ছবি : সংগৃহীত
জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম শুরু হয়। ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ে ছয়টি অংশ রয়েছে। প্রথমে রায়ের অংশ পড়েন ট্রাইব্যুনালের প্রধান বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার। পরে বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী রায়ের বিভিন্ন অংশ পড়ে শোনান।
রায়ে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং অন্য দুটি অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ ছিল, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা।
এই মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য দুই আসামি ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। মামুন ছিলেন একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি এবং তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় প্রথম মামলা দায়ের হয়। গত বছরের ১৭ অক্টোবর এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে এ বছরের মার্চে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও সাবেক আইজিপিকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়— উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া, হেলিকপ্টার-ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের হত্যার নির্দেশ, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যায় সম্পৃক্ততা, রাজধানীর চাঁনখারপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যা এবং আশুলিয়ায় ছয়জনকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ।
মামলায় মোট ৫৪ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন, যার মধ্যে আন্দোলনকারীরা, আহত ব্যক্তি, প্রত্যক্ষদর্শী ও চিকিৎসকরা ছিলেন। এছাড়া শেখ হাসিনার কথোপকথনের অডিও-ভিডিও, গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও জব্দ করা গুলি প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।
গত ১২ অক্টোবর যুক্তি-তর্ক শুরু হয়ে ২৩ অক্টোবর শেষ হয়। ওইদিন চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম ও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।



