BETA VERSION বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
Logo
ইউনিকোড কনভার্টার
Logo
  • হোম
  • সর্বশেষ
  • জাতীয়
  • রাজনীতি
  • সারাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • অর্থনীতি
  • চাকরি
  • মিডিয়া

সব বিভাগ ভিডিও আর্কাইভ ইউনিকোড কনভার্টার
Logo

প্রিন্ট: ২৩ জুলাই ২০২৫, ০৮:১৯ পিএম

Swapno

অর্থনীতি

এস আলমের ২ প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি: এনবিআর

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৪, ০৬:১৮ পিএম

এস আলমের ২ প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি: এনবিআর

তিন বছরে এস আলমের ২ প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি। ছবি : সংগৃহীত

ভ্যাট ফাঁকি এবং এর জরিমানাসহ এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড ও এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছে সরকারের পাওনা সাত হাজার কোটি টাকার বেশি। এনবিআরের ভ্যাট শাখার একটি অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভ্যাট রিটার্নে কম ক্রয়-বিক্রয় দেখানোসহ বিভিন্ন উপায়ে ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কোম্পানি দুটি ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে।

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে কোম্পানি দুটি তিন হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট 'ফাঁকি' দিয়েছে, যার জন্য তাদের আরও তিন হাজার ৫৩১ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের ফিল্ড অফিস থেকে অডিটটি করা হয় এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি এটি পর্যালোচনা করে ভ্যাট 'ফাঁকি'র এই অভিযোগের সত্যতা পায়।

২০২৩ সালের অক্টোবরে জমা দেওয়া অডিট প্রতিবেদন এবং প্রতিবেদন তৈরির প্রায় আট মাস পর ২০২৪ সালের মে মাসে জমা দেওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে তিন বছরে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক হাজার ৯১৭ কোটি টাকা এবং এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের বিরুদ্ধে এক হাজার ৬২১ কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

দুই কোম্পানিই কোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে।

ভ্যাট রিটার্ন এবং তাদের সিএ ফার্মের অডিটকৃত আর্থিক বিবরণী ও পর্যালোচনা কমিটির কাছে তাদের লিখিত জবাব বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পেয়েছে রাজস্ব কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানি দুটির বিষয়ে গত বছরের ২ অক্টোবর প্রতিবেদন জমা দেয় অডিট টিম। পরে অডিট প্রতিবেদনটি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে মাঠ পর্যায়ের কার্যালয়।

গত ২১ মে জমা দেওয়া পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে 'ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে'।

গত ৯ জুন চট্টগ্রাম কাস্টমস, ভ্যাট ও এক্সাইজ কমিশনারেট ওই দুই কোম্পানিকে পরবর্তী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে 'ফাঁকি দেওয়া' তিন হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ভ্যাট, তিন হাজার ৫৩১ কোটি টাকা জরিমানা এবং এর ওপর প্রযোজ্য সুদের টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে পরিশোধের নির্দেশ দেয়।

অপরিশোধিত ভ্যাট ও জরিমানার মোট পরিমাণ সাত হাজার ৬৯ কোটি টাকা।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, এই টাকা পরিশোধের জন্য দেওয়া নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হবে আগামী ৩ জুলাই। এর মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে বা আদেশের বিরুদ্ধে আপিল না করলে মাঠ পর্যায়ের অফিস ওই দুই কোম্পানির বিরুদ্ধে 'আইন অনুযায়ী ভ্যাট, জরিমানা ও সুদের টাকা আদায়ে ব্যবস্থা নেবে'।

গত ২৭ জুন এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, তারা 'ভ্যাটের একটি টাকাও ফাঁকি দেননি' এবং এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবেন।

ব্যবসায়ীক গ্রুপটির এই দুই অঙ্গ সংগঠন ভ্যাট দাবির ২০ শতাংশ—৭০০ কোটি টাকার বেশি—পরিশোধ করে ৯০ দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবে।

এস আলম গ্রুপের কোম্পানি আইনজীবী মো. মুস্তাফিজুর রহমান গত ২৯ জুন জানান, তারা আপিল করার আগে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যক্তিগত শুনানির মাধ্যমে তাদের পূর্ণ প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং অডিট ও পর্যালোচনার সময় কর্তৃপক্ষের চাওয়া নথি উপস্থাপন করতে চায়।

ভ্যাট কর্তৃপক্ষ অনাদায়ী ভ্যাট পরিশোধ করতে বলার তিন দিন আগে—গত ৬ জুন—পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আবেদন করলেও তাদেরকে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি উল্লেখ করে মুস্তাফিজুর বলেন, 'তারা যদি পূর্ণাঙ্গ শুনানি করে এবং আমাদের পর্যাপ্ত সময় দেয় তাহলে বোঝাতে পারব, তারা যে ভ্যাট দাবি করছে তা বাস্তব সম্মত নয়।'

মাঠ অফিসের অডিটে যা পাওয়া গেছে

চট্টগ্রাম আয়কর অফিসে কোম্পানি দুটির দাখিল করা ভ্যাট রিটার্নের বিক্রি সংক্রান্ত তথ্য এবং ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে কর অফিস তাদের ভ্যাট ফাঁকির তথ্য পায়।

এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেডের ওপর তৈরি প্রতিবেদনে ভ্যাট কমিশনারেট বলেছেন, কোম্পানিটি তাদের চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্সি (সিএ) ফার্মের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদনের চেয়ে 'ভ্যাট রিটার্নে বিক্রি কম দেখিয়েছে'। বার্ষিক প্রতিবেদনটি কোম্পানিই কর কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, '২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের অডিটকৃত প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির মোট বিক্রির পরিমাণ ১২ হাজার ৭২৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে ভ্যাট রিটার্ন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির বিক্রির পরিমাণ দুই হাজার ৪০১ কোটি ৯২ লাখ টাকা।'

ওই সময় ভোজ্যতেল বিক্রির ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল উল্লেখ করে এতে বলা হয়, 'অর্থাৎ ভ্যাট রিটার্নে ১০ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা বিক্রির কথা উল্লেখ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট রিটার্নে প্রকৃত বিক্রির বিষয়টি গোপন করে প্রতিষ্ঠানটি আদায়যোগ্য এক হাজার ৩৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা পরিশোধ করেনি।'

অডিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, অপর কোম্পানি এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডও একই ধরনের কাজ করেছে। পার্থক্য শুধু টাকার পরিমাণে।

অডিট প্রতিবেদন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, একই সময়ে কোম্পানিটির 'অডিটকৃত আর্থিক বিবরণীতে বিক্রির পরিমাণ ১২ হাজার ৮৫০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। তবে ভ্যাট রিটার্নে এর পরিমাণ দেখানো হয়েছে তিন হাজার ৬২০ কোটি ৬৩ লাখ টাকা, যা অডিটকৃত আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপিত অর্থের চেয়ে নয় হাজার ২২৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা কম।'

এ ছাড়া, তিন অর্থবছরের অডিটকৃত বার্ষিক প্রতিবেদনের চেয়ে ভ্যাট রিটার্নে কাঁচামাল ক্রয়ের মূল্য কম দেখিয়ে রাজস্ব 'ফাঁকি' দিয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড তাদের অডিটকৃত আর্থিক বিবরণীতে দেখিয়েছে, 'এই তিন বছরে তারা ১১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার কাঁচামাল কিনেছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা ভ্যাট রিটার্ন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাগজপত্রে দেখা যায়, কাঁচামাল ক্রয় করেছে তিন হাজার ১৪৫ কোটি টাকার।'

সিএ ফার্মের অডিটকৃত কোম্পানির নিজস্ব আর্থিক বিবরণীতে প্রদর্শিত অর্থের চেয়ে যা আট হাজার ১০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকা কম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'অডিট প্রতিবেদন ও ভ্যাট রিটার্নের তুলনামূলক বিশ্লেষণে এটা স্পষ্ট যে ভ্যাট ফাঁকি দিতে স্থানীয় উৎস থেকে কেনা বা অন্য কোনো উপায়ে সংগ্রহ করা উপাদান দিয়ে উৎপাদন করে সয়াবিন ও পাম তেল বিক্রি করা হয়েছে।'

'সিএ ফার্মের অডিটকৃত কোম্পানির প্রতিবেদনে প্রক্রিয়াজাতকরণ উপকরণ (সিডিএসও—ক্রুড ডিগামড সয়াবিন তেল ও আরবিডি পাম অলিন) ছাড়াই বিক্রির তথ্যও রয়েছে।'

'আমদানি তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে স্থানীয়ভাবে আট হাজার ১০০ কোটি ৩৯ লাখ টাকার কাঁচামাল সংগ্রহ করলেও এর বিপরীতে কোম্পানিটি কোনো ভ্যাট চালান বা বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে পারেনি।'

ওই সময়ে এ ধরনের ক্রয়ে সাত দশমিক পাঁচ শতাংশ হারে ভ্যাট প্রযোজ্য ছিল এবং 'সেই কারণে, মোট অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৬০৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানটি থেকে আদায়যোগ্য।'

এই তিন বছরে অপর কোম্পানি এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাঁচামালের ক্রয়মূল্য ১১ হাজার ১৭১ কোটি ৪২ লাখ টাকা দেখানো হলেও শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা ভ্যাট রিটার্ন ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য কাগজপত্রে এর পরিমাণ পাঁচ হাজার ২০৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে।

এ ক্ষেত্রে, অপরিশোধিত করের পরিমাণ ৪৪৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, 'আমদানির তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, স্থানীয়ভাবে পাঁচ হাজার ৯৬৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয়েছে, যার বিপরীতে কোম্পানিটি কোনো ভ্যাট চালান বা বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে' উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ ৪৪৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

চট্টগ্রাম কাস্টমস, ভ্যাট কমিশনারেট ২০১৯-২০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের অডিটকৃত বার্ষিক প্রতিবেদন ও ভ্যাট রিটার্নে প্রদত্ত পণ্য ও সেবার ক্রয় সংক্রান্ত তথ্য তুলনা করে দেখেছে, 'এই সময়ে এস আলম ভেজিটেবল অয়েল ক্রয়ের সময় প্রযোজ্য হারের চেয়ে কম পরিমাণে উৎসে ভ্যাট (ভিডিএস) পরিশোধ করেছে।'

ওই তিন বছরে পণ্য ও সেবার ওপর পাঁচ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। যে হিসাবে কোম্পানিটির অপরিশোধিত করের পরিমাণ পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

একই সময়ে এস আলম সুপার এডিবল অয়েলের ভিডিএস হিসেবে এক কোটি ৭৮ লাখ টাকার রাজস্ব বকেয়া।

প্রতিষ্ঠান দুটির বিষয়ে কমিশনারেটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ১০টি ধারা এবং মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক বিধিমালা ২০১৬ এর ছয়টি ধারার 'সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে তাদের এই ধরনের কাজে'।

এ ছাড়া 'ভ্যাট আইন না মানায়' এস আলম সুপার এডিবল অয়েলকে এক হাজার ৬২০ কোটি টাকা এবং এস আলম ভেজিটেবল অয়েলকে এক হাজার ৯১২ কোটি টাকা জরিমানা করেছে কর কর্তৃপক্ষ।

কোম্পানি দুটি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ৮৫ ও ১১১ ধারা অনুযায়ী কোম্পানির বিরুদ্ধে ফাঁকি দেওয়া ভ্যাট আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।'

অডিট চলাকালে চট্টগ্রাম কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট কোম্পানি দুটির কাছে এর ব্যাখ্যা চায় এবং ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর শুনানির জন্য হাজির হতে বলে। শুনানির দিন উভয় কোম্পানি একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া জমা দেয় এবং লিখিত আকারে বিস্তারিত জবাব দেওয়ার জন্য আরও সময় চায়।

এরপর কমিশনারেট অফিস থেকে তিন দফায় কোম্পানি দুটিকে বাড়তি সময় দেওয়া হয় এবং গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর জমা দেওয়া লিখিত জবাবে কোম্পানি 'তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশে উল্লিখিত পরিহারকৃত মূসক দাবিটি প্রত্যাহারের অনুরোধ জানায়'।

'সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত'

প্রতিষ্ঠান দুটির লিখিত জবাব এবং অপরিশোধিত ভ্যাট দাবি পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে, যা মাঠ অফিসের অডিট প্রতিবেদন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক নথিপত্র পর্যালোচনা করে গত ২১ মে প্রতিবেদন জমা দেয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'সবকিছু বিবেচনা ও বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে এস আলম ভেজিটেবল অয়েলের এক হাজার ৯১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।'

এস আলম সুপার এডিবল ওয়েলের মোট অপরিশোধিত ভ্যাট এক হাজার ৬২১ কোটি ৯২ লাখ টাকা সম্পর্কেও একই উপসংহার টানা হয়।

কোম্পানি দুটির জবাব

কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত জবাবে প্রতিষ্ঠান দুটি বলেছে, ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার নোটিশ 'সম্পূর্ণ বেআইনি ও ভিত্তিহীন এবং মনগড়া ও তথ্য-উপাত্ত বিহীন।'

জবাবে প্রতিষ্ঠান দুটি আরও বলে, 'আমাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আইন ও বিধি সম্মতভাবেই প্রযোজ্য সমুদয় মূসক পরিশোধপূর্বক ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া আসিতেছি।'

কোম্পানি দুটির চিঠিতে বলা হয়েছে, 'আমরা প্রতি অর্থবছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করিয়া থাকি। কিন্তু আমাদের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন এবং আমরা ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করিয়াই প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। সেইক্ষেত্রে ব্যাংক হইতে ঋণ গ্রহণের জন্য আমাদেরকে অতিরিক্ত লেনদেন সিএ ফার্ম কর্তৃক সম্পাদিত অডিট রিপের্টে দেখাইতে হয়।'

'ব্যাংক হইতে ঋণ গ্রহণের জন্য উল্লেখিত অডিট রিপোর্টে অতিরিক্ত বিক্রয়মূল্য প্রদর্শন করা হইয়াছে। কিন্তু সঠিক বিক্রয় অনুযায়ী দাখিলপত্র দাখিল করা হইয়াছে এবং সেই মোতাবেক মূসক পরিশোধ করা হইয়াছে।'

প্রতিষ্ঠান দুটি আরও জানায়, '২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে যে পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করা হইয়াছে সেই পরিমাণ আমদানিকৃত কাঁচামাল দ্বারা সিএ রিপোর্টে উল্লেখিত বিক্রয়মূল্যে প্রদর্শিত পণ্য উৎপাদন করতঃ বিক্রয় করা সম্ভব নয়।'

তারা আরও জানায়, অডিট প্রতিবেদনে দেখানো বিপুল পরিমাণ পণ্য উৎপাদনের জন্য তাদের কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যক 'মেশিনারিজ সক্ষমতা নাই এবং শ্রমিক কর্মচারীও কর্মরত নাই' এবং 'স্থানীয় বাজারেও সিএ রিপোর্টে উল্লেখিত বিক্রয়ের চাহিদা নাই'।

উভয় কোম্পানিই বলেছে, 'কাঁচামাল আমদানির তথ্য এবং উপকরণ-উৎপাদন সহগ সঠিকভাবে পর্যালোচনা করিলেই ইহার সত্যতা প্রমাণিত হইবে যে, সিএ রিপোর্টে প্রদর্শিত বিক্রয় সঠিক নয়, বরং দাখিলপত্রে প্রদর্শিত বিক্রয় ও বিক্রয়ের বিপরীতে পরিশোধিত মূসকের পরিমাণ সঠিক আছে।'

তারা এটাও দাবি করেছে, স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করার যে তথ্য কাস্টমস তাদের প্রতিবেদনে বলেছে 'তাহা সঠিক নয়'।

'কারণ, আমাদের প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ভোজ্যতেলের বিপরীতে যাবতীয়/সমুদয় কাঁচামাল বিদেশ হইতে আমদানিনির্ভর। অর্থাৎ, স্থানীয়ভাবে কোনো কাঁচামাল সংগ্রহ করা হয় না। বিধায় কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের বিপরীতে যোগানদার খাতের আওতায় উৎসে মূসকের দাবি সঠিক নয়।'

'ফৌজদারি অপরাধ'

পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এবং আয়কর ও ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া সব বাণিজ্যিক নথিতে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ক্রয় ও বিক্রয় তথ্য একই হতে হবে। এর অর্থ হলো, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি একটি আইনি বাধ্যবাধকতা যে, ভ্যাট অফিস, আয়কর অফিস, ব্যাংক এবং সিএ ফার্মের মাধ্যমে অডিটকৃত আর্থিক প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা ক্রয় ও বিক্রয়ের তথ্য 'অভিন্ন হতে হবে'।

উভয় কোম্পানির ক্ষেত্রে পর্যালোচনা কমিটি বলেছে, 'প্রতিষ্ঠানের লিখিত জবাব, মূসক এবং আংকর দপ্তরে সংরক্ষিত বাণিজ্যিক দলিলাদি পর্যালোচনায় এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে আলোচ্য প্রতিষ্ঠানটি মূসক পরিহারের অভিপ্রায়েই মূসক দপ্তরে দাখিলকৃত দাখিলপত্রে প্রকৃত বিক্রয়/ক্রয় এবং উৎসে প্রদেয় মূসকের তথ্য গোপন করেছে।'

এ ছাড়া, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ 'লিখিত জবাবের স্বপক্ষে প্রয়োজনীয় প্রমাণক/দলিলাদি উপস্থাপনের জন্য একাধিকবার অনুরোধ জানিয়ে পত্র প্রেরণ করা হলেও প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের প্রমাণক/দলিলাদি এ দপ্তরে প্রেরণ করেননি।'

পর্যালোচনা প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অডিট কমিটি কোম্পানিগুলোর কাছে লিখিতভাবে অনুরোধ করলেও কোম্পানিগুলো অপরিশোধিত ভ্যাটের পরিমাণ পুনরায় পরীক্ষা করার জন্য কোনো প্রতিনিধিকে মনোনীত করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, 'তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য এ ধরনের একটি অতিরঞ্জিত ক্রয়-বিক্রয়ের তথ্য সন্নিবেশ করে রিপোর্টটি তৈরি করেছেন মর্মে দাবি করন। এটা যদি সত্য হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে তারা সুস্পষ্টভাবে একটি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন।'

এতে আরও বলা হয়, 'অপরদিকে, যে অডিট ফার্ম এ প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে, তারা পেশাগত অসততা প্রদর্শন করেছেন এবং প্রকারান্তে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে একটি ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেছেন।'

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, 'কাল্পনিক ও অসত্য' অডিট প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঋণ মঞ্জুর করে থাকলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকও 'খুবই অপেশাদার কাজ করেছে'।

'অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির এ দাবি মেনে নেওয়ার অর্থ হবে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজকে প্রশ্রয় দেওয়া, যা সরকারের কোনো সংস্থা করতে পারে না।'

'আলোচ্য সিএ ফার্ম সম্পাদিত অডিট রিপোর্টটি মূল্য সংযোজন কর দপ্তর কর্তৃক সংগ্রহ করা হয়েছে আয়কর সার্কেল থেকে, যা অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেখানে দাখিলকৃত। সংশ্লিষ্ট আয়কর সার্কেল এ অডিট রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর-দায়িতা নির্ধারণ করে তা নিষ্পত্তি করেছে। সেখানে কোনো ব্যাংক ঋণের সংশ্ষেণ নেই। তাই, ব্যাংক ঋণ গ্রহণের জন্য এ প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে—এ দাবিটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।'

এই তিন অর্থবছরের মধ্যে দুটি অর্থবছরে এস আলমের প্রতিষ্ঠান দুটির অডিট প্রতিবেদন তৈরি করেছে হাওলাদার ইউনুস অ্যান্ড কোং।

তাদের ভাষ্য, 'আমাদের কাজ ছিল প্রতিষ্ঠানটি যে হিসাব প্রস্তুত করেছে সেটি নোটসহ অডিট করা। আমরা অডিট পরিচালনা ও অডিট মতামতের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অডিট মান অনুসরণ করেছি। কাজেই, কোনো বিষয়ে কাউকে সহযোগিতা করার প্রশ্নই ওঠে না।'

এস আলম গ্রুপ ভ্যাট ফাঁকি এস আলম ভেজিটেবল অয়েল লিমিটেড এস আলম সুপার এডিবল অয়েল লিমিটেড এনবিআর

এ সম্পর্কিত আরো খবর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

সব খবর

সব খবর

আরো পড়ুন

Logo

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: jugerchinta24@gmail.com

আমাদের কথা যোগাযোগ শর্তাবলি ও নীতিমালা গোপনীয়তা নীতি বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা

অনুসরণ করুন

২০২৫ যুগের চিন্তা ২৪ কর্তৃক সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

ঠিকানা: ২১/বি (৫ম তলা), গার্ডেন রোড, পশ্চিম তেজতুরীবাজার, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫ | যোগাযোগ: +৮৮০১৩৩৯৪০৯৮৩৯, +৮৮০১৩৩৯৪০৯৮৪০ | ই-মেইল: jugerchinta24@gmail.com