মানবতাবিরোধী অপরাধ
তৃতীয় দিনের মতো তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করবেন শেখ হাসিনার আইনজীবী
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ১১:২১ এএম
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
জুলাই–আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো বুধবার (৮ অক্টোবর) জেরা করবেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ জেরা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনের জেরা শেষ করেন ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যে উত্থাপিত জুলাই গণহত্যা–সংক্রান্ত বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে আসামিপক্ষের পক্ষে বিভিন্ন সাফাই প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, আন্দোলন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়েই গুলি চালিয়েছিলেন—যা হত্যাযজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। তবে দিনব্যাপী জেরা শেষ না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আজ পর্যন্ত মুলতবি রাখে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, গাজী এমএইচ তামিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ান, তারেক আবদুল্লাহ ও মামুনুর রশীদ।
এর আগে গত ৬ অক্টোবর এই জেরা শুরু হয়। ৩০ সেপ্টেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্য দেন। তিনি এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ৫৪তম ও সর্বশেষ সাক্ষী। জবানবন্দিতে তিনি জানান, গত বছরের জুলাই আন্দোলনের সময় ৪১টি জেলার ৪৩৮টি স্থানে হত্যাকাণ্ড এবং ৫০টির বেশি জেলায় মারণাস্ত্রের ব্যবহার ঘটে।
২৯ সেপ্টেম্বর দ্বিতীয় দিনের জবানবন্দিতে তিনি যমুনা টেলিভিশনের ‘জুলাই আন্দোলনের নৃশংসতা’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন ভিডিও প্রমাণ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে বহু মানুষ নিহত হন, এবং পুরো আন্দোলন চলাকালে ৩ লাখ ৫ হাজার গুলি ছোড়া হয়। তাঁর সাক্ষ্য সরাসরি সম্প্রচার করা হয় বাংলাদেশ টেলিভিশনে, পাশাপাশি বিবিসি, আল-জাজিরা ও আমার দেশ প্রকাশিত প্রামাণ্যচিত্রও ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শিত হয়।
২৮ সেপ্টেম্বর আলমগীরের জবানবন্দি শুরুর দিন ট্রাইব্যুনালে ১৭টি ভিডিও প্রদর্শিত হয়, যেখানে জুলাই–আগস্টের সহিংসতার দৃশ্য তুলে ধরা হয়।
সব মিলিয়ে ২৫ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। শেষ সাক্ষীর জেরা শেষ হলে মামলাটি যুক্তিতর্ক ও রায়ের পর্যায়ে যাবে।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। মামলাটিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মোট পৃষ্ঠাসংখ্যা ৮,৭৪৭।
এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে ৮১ জনকে। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা গত ১২ মে মামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয় চিফ প্রসিকিউটরের কাছে।



