
প্রিন্ট: ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:০০ পিএম
দুর্নীতি, অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে জর্জরিত ইসলামী ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
দেশের ব্যাংক খাতে একসময় মানুষের আস্থার প্রতীক হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়েছিল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ। আমানত সংগ্রহ, রেমিট্যান্স আহরণসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল তারা। তবে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে পরিচালনা পর্ষদ বদলের পর থেকে দুর্নীতি, অনিয়ম আর ঋণ কেলেঙ্কারিতে বারবার আলোচনায় আসছে ব্যাংকটি।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে নতুন করে রদবদল হয়। সাবেক ব্যাংকার ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ চেয়ারম্যান হলেও ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়নি, বরং নানা অনিয়মে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। অভ্যন্তরীণ অডিটে অনিয়ম ধরা পড়লেও দোষীদের রক্ষা করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের মুখে ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মুনিরুল মাওলাকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।
আর্থিক সূচকে পতন
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার পরিবর্তনের আগে ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৭ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৮১৭ কোটি টাকায়। প্রভিশন ঘাটতি যেখানে আগে ছিল না, সেখানে এখন দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ১৫৩ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি প্রভিশন ঘাটতি পূরণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অতিরিক্ত সময়ের (ডেফারেল) আবেদন করেছে।
ব্যাংকটি ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ৮৯ কোটি ২০ লাখ টাকা লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে ব্যাংকটি ৯৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা মুনাফা করেছিল। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৫৫ পয়সা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে শেয়ারপ্রতি ৫৯ পয়সা মুনাফা হয়েছিল।
নগদ প্রবাহের অবস্থা আরও উদ্বেগজনক। জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে শেয়ারপ্রতি সমন্বিত নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ৩ টাকা ২ পয়সা, যেখানে আগের বছর তা ছিল ৪৮ টাকা ৯ পয়সা।
মূলধন ঘাটতির আশঙ্কা
ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের ব্যাপক অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারির কারণে ইসলামী ব্যাংক প্রথমবারের মতো মূলধন ঘাটতির মুখে পড়তে পারে।
নতুন পরিচালনা পর্ষদের অনিয়ম
২০২৩ সালের ১৯ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইসলামী ব্যাংককে ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ অনুমোদনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। তবে এই নির্দেশনা অমান্য করে থার্মেক্স গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের নামে ৩৭৪ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করে ইসলামী ব্যাংক। যদিও ঋণের অর্থ এখনো ছাড় হয়নি।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি ওমর ফারুক জানান, "এই ঋণটি আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগের। এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়নি।"
রপ্তানি বিল পরিশোধে গড়িমসি
এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের কারণে ইসলামী ব্যাংক এখন অন্যান্য গ্রাহকের রপ্তানি বিল পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। আহমেদ গ্রুপের চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩৫ লাখ ডলার রপ্তানি বিল মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও পরিশোধ করেনি ব্যাংকটি। অথচ এস আলম গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইউনিটেক্স কম্পোজিট মিলসের ৩ লাখ ৭৩ হাজার ডলার এলসি দায় দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা চলছে।
আহমেদ গ্রুপের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগও করা হয়েছে।