ছবি-সংগৃহীত
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, “দৈনিক মানবজমিনে ৪ অক্টোবরের সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন’ এই শিরোনামের শেষভাগে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।
যা দেশের প্রশাসনিক নৈতিকতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮০ কোটি টাকার লেনদেন। যার অর্ধেক যাওয়ার কথা ছিল ‘একটি বিশেষ স্থানে’ এবং বাকি অংশ তৃতীয় পক্ষের হাতে।
এই বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে হতো না; শুধু বাণিজ্যিক কারসাজিতে সম্মতি জানালেই হতো।”
রবিবার (৫ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘ওই প্রতিবেদনে আরো ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই টাকার একাংশের সঙ্গে নাকি যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নাম। যেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন প্রফেসর ইউনূস।
সরাসরি কিছু বলা না হলেও এই ইঙ্গিতই এখন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতির এই আলোচনায় কেন বা কিভাবে তার বাসভবনের নাম জড়াচ্ছে? এই দুর্নীতির প্রসঙ্গটি শুধু একটি রিপোর্টের অংশ নয় বরং এটি দেশের নীতি-নৈতিকতার এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। প্রফেসর ইউনূস যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তার ঠিক উল্টো চিত্রই ফুটে উঠেছে প্রতিবেদনের এই অংশে।’
মাসুদ কামাল উল্লেখ করেন, ‘ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রফেসর ইউনূস হয়তো জানেন না, আজকাল আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে।
অর্থাৎ চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের আলোচনায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নামও আসছে।’
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য ৮০ কোটি টাকার লেনদেনের প্রস্তাব উঠেছিল। বলা হয়েছে, নিয়োগ সম্পন্ন হলে ৪০ কোটি টাকা যাবে একটি বিশেষ স্থানে, আর বাকি ৪০ কোটি পাবে তৃতীয় পক্ষ। যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তাকে কোনো কাজই করতে হবে না—শুধু বাণিজ্যের কারসাজিতে সম্মতি জানালেই হবে। তবে প্রশাসনিক ক্যাডারের ওই শীর্ষ কর্মকর্তা আখেরের কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রাজি হননি।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘৮০ কোটি টাকার ওই দুর্নীতির প্রস্তাবের একাংশ একটি বিশেষ জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, যার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নামও যুক্ত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—যেখানে বর্তমানে প্রফেসর ইউনূস থাকেন, সেই বাসভবনের নামও যদি এই দুর্নীতির আলোচনায় আসে তবে কি তার সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতা আছে? প্রতিবেদনে সরাসরি কিছু না বললেও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূসের বাসভবনের নামও আজকাল দুর্নীতির প্রসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ যাদের দায়িত্ব দিয়েছে তারা জনগণের অধিকারকেও নিলামে তুলছেন। গণ-অভ্যুত্থানের সুফল ভোগ করা উচিত ছিল সাধারণ জনগণের, কিন্তু এখন তা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।’
মাসুদ কামাল বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানাই, এই সরকারের বিদায়ের পর যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কর্মকাণ্ড তদন্ত করার আগে বিদেশে যাওয়া নিষেধাজ্ঞা করতে হবে। বিচারের প্রক্রিয়া অনুসারে দায়ীদের দায়মুক্ত করা বা শাস্তি প্রদান করা উচিত। যারা নির্দোষ প্রমাণিত হবেন তাদের নির্বিঘ্ন দেওয়া উচিত। তারা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারে, প্রয়োজন হলে তাদের পাসপোর্ট জব্দসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনরোধ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘যারা আন্দোলনের পরে বড় দায়িত্ব নিয়েছেন তাদের সম্পর্কে আমাদের মধ্যে সন্দেহ কেন তৈরি হচ্ছে। যাদের ওপর বড় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ড যদি সন্দেহাতীত না থাকে তবেই আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারি; কিন্তু বর্তমানে তাদের কাজ যেন সন্দেহেরও ঊর্ধ্বে। এটি আমাদের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ।’ সূত্র : কালেরকণ্ঠ



