
প্রিন্ট: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:২৮ এএম
ইসলামী ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি ৭০ হাজার কোটি ছুঁইছুঁই

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ মে ২০২৫, ০১:০৮ পিএম

ফাইল ছবি
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে বিপুল অঙ্কের ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৬৯ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা—দেশের ইতিহাসে কোনো ব্যাংকের ক্ষেত্রে এত বড় ঘাটতির নজির নেই। ব্যাংকটি এই ঘাটতি পূরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ২০ বছর সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
২০২৪ সালের বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা যায়, ইসলামী ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা, যা তাদের মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪২ শতাংশ। অথচ পরিদর্শনের আগপর্যন্ত ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে খেলাপি ঋণ দেখিয়েছিল মাত্র ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।
প্রভিশনের বিশাল ঘাটতির মধ্যে শুধু চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখায় ঘাটতি ধরা পড়েছে ৪১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। ওই শাখার আমানত মাত্র ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা হলেও দায় সৃষ্টি হয়েছে ৫৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংকের পরিদর্শনে বিগত বছরের অনিয়মের চিত্র বেরিয়ে এসেছে। এসব অনিয়মের ফলে প্রভিশন সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ, নন-ফান্ডেড দায় ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের বিপরীতে মোট ৭৭ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকার প্রভিশন রাখা দরকার হলেও ব্যাংকটি সংরক্ষণ করেছে মাত্র ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
প্রভিশন ঘাটতির পাশাপাশি মূলধন ঘাটতিও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রভিশনের আগের হিসাব অনুযায়ী মূলধন ঘাটতি ছিল ১২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা। কিন্তু হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী মূলধন ঘাটতি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে।
ব্যাংকটির এক কর্মকর্তা জানান, ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে দেশের আমদানি-রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের বড় অংশ পরিচালিত হয়। প্রভিশন ঘাটতি থাকলে বিদেশি ব্যাংকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে যায় এবং এলসি খোলায় সমস্যা হয়। তাই ধাপে ধাপে ঘাটতি পূরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দীর্ঘ মেয়াদি সময় চাওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ২০টি ব্যাংক প্রভিশন সংরক্ষণে সময় ও সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে। এ বিষয়ে একযোগে সিদ্ধান্ত দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন কর্মকর্তারা বলছেন, অতীতে রাজনৈতিক ও নীতিগত সুবিধার কারণে অনেক ব্যাংকের প্রকৃত খেলাপি ও প্রভিশন চিত্র আড়াল রাখা হতো। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর মনোভাব নিয়েছে এবং সব শ্রেণীকৃত ঋণের বিপরীতে বাস্তবভিত্তিক প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশনা দিয়েছে।
এদিকে, ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টায়ও সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, দীর্ঘদিনের গোপন অনিয়ম ও দায় চেপে বসেছে ইসলামী ব্যাংকের ওপর। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় আর্থিক ফাঁকফোকর সামাল দিতে ব্যাংকটি কতটা সক্ষম—আর তাতে আমানতকারীদের সুরক্ষা আদৌ নিশ্চিত থাকবে কি না?