
প্রিন্ট: ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১২:৩৬ এএম
রূপগঞ্জে কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও কলেজ উদ্বোধন

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি :
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০৭:৪৮ পিএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ভোলাব ইউনিয়ন। এখনো সবুজ-শ্যামলা। কৃষিনির্ভর এ এলাকায় কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল ও মাদরাসা থাকলে নেই কলেজ। অবশেষে স্বাধীনতার ৫৭ বছর ভোলাববাসীর সেই দুঃখের অবসান হচ্ছে। আগে এখানকার শিক্ষার্থীদের কলেজে যেতে হলে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিতে হতো। ছেলেমেয়েদের বিদ্যাপীঠে পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকতো মা-বাবা। সেই চিন্তার অবসান ঘটালেন ভোলাব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু। তার সহযোগিতায় ভোলাব ইউনিয়নে শিক্ষার আলো ।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) এসএসসি কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভোলাব গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে কলেজ করার ঘোষণা দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলাব রূপগঞ্জের শেষ সীমানার একটি ইউনিয়ন। শীতলক্ষ্যা নদ ঘেঁষা এ এলাকাটি কৃষিনির্ভর ছিল। এখনো সুজলা-সুফলা ভোলাবতে তাজা সবজি ফলে। ভোলাব ইউনিয়নের উত্তরে নরসিংদী জেলা। এখানে কয়েকটি মাধ্যমিক স্কুল, মাদরাসা থাকলেও নেই কলেজ। উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে এখানকার শিক্ষার্থীদের মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে যেতে হতো কাঞ্চন সলিমউদ্দিন চৌধুরি কলেজে কিংবা যেতো হতো নরসিংদী কলেজে। স্বাধীনতার ৫৭ বছর ধরে এ ইউনিয়নের বাসিন্দারা শিক্ষার ক্ষেত্রে বঞ্চনার শিকার হয়ে আসছে। অবশেষে মঙ্গলবার সেই বঞ্চনার অবসানের যাত্রা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, এ ইউনিয়নে জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। জনসংখ্যার দিক দিয়ে এগিয়ে থাকলেও পিছিয়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের হওয়ায় আর্থিক অনটনের কারণে বেশিরভাগ ছেলে মেয়েরা মাধ্যমিকের পর ঝড়ে যায় ৷ যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এ ইউনিয়নের ছেলে মেয়েরা সিংহভাগই মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরুতে পারে না।
কথা হয় সদ্য এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থী তানজীলা আক্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এসএসসি পাস করলাম। কিন্তু কলেজে পড়া নিয়ে চিন্তা করতাম। আজ থেকে ভালো লাগছে আমাদের এলাকায় কলেজের যাত্রা শুরু হয়েছে। এজন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ।
গত তিন বছর আগে এসএসসি পাস করেছেন রেদওয়ান মিয়া। তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে ঘোড়াশাল কলেজে যেতে হতো। ঝড়-বৃষ্টি হলে গাড়ি পাওয়া যেতো না। ভাড়া গুণতে হতো বেশি। পরিবারের জন্য অনেক চাপ পড়ে যেতো।
গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধি মনিরুল ইসলাম সবুজের কথা হয়। তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় একটা কলেজ না থাকায় কত কষ্ট কইরা পোলাপান লেখাপড়া করতো। ও নরসিংদী আইসা-গিয়া লেখাপড়া করেছে। সবসময় চিন্তায় থাকতাম, ভয়ে থাকতাম। এলাকায় কলেজ হওয়ায় আমরা খুশি।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ছানাউল্যাহ বলেন, এলাকায় কলেজ হওয়ার শিক্ষার আলো ফুটলো। এলাকার ছেলে-মেয়ে এলাকায়ই লেখাপড়া করতে পারবে। আগেতে মেট্রিক পাস করে আর লেখাপড়া করতো না। এখন এলাকায় কলেজ হওয়ার ভাল হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ভোলাব ইউনিয়নের গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ৩৮ জন এসএসপি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনার মধ্যে দিয়ে এ কলেজের উদ্বোধন করা হয়।
গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামান মিয়া বলেন, ভোলাব ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল গণবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি কলেজ হবে। অনেকে এটিকে কলেজ করার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। তবে আলমগীর হোসেন টিটুসহ যাদের উদ্যোগে কলেজটি চালু হচ্ছে তাদের কাছে ভোলাব ইউনিয়নবাসী কৃতজ্ঞ থাকবে। অর্থের অভাবে যারা শিক্ষা লাভ করতে পারে না তাদের জন্য কলেজটি আশীর্বাদ স্বরূপ। তারা এখানে স্বল্প খরচে লেখপাড়া করতে পারবে।
কলেজের স্বপ্নদ্রষ্টা ও ভোলাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটু বলেন, এখানে চারটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ কয়েকটি মাদরাসা রয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো কলেজ নাই। কীভাবে এলাকার হতদরিদ্র, মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারে, সে দিক বিবেচনা করে গনবাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাথে কলেজ শাখা সংযোগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আশা রাখি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সার্বিক সহায়তায় আমাদের এ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে। এইচএসসি শেষ করে ছেলেমেয়েরা দেশের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়ে ভোলাব ইউনিয়নের সুনাম করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ভোলাবো ইউনিয়নবাসীসহ ভোলাবো ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন টিটুর উদ্যোাগে আজকে একটি নতুন কলেজের উদ্বোধন করা হয়েছে। এতে করে এলাকার ছেলে মেয়েদের শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা সুগম হবে বলে আমি মনে করি। আমরা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহায়তা প্রয়োজন সেটা করবো।