তালতলীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৮১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৪:৩৪ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
দুই বছর আগে বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে হামলা, অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ও সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনু, আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মতিয়ার রহমান ও চার ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১০১ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
এছাড়া আরও ৭০ থেকে ৮০ জনকে অজ্ঞাত পরিচয় আসামি করা হয়। বৃহস্পতিবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ সগির হাওলাদার বাদী হয়ে এ মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতের বিচারক মো. ইফতি হাসান ইমরান মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা জেলা গোয়ান্দা পুলিশের ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে ওই মামলায় বিএনপি, যুবদল ও কিছু নিরিহ মানুষতে আসামী করা হয়েছে। এতে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানাগেছে, ২০২৩ সালের ৮ এপ্রিল বিকালে উপজেলা শহরের মালিপাড়া আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে বিএনপি কর্তৃক আয়োজিত ইফতার পার্টি চলাকালে সকল আসামিরা ককটেল, ধারালো রামদা, ছেনা, লোহার রড, চাইনিজ কুড়াল, লাঠিসোঠা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারধর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অনুষ্ঠানে থাকা চেয়ার, টেবিল, প্যান্ডেল পুড়ে ফেলে। পরে মাঠের পাশে অবস্থিত বিএনপির অফিসে ঢুকে চেয়ার, টেবিল, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি পিটিয়া ভেঙ্গে ফেলে একপর্যায়ে বিএনপির অফিসে আগুন দিয়ে পুড়ে দেয়। এছাড়াও বিএনপির অফিসের সামনে রাখা নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের মটরসাইকেলে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। এতে ১৯ লাখ টাকাসহ সরকারি রাস্তার ক্ষতির এমন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা হয়েছে।
এ মামলায় তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার, উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনু, উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি স্বপন জোমাদ্দার, উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু, আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মো. মতিয়ার রহমান, পৌর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমান, নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান বাচ্চু, কড়াইবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম শিকদার পনু, পঁচাকোড়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার, আমতলী সদর ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম মিঠু মৃধা ও বেশ কিছু নিরিহ মানুষসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আদালতের বিচারক মোঃ ইফতি হাসান ইমরান মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী তালতলী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ছগির হাওলাদার বলেন, ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনার দোসররা গত ১৫ বছর সাধারণ মানুষ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। তাদেরকেই বিএনপি অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলায় আসামী করা হয়েছে।
এখানো কোন সাধারণ মানুষ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়নি।
তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করতেই এ মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি সাবেক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, তালতলীর ঘটনায় আমাকে হয়রানী করতেই আসামী করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমিসহ আমতলীর তিনজনতে এ মামলায় অহেতুক জড়ানো হয়েছে।
তালতলী উপজেলা সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক বলেন, মামলায় কিছু বিএনপি, যুবদল ও সাধারণ মানুষকে আসামী করা হয়েছে। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক।
তালতলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম হক বলেন, সত্য ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। তবে কিছু নিরিহ মানুষ আসামী করায় মামলাটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
আমতলী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পেশকার মো. কামাল হোসেন বলেন, আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বরগুনা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মো. ইকরাম হোসেন বলেন, আদালতের নথিপত্র পাইনি। নথিপত্র পেলে আদেশ মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



