Logo
Logo
×

অর্থনীতি

হাজার কোটির মুনাফার নতুন অধ্যায়ে সিটি ব্যাংক, ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১৪ এএম

হাজার কোটির মুনাফার নতুন অধ্যায়ে সিটি ব্যাংক, ব্যাংকিং খাতে রেকর্ড

ছবি : সংগৃহীত

২০২৪ সালে অভাবনীয় আর্থিক সাফল্য অর্জন করেছে দেশীয় মালিকানাধীন বেসরকারি ব্যাংক সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটি ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক হাজার কোটি টাকা পেরিয়ে নিট মুনাফা অর্জনের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির সমন্বিত নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৪ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের ৪২ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

সিটি ব্যাংক এককভাবে ১ হাজার ৮৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করলেও, সহযোগী কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগে বাজারমূল্য হ্রাসজনিত প্রভিশনিংয়ের কারণে সমন্বিত মুনাফায় কিছুটা কাটছাঁট হয়। যদিও তাও আগের বছরের তুলনায় ৩৭৬ কোটি টাকা বেশি, অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি— যা এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংকটির সর্বোচ্চ আয় বৃদ্ধির রেকর্ড।

মঙ্গলবার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদিত হয়। সভা শেষে ২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে ১২.৫ শতাংশ নগদ এবং বাকি ১২.৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার আকারে দেওয়া হবে। এ লভ্যাংশ অনুমোদনের পর বার্ষিক সাধারণ সভায় শেয়ারধারীদের মাঝে বিতরণ করা হবে। নগদ লভ্যাংশ দিতে ব্যয় হবে প্রায় ১৭০ কোটি টাকার বেশি, এবং বোনাস হিসেবে প্রতি ১০০ শেয়ারে যোগ হবে ১২.৫টি নতুন শেয়ার।

সিটি ব্যাংকের এই আর্থিক সাফল্য শুধু প্রতিষ্ঠানটির জন্য নয়, বরং দেশের পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্যও একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। অতীতে কোনো স্থানীয় কনভেনশনাল ব্যাংক এক হাজার কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা অর্জন করতে পারেনি, শুধু ব্যতিক্রম ব্র্যাক ব্যাংক, যারা এবার ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকার মুনাফার ঘোষণা দিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য এই মুনাফার প্রভাব পড়েছে শেয়ারপ্রতি আয়েও (EPS)। ২০২৩ সালে যেখানে ইপিএস ছিল ৪.৭৪ টাকা, ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৭.৫৩ টাকা, অর্থাৎ ৫৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। পাশাপাশি শেয়ারপ্রতি প্রকৃত সম্পদমূল্য (NAV) হয়েছে ৩৪.৩৯ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন জানান, জনগণের আস্থা ও সুশাসনই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। তিনি বলেন, "আমরা আমানতকারীদের আস্থাকে সম্মান জানিয়েছি। পরিচালনা ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছি, ফলে মুনাফায় বড় ধরনের উল্লম্ফন সম্ভব হয়েছে। একইসঙ্গে কর্মীদের জন্য বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে, যা কর্মোদ্যম বাড়াতে সহায়ক হয়েছে।"

২০২৪ সালে ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ৩১ শতাংশ (১২ হাজার ১৭৭ কোটি টাকা), যা ঋণের ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির (৪ হাজার ৮৩১ কোটি টাকা) তুলনায় অনেক বেশি। এই উদ্বৃত্ত মূলধনের একটি বড় অংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়েছে, যার পরিমাণ ৬ হাজার ১৫০ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪৮৮ কোটি টাকায়।

আয় উৎস বিশ্লেষণে দেখা যায়, সিটি ব্যাংকের ৬৪ শতাংশ আয় এসেছে ঋণ থেকে প্রাপ্ত সুদ, ১২ শতাংশ এসেছে ফি ও কমিশন থেকে, ১৯ শতাংশ এসেছে ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে এবং মাত্র ৫ শতাংশ এসেছে শেয়ারবাজার ও অন্যান্য উৎস থেকে। অর্থাৎ ব্যাংকের মোট আয়ের প্রায় ৭৬ শতাংশই এসেছে প্রথাগত ব্যাংকিং কার্যক্রম থেকে, যা তাদের মূল ব্যবসায়িক দক্ষতার প্রতিফলন।

সবশেষে, উল্লেখযোগ্য যে, বছর শেষে শেয়ারপ্রতি নগদ অর্থপ্রবাহ (Cash Flow per Share) দাঁড়িয়েছে ৬৬.৪৪ টাকা, যা আগের বছরের ২.৯০ টাকার তুলনায় প্রায় ২৩ গুণ বেশি। এই ব্যতিক্রমধর্মী আর্থিক সাফল্য সিটি ব্যাংককে দেশের ব্যাংকিং খাতে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

এই সাফল্য ধরে রাখতে ব্যাংকটি ভবিষ্যতেও প্রযুক্তিনির্ভর, স্বচ্ছ এবং গ্রাহককেন্দ্রিক ব্যাংকিং সেবার ওপর গুরুত্ব দেবে বলে জানা গেছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন