
প্রিন্ট: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০৯ এএম
প্রধান বিচারপতির বিচার বিভাগের স্বাধীন অস্তিত্ব নিশ্চিতের আহ্বান

অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম

ছবি-সংগৃহীত
বিচার বিভাগের অর্থবহ ও টেকসই স্বাধীন অস্তিত্ব নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার ও জাতির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তিনি বলেন, তা না হলে জাতি হিসেবে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পদ্ধতিগত দৃঢ়তা নিশ্চিতের ঐতিহাসিক সুযোগ ঝুঁকিতে পড়তে পারে। সেই সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাবিত খাতভিত্তিক অন্যান্য সংস্কারের স্থায়িত্ব অদূর ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
আজ বৃহস্পতিবার ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে ‘দ্য ইশতিয়াক সেন্টার’ ওই স্মরণসভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘মাসদার হোসেন মামলা: ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের শেষ লড়াই—জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে এক মৌলিক পুনর্বিবেচনা’ প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
নিজের ঘোষিত গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর রোডম্যাপের গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগগুলো সক্রিয়ভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। এর মধ্যে অন্যতম বিচার বিভাগের জন্য একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন,‘এটি হলো প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বায়ত্তশাসন অর্জনের পথে একটি ভিত্তিগত পদক্ষেপ। বারবার যে কথা জোর দিয়ে বলেছি, তা হলো ন্যায়বিচার ধার করা অবকাঠামো বা অর্পিত কর্তৃত্বের ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে পারে না, এটি নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। এই সচিবালয় বিচার বিভাগকে বিচারিক নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের ক্ষমতা দেবে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান বলেন, দেশের আইন অঙ্গনে, এই প্রতিষ্ঠানের উন্নতি ও সুরক্ষায় সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ছিলেন একজন ভ্যানগার্ড।...এরশাদ পতনের সময় তিনটি রাজনৈতিক জোট যখন গভীর সংকটে নিপতিত হয়,বাংলাদেশে এই সাংবিধানিক সংকট উত্তরণের জন্য করণীয় কী আছে? সংবিধানে কোনো বিধান নেই। তখন ইশতিয়াক ফর্মুলা সামনে আসে।...ইশতিয়াক ফর্মুলা ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের মানুষকে সংবিধানের আলোর পথ দেখিয়েছিলেন। ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদ বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য।
অ্যাটর্নি জেনারেল মো.আসাদুজ্জামান আরও বলেন, ‘আমি সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। নির্দেশনা নিয়েছি। পৃথক সচিবালয় চাই। তবে ক্ষমতার ভারসাম্য এখানে প্রয়োজন। গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই।’
ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ আইনজীবীর চেয়ে বেশি কিছু ছিলেন উল্লেখ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘তিনি দেশের বিচার বিভাগের স্বাধীনতার একজন স্থপতি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে সুপ্রিম কোট ভাগ করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে একজন আইনজীবী ও আইনজীবী নেতা হিসেবে সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদের অবস্থান ছিল দৃঢ়। কয়েক দিন আগে শুনেছি, বিচার বিভাগকে খণ্ডবিখণ্ড করে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশনা ইমামের সঞ্চালনায় স্মরণ অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইনজীবী আরিফ খান। অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী, নিহাদ কবির ও মুস্তাফিজুর রহমান খান আলোচনায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ব্যারিস্টার সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। ইশতিয়াক আহমেদের ছেলে বর্তমান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। প্রথিতযশা এই আইনজীবী ২০০৩ সালের ১২ জুলাই ইন্তেকাল করেন। সূত্র : প্রথম আলো