Logo
Logo
×

শিক্ষা

‘তুই শিবির করিস’ বলেই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী রাবি শিক্ষার্থীকে পেটাল ছাত্রলীগ

Icon

প্রকাশ: ১১ জুলাই ২০২৪, ০৮:৪৬ পিএম

‘তুই শিবির করিস’ বলেই কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী রাবি শিক্ষার্থীকে পেটাল ছাত্রলীগ

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান। ছবি : সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কারের আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে।

গত মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে এই ঘটনা ঘটে। মারধরের পর তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে রাবি প্রক্টর বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম মো. মোস্তফা মিয়া। তিনি সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতারা হলেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, সৈয়দ আমীর আলী হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ফরহাদ হোসেন খান ও নবাব আব্দুল লতিফ হল শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম রেজা।

অভিযোগপত্র ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার (৮ জুলাই) কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন রেলপথ অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা। এই বিষয়টি অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদকে জানান ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। পরে ফরহাদ ভুক্তভোগীকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। এতে শঙ্কিত হয়ে বিষয়টি তার (ভুক্তভোগী মোস্তফা) বিভাগের সিনিয়র আরিফ মাহমুদকে জানান।

পরে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আরিফের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মু. শহীদুল্লাহ অ্যাকাডেমিক ভবনের সামনে দেখা করেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরিফের বন্ধু ও অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজা। এরপর তাকে (শামীম) বিস্তারিত ঘটনা বললে তিনি ফরহাদ হোসেনকে ফোন দিয়ে বলেন, ‘শিবির ধরছি, নিয়ে আসব নাকি?’ পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টুকিটাকি চত্বরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ২৩০ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান তারা। কক্ষটি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর।

ওই কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে তার ফোন চেক করতে শুরু করেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। তবে তার ফোন চেক করে শিবিরের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পায়নি তারা। কিন্তু ফেসবুকে কোটা আন্দোলন নিয়ে পোস্ট দেখে প্রচণ্ড রেগে যান ছাত্রলীগ সভাপতি। একইসঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার কারণে তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এ সময় তিনি ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, স্বীকার কর।’

তারা কিছু সময় বিরতি দিয়ে দিয়ে ভুক্তভোগীকে মারতে থাকেন। এভাবে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তাকে নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতারা।

মারধর চলাকালে ছাত্রলীগ নেতা ফারহাদ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কানে কানে বলেন, ‘তুই শিবির করিস, এটা স্বীকার কর, তাহলে ছেড়ে দেব। আর তোর ডিপার্টমেন্টে কে কে শিবির করে এটা বল ছেড়ে দেব’। নির্যাতনের একপর্যায়ে তাকে পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতারা তাকে হল ছাড়ার হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই আজই হল ছেড়ে দিবি।’ পরে তার সঙ্গে ছাত্রলীগ সভাপতির এক অনুসারী পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের গণরুম থেকে তাকে বের করে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোস্তফা মিয়া বলেন, এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হল থেকে নামিয়ে দিলে আমি আবাসন সংকটে পড়ে যাই। ফলে বাধ্য হয়ে আমি বাড়ি চলে এসেছি। বর্তমানে আমি বাড়িতে অবস্থান করছি।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ফরহাদ হোসেন খান বলেন, মোস্তফা মিয়া নামের কোনো শিক্ষার্থীকে আমি চিনি না এমনকি অতীতেও তার সঙ্গে আমার কোনো ধরনের সাক্ষাৎ হয়নি। আর এ ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত না।

আরেক অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শামীম রেজাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বিষয়টি আমি অবগত নই। কিছুক্ষণ আগেই শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে তারপর বলতে পারব।

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, ওই শিক্ষার্থীর হয়ে তিনজন আমাকে অভিযোগপত্র দিয়েছেন। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তিনজন সহকারী প্রক্টরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা পাওয়া গেলে পরবর্তী ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
Email: [email protected]

অনুসরণ করুন