প্রধান শিক্ষক শূন্য রাজশাহীর ৩৮৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে
স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী :
প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
ছবি-সংগৃহীত
প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে রাজশাহীর এক-তৃতীয়াংশের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন ধরে এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে।
রাজশাহী জেলার ১ হাজার ৫৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৮৯টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। যা জেলার সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বড় শূন্যতা। বছরের পর বছর ধরে পদোন্নতি ও নিয়োগ বন্ধ থাকায় এই সংকট আরও গভীর হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজশাহী জেলার ৯টি উপজেলা এবং মহানগর এলাকার বিদ্যালয়ংগুলো ভুগছে শিক্ষক সংকটে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা জেলার বাগমারা উপজেলায়। এখানে যেখানে সর্বোচ্চ ৯৭টি বিদ্যালয়ে কোনো প্রধান শিক্ষক নেই। এরপরই রয়েছে গোদাগাড়ী। এখানে ৭১টি বিদ্যালয়ে একই অবস্থা। এছাড়া তানোরে ৬২ টি, চারঘাটে ৩৮টি, পুঠিয়ায় ২৭টি, বাঘায় ২২টি, পবায় ২১টি, দুর্গাপুরে ২১টি, মোহনপুরে ২০টি এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় ১০টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই।
এসব বিদ্যালয়গুলোতে সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু তাঁদের হাতে নেই প্রশাসনিক ক্ষমতা, নেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ। ফলে বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে শুরু করে শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা দিন দিন দুরূহ হয়ে উঠছে।
জেলার পবা উপজেলার ভালাম ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নফুরা খাতুন বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে আমরা যারা দায়িত্ব নিচ্ছি, তাদের হাতে ক্ষমতা নেই। অথচ মিড-ডে মিল, সরকারি ডেটা আপলোড, সভা, অভিভাবক সংযোগসহ সবকিছু সামলাতে হচ্ছে।
একই ধরনের চাপের কথা জানান কালুপাড়া মাধাইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুমা আক্তার। তিনি বলেন, পূর্ণ ক্ষমতা না থাকায় অনেক জরুরি সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এতে স্কুলের সার্বিক মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০১৮ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। প্রতি বছর বহু শিক্ষক অবসরে গেলেও নতুন নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
রাজশাহী জেলা সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ বলেন, ‘২০১০ সালের পর সরাসরি প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ২০১৮ সালে কিছু সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারাও এখন অবসরে গেছেন। ফলে প্রধান শিক্ষক পদে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে হলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক জরুরি।
রাজশাহী জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) টুকটুক তালুকদার বলেন, শিক্ষা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। কিন্তু প্রধান শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আমরা নিয়মিতভাবে শূন্য পদের তালিকা পাঠাচ্ছি, কিন্তু পদোন্নতি না হওয়ায় সংকট কাটছে না।
রাজশাহী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম আনোয়ার হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।



