
প্রিন্ট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৯ এএম
ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ অক্টোবর

নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম

ছবি - সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার তারিখ পড়েছে আগামী ১৫ অক্টোবর।
ট্রাইব্যুনাল-১ চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারকের বেঞ্চ রোববার এ আদেশ দেয়। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন এমএইচ তামিম। প্রধান কৌঁসুলি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তিন মাস সময় চাইলে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৫ অক্টোবর ঠিক করে দেয়।
এ মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সাবেক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী, সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক এমপি সোলায়মান সেলিম, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলম।
তাদের মধ্যে আনিসুল হক, দীপু মনি, আমির হোসেন আমু, হাসানুল হক ইনু, সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
পরে কৌঁসুলি এমএইচ তামিম বলেন, এ মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য প্রসিকিউশন তিন মাসের সময় প্রার্থনা করলে ট্রাইব্যুনাল তা মঞ্জুর করেন। আগামী ১৫ অক্টোবর এ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন রেখেছেন।
কারাগারে ভয়েস রেকর্ড : ইনুর শঙ্কা ষড়যন্ত্রের
ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি ট্রাইব্যুনালকে বলেন, কারাগারে তার ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের অনুমতি ছিল কিনা তিনি জানেন না।
এটি ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন ইনু। এরপর তার আইনজীবী আবুল হাসানও ট্রাইব্যুনালকে বিষয়টি অবগত করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কারাগারে ইনু সাহেবের ভয়েস রেকর্ড করতে গেলে তিনি আদালতের পারমিশন দেখাতে বলেন; কিন্তু সেরকম কিছু দেখানো হয়নি।
“এখন তো ভয়েস রেকর্ড নিয়ে নানা ঘটনা হচ্ছে। তাই তিনি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা. সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।” পরে অবশ্য আইনজীবী আবুল হাসান স্বীকার করেছেন, এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের আদেশ আছে।
এ বিষয়ে কৌঁসুলি এমএইচ তামিম বলেন, “তদন্তের জন্য তার ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে। আপনারা জানেন, অন্য কোনো জায়গা থেকে পাওয়া ভয়েস পরীক্ষা করার জন্য তার ভয়েস মেলাতে হয়।
“তাই ভয়েস রেকর্ড করা হয়েছে। এ বিষয়ে আগেই ট্রাইব্যুনালের পারমিশন নেওয়া হয়েছে।”
‘প্রয়োজনে স্বজনের বক্তব্য শুনব’
হাসানুল হক ইনু ট্রাইব্যুনালে কথা বলতে চাইলে প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বাধা দিয়ে তা আদালতের সময় নষ্ট বলে উল্লেখ করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার প্রধান কৌঁসুলিকে থামিয়ে দেন।
তিনি বলেন, “আমরা তাদের কথা শুনব। তার আইনজীবীর বক্তব্য, তার বক্তব্য, প্রয়োজনে তার আত্মীয়-স্বজনদের বক্তব্যও শুনব।”
গত ২০ এপ্রিল প্রধান কৌঁসুলি এম তাজুল ইসলাম শুনানিতে বলেছিলেন, এই মামলায় ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গত ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল ট্রাইব্যুনাল। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের’ সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ মিলেছে।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। এখন ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে এ আদালতে বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
গত ৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে সারা দেশে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের’ অর্ধশতাধিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন অফিসে জমা পড়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও তার সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাহিত্যিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের অনেককে সেসব মামলার আসামি করা হয়েছে।