
প্রিন্ট: ১১ জুন ২০২৫, ০৮:৩০ এএম
কুয়েট উপাচার্য অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫১ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে তাঁরা দিয়েছেন ২৪ ঘণ্টার সময়সীমা—যা পূরণ না হলে আগামী সোমবার (২১ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে তারা আমরণ অনশনে বসবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার প্রাঙ্গণে এক জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (EEE) বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৈকত এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (IEM) বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী উপল।
শিক্ষার্থী উপল বলেন, “আমরা ঈদের পরে আলোচনায় যেতে প্রস্তুত ছিলাম। প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছি যেন হল খুলে দেওয়া হয়, যাতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী এসে আলোচনা করতে পারে। আমাদের দাবি ছিল ৫ দফা—যেগুলো বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা পেলে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে নমনীয় হতেই পারতাম। কিন্তু সেটা না হয়ে কেন এক দফায় এসে পৌঁছালাম, সেই প্রশ্নই এখন গুরুত্বপূর্ণ।”
সৈকত বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে যে দমন-পীড়ন চালানো হয়েছে, তার আর কী বাকি ছিল? আমরা তো নৈতিকভাবে কোনো ভুল করিনি। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। বিল্ডিংয়ে তালা মারা বা মোমবাতি প্রজ্বালন করার কারণে শিক্ষার্থী বহিষ্কার—এটা কোন যুক্তিতে হয়? অন্যদিকে যারা গুলি ছুড়েছে, ছুরিকাঘাত করেছে, তারা দিব্যি পার পেয়ে যাচ্ছে—এই বৈষম্য মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা আমাদের শিক্ষকদের হয়তো যথাযথভাবে বোঝাতে পারিনি। সেই ব্যর্থতা আমাদের। কিন্তু সব সময় আমরা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছি। যদি ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়, সেটাও করবো। কিন্তু এও বলবো—জুলাইয়ের সেই রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা এখনও আমাদের বুকের ভেতর রয়ে গেছে। ঢাবি, চট্টগ্রাম, খুলনা—সবখানেই আমরা আন্দোলন করেছি, রক্ত দিয়েছি। কেউ আমাদের কোলে মৃত্যুবরণ করেছে, সেই দৃশ্য ভোলা যায় না।”
সৈকত বলেন, “দুই মাস ধরে চলা আন্দোলনে প্রশাসন একবারও আন্তরিক আলোচনায় বসেনি। শুধু হামলা, মামলা আর বহিষ্কার এসেছে। উপাচার্য এখনো বহাল তবিয়তে দায়িত্বে। আমাদের আর কিছুই দেওয়ার নেই—শুধু জীবনটা আছে। সেটাই এবার দিতে চাই। আমরা আন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ২৪ ঘণ্টার চূড়ান্ত সময় বেঁধে দিলাম। উপাচার্য অপসারণ না হলে আমরণ অনশন শুরু করবো।”
তাঁর কণ্ঠে ছিল হতাশা আর দৃঢ় সংকল্পের সংমিশ্রণ, “আমরা ক্লান্ত, আমরা ব্যর্থ—তবুও আমাদের অবস্থান থেকে এক চুলও সরবো না। এই যুদ্ধ এখন আমাদের অস্তিত্বের।”
এই আলটিমেটামের মধ্য দিয়ে কুয়েট শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রবেশ করলো নতুন, আরও কঠিন এক পর্যায়ে—যেখানে দাবি আদায় না হলে জীবন উৎসর্গের ঘোষণাও সামনে এনে দিয়েছেন তারা।