
প্রিন্ট: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৪:২৪ পিএম
প্রিমিয়ার ব্যাংকের জব্দ হিসাব থেকে কোটি টাকা উত্তোলন, বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিমানা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫৭ এএম

ছবি : সংগৃহীত
প্রিমিয়ার ব্যাংকের জব্দকৃত হিসাব থেকে বেআইনিভাবে অর্থ উত্তোলনের ঘটনায় ব্যাংকটিকে অর্থদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবং ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের এই অনিয়মে সহায়তা করার অভিযোগেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ২০২৩ সালের নভেম্বরে এইচবিএম ইকবাল, তার স্ত্রী ও সন্তানসহ তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেন সাময়িকভাবে স্থগিত করে। এই স্থগিতাদেশের আওতায় থাকা অবস্থায় ইকবাল তার নিজ নামে থাকা হিসাব থেকে প্রায় ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ও ৩০ হাজার মার্কিন ডলার উত্তোলন করেন। যা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।
বাংলাদেশ ব্যাংক 'অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন, ২০১২'-এর ২৩(৬) ধারার ভিত্তিতে এই অনিয়মের জবাবে প্রিমিয়ার ব্যাংককে সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা করেছে। ওই ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যাংক যদি স্থগিত বা জব্দকৃত হিসাব থেকে বেআইনিভাবে টাকা উত্তোলনের অনুমতি দেয়, তবে সেই ব্যাংককে উত্তোলিত অর্থের সমান অঙ্কের জরিমানা প্রদান করতে হবে।
বিএফআইইউ’র এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রিমিয়ার ব্যাংককে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়েছে। যদিও ব্যাংকটির পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, এইচবিএম ইকবাল ১৯৯৯ সাল থেকে দীর্ঘ সময় প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২3 সালের ৫ আগস্ট তিনি পদ থেকে সরে দাঁড়ান, তবে ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ এখনও তার পরিবারের হাতেই রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন তার ছেলে ইমরান ইকবাল।
ব্যাংক সূত্র জানায়, সরকার পরিবর্তনের পরপরই এইচবিএম ইকবাল ও তার পরিবার দেশ ছেড়ে দুবাই চলে যান এবং সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ শুরু করেন। জানা গেছে, দুবাইতে তার একটি কাচের কারখানা এবং একটি বিলাসবহুল হোটেলে অংশীদারিত্ব রয়েছে।
এদিকে, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক গত অক্টোবর মাসে এইচবিএম ইকবাল, তার স্ত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তিন সন্তানকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। অভিযোগ অনুযায়ী, ইকবাল পরিবার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ঋণের নামে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং বিদেশে অবৈধ সম্পদ গড়ে তুলেছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, “বিএফআইইউ একটি স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থা। তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মন্তব্য করবে না।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাংকিং খাতে দায়িত্বহীনতার অভিযোগ আরও একবার সামনে এলো, যা ভবিষ্যতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য নতুন করে ভাবনার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে।