে সবধরণের সেবা মিলে পাসপোর্ট অফিসে। টাকা না দিলে হতে হয় হয়রানির শিকার। ৫ আগস্টের পরে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতার পাসপোর্ট তৈরি ও নবায়ন করে দেন উপ-পরিচালক মাকসুদুর রহমান। বিনিময়ে নেন লাখ লাখ টাকা। অভিযোগের সত্যতা জানতে সম্প্রতি সরেজমিনে মোহাম্মাদপুর পাসপোর্ট অফিসে অনুসন্ধানে দেখা যায়, পাসপোর্ট করতে সাধারণ জনগণের দীর্ঘ লাইন। কিন্তু এরই মাঝে কেউ কেউ সরাসরি আবেদন নিয়ে নির্বিঘ্নে কাজ শেষ করে বের হয়ে গেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এরা সবাই দালাল ধরে পাসপোর্ট করতে এসেছে। যারা দালাল ধরেননি তারাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে সেবা নিচ্ছেন।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায় রিঙ্কু, তারিক, সাব্বির, জুয়েল রানা, আশরাফুল, নিরব, হাসান, ও নাজমুল নামের দালালদের মাধ্যমে একটি চক্র গড়ে তুলেছেন মাকসুদুর রহমান। এসব দালালদের সাথে যোগাযোগ না করে কেউ সহজে নিয়মমাফিক পাসপোর্ট করতে পারছেন না। সরকারি ফি এর বাইরে পাসপোর্ট প্রতি ২ থেকে ৩ হাজার টাকা করে নিচ্ছে এই দালাল চক্র। তারিক ও সাব্বিরের সঙ্গে গ্রাহক পরিচয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানান, পাসপোর্ট সংক্রান্ত যেকোনো কাজ তারা করে দিবে। যত ঝামেলাই থাকুক তারা পাসপোর্ট করে দিবে ‘প্রিমিয়াম সার্ভিস’ দিয়ে। হত্যা মামলার আসামি হলেও কোনো সমস্যা নেই। কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে তারিক জানান, সমস্যাগুলো কী কী সেইটার উপরে নির্ভর করবে টাকার অংক।

এসব দালালদের সহযোগিতাতেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন মাকসুদুর রহমান। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের এ উপ-পরিচালক থাকেন কোটি টাকা মূল্যের নিজস্ব ফ্ল্যাটে। ব্যবহার করেন ঢাকা মেট্রো চ- ২০৬২৩২ নাম্বারের নিজস্ব দামি গাড়ি। তার স্ত্রী নাসরিন আক্তারের নামে রয়েছে বেশ কয়েকটি প্লট ও বাড়ি। স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি টাকার লেনদেনের তথ্যপ্রমাণও রয়েছে এনপিবির হাতে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, নাসরিন আক্তারের জাতীয় পরিচয়পত্রের নামে রয়েছে ৫টিরও বেশি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট। যার মধ্যে ঢাকা ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট। এসব হিসাবে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়ে থাকে।

এছাড়া লালবাগ থানার দক্ষিণ সোনা টেংগর মৌজায় ৩.৩৩ ও ৭.৩৮ শতাংশের জমি। ক্যান্টনমেন্ট থানার লালসরাই ৭ মৌজায় ৩.৯৬ শতাংশ, জোয়ার সাহারায় ৪.১৪ ও ৫.৩৯ শতাংশ ও গুলশান থানার ডুমনি মৌজায় ৪.৯৫, ৪.৯০ ও ৯.৯০ শতাংশের মূল্যবান জমি।

একজন উপ-পরিচালক মানের কর্মকর্তা চাকরি করে এত সম্পদ গড়তে পারেন কি না জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অসম্ভব। শুধুমাত্র বেতনের টাকা দিয়ে একজন কর্মকর্তা কখনোই এসব সম্পদ গড়ে তুলতে পারেন না।

এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় অভিযুক্ত উপ-পরিচালক মাকসুদুর রহমানের সঙ্গে। সম্পদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, এসব কোনো সম্পদ তার এবং তার স্ত্রীর নয়। জমিগুলোর খাজনা প্রদানে তার স্ত্রীর পরিশোধ করার তথ্য জানালে তিনি দম্ভ করে বলেন, আপনি সাংবাদিক যা পারেন লিখেন।’ এই বলে তিনি ফোন কেটে দেন। এরপরে ফোন দেওয়া হলেও তিনি আর রিসিভ করেননি।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এদিকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন শিহাব উদ্দিন খানকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এবিষয়গুলো তার মন্তব্য করার ক্ষমতা নেই। মহাপরিচালককে ফোন করার পরামর্শ দেন।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদপ্তরে দূর্নীতি যেন নিয়ম। ম্যানেজমেন্টও খুব একটা কেয়ার করেন বলে মনে হয় না। এদের বিরুদ্ধে কোনো শক্ত ব্যবস্থা নিতেও দেখিনি। এভাবে পাসপোর্ট অধিদপ্তর কতদিন চলবে জানি না। গণঅভ্যুত্থানের পরেও আগের নিয়মেই একটা প্রতিষ্ঠান চলছে সেটা সত্যিই দুঃখজনক।’

দুদকের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র আক্তার হোসেন বলেন, ‘আমাদের কাছে যেসব অভিযোগ আসে সেসব বিষয়ে আমরা অনুসন্ধান করি। ইদানীং অনেক অভিযোগ আসছে তাই একটু ধীরগতিতে আগাতে হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করলে সেই সূত্র ধরেও আমরা অনুসন্ধান করি। কারো বিরুদ্ধে দূর্নীতি বা অনিয়মের প্রমাণ পেলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। এক্ষেত্রেও তাই হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন