শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা–গুম–দুর্নীতি মিলিয়ে ৬৬৩ মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১২ পিএম
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে সারা দেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে মোট ৬৬৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১৭টি হত্যা মামলা। গুম, নির্যাতন ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গত ২৫ জুন পর্যন্ত হয়েছে ২৭টি মামলা। দুর্নীতির অভিযোগে দুদক করেছে আরও ১৪টি মামলা।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই–আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সারাদেশে মোট ১ হাজার ৬০২টি মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে ৫৯৯টি হত্যা মামলা। বাকি ১ হাজার ৩টি বিভিন্ন ধরনের ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগে। এসব মামলার মধ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ৬৬৩টি মামলা অন্তর্ভুক্ত।
এর মধ্যে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জে ১৫৬টি, চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৪টি, খুলনা রেঞ্জে ৩টি, বরিশাল রেঞ্জে ১টি, রাজশাহী রেঞ্জে ১৪টি, রংপুর রেঞ্জে ৬টি মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মামলা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশে—মোট ৪৫৩টি। চট্টগ্রাম মহানগরে ৮টি, বরিশালে ১টি, গাজীপুরে ১০টি, রাজশাহীতে ৪টি এবং সিলেট মহানগরে ৩টি মামলা রয়েছে।
এদিকে, দুর্নীতি দমন কমিশন শেখ হাসিনা, তার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৪টি মামলা করেছে—যার মধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে অনিয়ম করে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত ৬টি মামলার বিচারকাজ চলছে। একাধিক মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের দিন ধার্য রয়েছে। দুদক সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে নতুন আরও কয়েকটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত মামলাগুলোতে শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে যুক্তরাজ্যের এমপি টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিও আসামি। একই সঙ্গে শেখ রেহানার দেবর ও শেখ হাসিনার সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল–১ সারা দেশে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে পতনের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়েন এবং সেদিনই ভারতে চলে যান। ১৫ আগস্ট ঢাকায় তার বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয়। এরপর বিভিন্ন জেলায় একের পর এক মামলা যুক্ত হতে থাকে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের কাছে রেড নোটিশের আবেদন পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডাদেশের পর এবার তার নামে ‘কনভিকশন ওয়ারেন্ট’ পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক রেড নোটিশ জারির প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।



