অতিরিক্ত ফোন আসক্তি ঘুম কেড়ে নিচ্ছে বাংলাদেশি তরুণদের : গবেষণা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
বাংলাদেশের উচ্চমাধ্যমিক পাস করা তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিমাত্রায় যুক্ত থাকা এবং ঘুমের মানের অবনতি—এই দুইয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলে নতুন করে প্রমাণ মিলেছে। ‘নেচার অ্যান্ড সায়েন্স অব স্লিপ’ জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য, ডিজিটাল আচরণ ও ঘুমের সমস্যার পারস্পরিক যোগসূত্র নিয়ে নতুন আলো ফেলেছে।
মার্শাল ইউনিভার্সিটির জোয়ান সি. এডওয়ার্ডস স্কুল অব মেডিসিন, চিন্তা রিসার্চ বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়া ইউনিভার্সিটি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রিন্সেস নূরা বিনতে আবদুর রহমান ইউনিভার্সিটির যৌথ গবেষক দল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতিপর্বে থাকা ১,১৩৯ জন শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করে এ ফলাফল তুলে ধরেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির মাত্রা যত বাড়ে, ঘুমের মান ততই খারাপ হয়। ‘রিল্যাপ্স’—অর্থাৎ ঘুম ভেঙে যাওয়া ও আবার ঘুমোতে সমস্যা—এবং ‘দিবাকালীন কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া’কে তারা ঘুমের ব্যাঘাতের সবচেয়ে শক্তিশালী সূচক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যা অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
গুরুত্বপূর্ণ লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্যও সামনে এনেছে গবেষণা। এতে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসক্তির কারণে নারী শিক্ষার্থীদের ঘুমের ক্ষতি বেশি হয়; অন্যদিকে পুরুষ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসক্তির হার তুলনামূলক বেশি। যা ইঙ্গিত করে, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের মানসিক-শারীরিক প্রভাব নারী-পুরুষের জীবনে ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়।
নেটওয়ার্ক বিশ্লেষণে গবেষকেরা তিনটি সাধারণ উপসর্গ শনাক্ত করেছেন, যেগুলো ডিজিটাল আচরণ ও ঘুমের স্বাস্থ্যকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে—‘মুড মডিফিকেশন বা মানসিক অবস্থার পরিবর্তন’, ঘুমোতে যেতে দীর্ঘ সময় লাগা (স্লিপ ল্যাটেন্সি) এবং ‘দিনের কাজে দক্ষতা হ্রাস।’
গবেষণা দলের অন্যতম সদস্য ডেভিড গোজাল বলেন, ফলাফলগুলো দেখায় যে ঘুমের অবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আচরণ গভীরভাবে আন্তঃনির্ভরশীল। মার্শাল ইউনিভার্সিটির স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভাগের উপ-প্রধান এবং জোয়ান সি. এডওয়ার্ডস স্কুল অব মেডিসিনের ডিন গোজাল আরও জানান, তরুণদের সুস্থ ডিজিটাল অভ্যাস ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করতে এখন লক্ষ্যভিত্তিক হস্তক্ষেপ জরুরি।
গবেষণা নিবন্ধটি সোশ্যাল মিডিয়ার দীর্ঘমেয়াদি মানসিক-শারীরিক প্রভাব নিয়ে বৈজ্ঞানিক আলোচনাকে আরও এগিয়ে নিয়েছে। পাশাপাশি তরুণদের সুরক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রতিরোধমূলক উদ্যোগ এবং লিঙ্গসংবেদনশীল নীতির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।



