Logo
Logo
×

অর্থনীতি

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে আমানত ফেরত নিয়ে জটিলতা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৮ পিএম

সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকে আমানত ফেরত নিয়ে জটিলতা

পাঁচটি শরিয়াভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হয়ে গঠিত সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া নিয়ে নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। যাদের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা, তারা সবাই একীভূত হওয়া পুরোনো পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহক। এসব গ্রাহকের সব হিসাব নতুন ব্যাংক, অর্থাৎ সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংকের আওতায় প্রতিস্থাপন করতে হওয়ায় অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক একাধিকবার আশ্বাস দিলেও বাস্তবে টাকা তুলতে না পেরে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন আমানতকারীরা। জরুরি প্রয়োজনেও নিজেদের হিসাব থেকে অর্থ উত্তোলন করতে পারছেন না তারা। চিকিৎসা, বিয়ে কিংবা সন্তানের পড়াশোনার মতো প্রয়োজন মেটাতে ধার-দেনার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। চলতি সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত না পেলে আগামী ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন একীভূত পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরা।

এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক একীভূত হয়ে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে গত ২ ডিসেম্বর।

ইউনিয়ন ব্যাংকের গ্রাহক আলিফ রেজা বলেন, কষ্টার্জিত অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় গ্রাহকরা পথে পথে ঘুরছেন। গভর্নরের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ধৈর্যের সীমা ভেঙে যাচ্ছে। তিনি জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আগে ঘোষিত কর্মসূচির তারিখ পরিবর্তন করে ২৩ ডিসেম্বর নতুন করে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে, যেখানে পাঁচ ব্যাংকের গ্রাহক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেবেন।

এক্সিম ব্যাংকের আমানতকারী সোহানুর রহমান বলেন, দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ী হিসাবের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলা হলেও এর বেশি আমানত, যেমন এফডিআর, ডিপিএস বা সঞ্চয়পত্রের বিষয়ে এখনো স্পষ্ট ঘোষণা নেই। এই অনিশ্চয়তা দূর করতে ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পরিষ্কার নির্দেশনা চান তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুরোনো পাঁচ ব্যাংকের সব হিসাব নতুন ব্যাংকে স্থানান্তরের প্রক্রিয়ায় প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক জটিলতা দেখা দিয়েছে। নতুন ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ এইচআর কাঠামো এখনো গড়ে না ওঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আইটি সিস্টেম ব্যবহার করে এই কাজ করতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংক রেজল্যুশন ডিপার্টমেন্টের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, গ্রাহকদের আমানত ফেরতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইতোমধ্যে নতুন ব্যাংকের অধীনে অর্থ ছাড় করেছে। তবে প্রক্রিয়াগত চ্যালেঞ্জের কারণে অর্থ বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক গ্রাহকের টাকা ফেরতের কাজ প্রায় শেষ করেছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

মী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়ুব মিয়া বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের আমানত বিমা তহবিলের অর্থ ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। তবে গ্রাহকদের নামে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, পুরোনো অ্যাকাউন্ট একীভূত করা এবং শাখাভিত্তিক অর্থ ছাড়ের কারণে সময় লাগছে। তবুও ডিসেম্বরের মধ্যেই গ্রাহকরা টাকা পাবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, যাদের হিসাবে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা রয়েছে, তারা পুরো অর্থ তুলতে পারবেন। আর যাদের আমানত দুই লাখ টাকার বেশি, তারা আপাতত সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পাবেন। বাকি অর্থ ফেরতের বিষয়ে পরবর্তী সময়ে নীতিমালা নির্ধারণ ও নতুন মুনাফার হার ঠিক করা হবে। একই ব্যাংকে একাধিক হিসাব থাকলেও একটি হিসাবের বিপরীতেই অর্থ পাওয়া যাবে, যা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। তবে কোনো হিসাবে ঋণ থাকলে ঋণ সমন্বয় শেষে ফেরতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন হবে, যা আমানত বিমা তহবিল থেকে ছাড় করা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও বরাদ্দ দেওয়া ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড় হয়েছে বলে জানা গেছে।

Swapno

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher

Major(Rtd)Humayan Kabir Ripon

Managing Editor

Email: [email protected]

অনুসরণ করুন