
প্রিন্ট: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০৬:৫১ পিএম
‘উপেক্ষিত নবাব সলিমুল্লাহর উত্তরসূরিরা, জন্মের দায় ভুলে গেছে ঢাবি’

অনলাইন ডেস্ক :
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৫, ০২:১৫ পিএম

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাব সলিমুল্লাহ, নবাব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকেরা উপেক্ষিত। অথচ এই মানুষগুলোই পূর্ব বাংলার গরীব মুসলমানরা যেন ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিকভাবে বলীয়ান হয়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু সেই জন্মের দায় ভুলে গেছে ঢাবি’।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অডিটোরিয়ামে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস, রাজনীতি এবং প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক এক সেমিনার এসব কথা বলেন লেখক, প্রাবন্ধিক ও বুদ্ধিজীবী ডা. ফাহমিদ-উর-রহমান।
এসময় তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে অবশ্যই এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে হবে। এর জন্য নবাব সলিমুল্লাহর স্মৃতিকে ধরে রাখতে তার নামে ইশারাত মঞ্জিল জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করার দাবিও করেন তিনি।
সেমিনারে অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন বলেন, আমাদের দেশকে রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে এগিয়ে যেতে বাংলাদেশপন্থি রাজনীতি করতে হবে। বাংলাদেশের সকল মানুষকে সমান অধিকার দিতে হবে। রাজনীতি করতে হবে সততার সঙ্গে। আমরা শহীদ জিয়ার মৃত্যুর পরে উনার সন্তানদের সাক্ষাৎকারে দেখেছি, তারা বাবার পোশাককে ছোট করে পরেছেন। আমরা সেই রাজনীতি করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই রাজনীতির স্বরূপ সম্পর্কে সাহিত্য রচনা করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশ পন্থার বাতিঘর হতে হবে।
অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের পর্যালোচনা করতে হবে, আমাদের কেন বারবার রক্ত দিতে হচ্ছে। কেন আমরা জিতেই বারবার হেরে যাচ্ছি। গেল ১৭ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকেরা কেন এবং কীভাবে ফ্যাসিবাদকে টিকিয়ে রেখেছিল; সেই প্রশ্ন তুলতে হবে। কেন নবাব সলিমুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা করা জরুরি মনে করেছিলেন সেটা অনুধাবন করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক মীর সালমান শামিল বলেন, জুলাই বিপ্লবের কিছু আইকনিক স্লোগান ছিল। সেগুলো হলো- ‘দিল্লি না ঢাকা: ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারত যাদের মামু বাড়ি, দেশ ছাড়ো তাড়াতাড়ি’, ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘চশমাওয়ালা বুবুজান, নৌকা নিয়ে ভারত যান’।
তিনি বলেন, এই স্লোগানগুলোতে ‘ভারত’ বলতে ভারতের সাধারণ শ্রমজীবী, কৃষক বা প্রান্তিক জনগণকে বোঝানো হয়নি। বরং বোঝানো হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্র, ভারতের এস্টাবলিশমেন্টকে। এই শ্লোগানগুলো বাংলাদেশের জনগণের ভারতের প্রতি জমে থাকা বহু দশকের ক্ষোভ ও অসন্তোষের এক রাজনৈতিক ভাষ্য।
মীর সালমান শামিল বলেন, বাংলাদেশ বা পূর্ব বাংলায় ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের আধিপত্য বিস্তার এবং স্বার্থপরতার নতুন ঘটনা না। গত ৩০০ বছর ধরে ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্ট পূর্ব বাংলার মানুষের সঙ্গে স্বার্থপর আচরণ করে আসছে। ভারতীয় এস্টাবলিশমেন্টের পূর্ব বাংলার প্রতি উপেক্ষার একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাস।
এ অধ্যাপক বলেন, ৩৬ জুলাই পরবর্তীতে বাংলাদেশকে নতুন করে গড়তে, আমাদের অতীতের ব্যাপারে পরিষ্কার বোঝাপড়া থাকতে হবে। এই অনুচ্চারিত ইতিহাসগুলো জানা ও বিশ্লেষণ করা জরুরি। যেন আমরা আবার ভারতের ফাঁদে না পরি।