Logo
Logo
×

শিক্ষা

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ব্যণিজ্য

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৫, ১১:৩৩ এএম

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ব্যণিজ্য

ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশনা ২ নম্বরেরর ৮৬ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাড়িটির মালিক ক্যামব্রিয়ান গ্রুপের কর্ণধর লায়ন্স মো. খায়রুল বাশার বাহার। ২ বেইজমেন্টসহ ১০ তলা এই অট্টালিকাটি নির্মাণ করেছেন ২০২৩ সালে। শুধু এই প্রসাদসম বাড়িটিই নয় দেড় যুগে ১ হাজার ১০৬ শতক জমি কিনেছেন লায়ন্স মো. খায়রুল বাশার বাহার। এসব জমির মৌজা ভিত্তিক ক্রয় মূল্য ১০২ কোটি টাকার বেশি হলেও বাস্তবে বাজার মূল্য দশ গুণেরও বেশি। এছাড়া নামে বেনামে ফ্ল্যাট, গাড়ি, ব্যাংকের নগদ অর্থসহ সবমিলে ১৮ কোটি টাকার অস্বাভাবিক সম্পদের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বড় হয়েছে, অন্যদিকে ফুলেফেঁপে উঠেছে খায়রুল বাশারের সম্পত্তি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৭১ সালের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার দরুইন গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মাণবাড়িয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ শেষে ঢাকা কমার্স কলেজ ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন তিনি। পরে বিদেশে উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কনসালট্যান্সির অনুমতি নিয়ে ২০০৩ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে বিএসবির কার্যক্রম শুরু করেন খায়রুল বাশার। অ্যাওয়ার্ড ফর আউটস্ট্যান্ডিং কন্ট্রিবিউশন ইন এডুকেশনসহ অন্তত দুই ডজন এ্যাওয়ার্ড রয়েছে খায়রুল বাশারের ঝুলিতে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েও নিজেকে অন্যন্যা ভূমিকায় আবির্ভূত করেছেন তিনি। তবে এসবই ছিল প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কৌশল মাত্র। বর্তমানে তিনি বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, বিএসবি ট্রাভেলস, বিএসবি ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব এবং বিএসবি ইভেন্ট এ্যান্ড এক্সপো ম্যানেজমেন্টের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ লায়ন্স ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ও লায়ন্স ক্লাব অব ঢাকা ইমপিরিয়ালের সাবেক প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে তিনি লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল ৩১৫ এ-২ এর দ্বিতীয় ভাইস জেলা গর্ভনর।

ক্যামব্রিয়ান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবাল নেটওয়ার্কের বিদেশে উচ্চ শিকার নামে শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাতের মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এসব সম্পদের খোঁজ পেয়েছে সিআইডি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। সিআইডির তদন্তে বিএসবির একটি সম্পদের বিবরণীতে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. খায়রুল বাশার বাহারের নামে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার চরনারায়নপুর ও ভবানীপুর মৌজায় ১৪টি জমি রয়েছে। এছাড়াও বিএসবি ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে ৯টি জমি রয়েছে। দুটি মৌজায় থাকা এসব জমির পরিমাণ ১ হাজার ১৬ শতাংশ যার দলিল মূল্য দেখানো হয়েছে ১০২ কোটি ৬১ লাখের বেশি। যার বাজার মূল্য অন্তত ৬ শতকোটি টাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব জমি কেনা হয়েছে ২০০৪ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে। এছাড়াও রাজধানীর গুলশানে খায়রুল বাশারের নামে দশ তলা একটি ভবনের তথ্য রয়েছে। পাশাপাশি ভাটারার শহীদ আব্দুল আজিজ সড়কে একটি আটতলা ও ছয় তলা ভবন রয়েছে বাশারের মালিকানায়। বারিধারার জে ব্লকের ৩ নম্বর বাড়িতে তিনটি ফ্লাট ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রয়েছে বড় অংশের জমি।

ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার্থীদের পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্যক্রম সম্পন্ন না করে অর্থ আত্মসাৎ করে প্রতিষ্ঠানটি। এমন ১৪১ জন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছে সিআইডি। এর বাইরেও ৫ শতাধিক সেবা প্রত্যাশী বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে অর্থ দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তাদের অভিযোগ তদন্তে গিয়ে খায়রুল বাশারের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। সংস্থাটির হিসেব অনুযায়ী, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মেট্রোপলিটন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিংস স্কুল, কিংস কলেজ, মাদরাসাতু সালেহা খাতুন, উইনসাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কালচারাল একাডেমি, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ সেন্টার, ক্যামব্রিয়ান ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব এভিয়েশন, ক্যামব্রিয়ান টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, ক্যামব্রিয়ান স্পোর্টস একাডেমি গড়ে তুলেছেন তিনি। এছাড়া (প্রস্তাবিত) ক্যামব্রিয়ান ইউনিভার্সিটির অন্যতম উদ্যোক্তা তিনি। তার সহধর্মিণী লায়ন খন্দকার সেলিমা রওশন ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এ দম্পতির তিন কন্যা বুশরা আরাবি, সারা আরাবি ও বাশারা আরাবি। 

বিএসবি গ্লোবালে মাধ্যমে প্রতারণা শিকার হওয়া ভুক্তভোগী লিমা আক্তার জানান, তার মেয়ে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। মেয়েকে নিয়ে বাইরের দেশে স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অনেক আগে থেকে। হঠাৎ করে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জানানো হয়, তার মেয়ে আমেরিকায় স্কুলিং ভিসার মাধ্যমে পড়াশোনার স্কলারশিপ পেয়েছে। মা লিমা আক্তারও মেয়ে সঙ্গে আমেরিকায় যেতে পারবেন। দ্রুত যোগাযোগের জন্য বলা হয় স্কুলের হেড অফিসে। স্কুলের হেড অফিস থেকে লিমা ও তার মেয়েকে পাঠানো হয় ক্যামব্রিয়ান স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খায়রুল বাশার পরিচালিত প্রতিষ্ঠান বিএসবি গ্লোবালে। সেখানে এক আমেরিকান নাগরিকের উপস্থিতিতে আয়োজন করা হয় একটি তথাকথিত শুভেচ্ছা অনুষ্ঠান।

সিআইডির ফিন্যন্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, অনুসন্ধানে মো. খায়রুল বশার ও তার প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে তাদের আর্থিক লেনদেন ও সম্পদের তথ্য নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া অবৈধ সম্পদের তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে এসব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ক্ষতিগ্রস্থ ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন