রোজা সামনে রেখে ছয় নিত্যপণ্যে শুল্ক ছাড়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১৬ এএম
রোজা সামনে রেখে সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, মটর ডাল ও খেজুরের চাহিদা বাড়ায় এসব পণ্যের আমদানি এরই মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রোজা পর্যন্ত এই ছয় নিত্যপণ্যের আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক ছাড় বহাল রাখার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম খবরের কাগজকে বলেন, রোজায় পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হচ্ছে এবং এলসি খোলার সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয়ার্ধে রোজা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ উপলক্ষে খেজুরের ওপর বিদ্যমান শুল্ক, বিশেষ করে আমদানি শুল্ক কিছুটা কমানো হয়েছে। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছয় পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনসহ (বিটিটিসি) বিভিন্ন দপ্তরে শুল্ক ছাড় ও এলসি খোলার কড়াকড়ি শিথিলের আবেদন জানিয়ে আসছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় সরকার ইতোমধ্যে খেজুর আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে। যেসব পণ্যে শুল্ক ছাড় আছে, তা বহাল রাখা হবে এবং বাকি পণ্যের ক্ষেত্রেও দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, খেজুরের ওপর মোট শুল্ক ছিল ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর পর বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ৭ শতাংশে।
এদিকে রোজা সামনে রেখে ছয় নিত্যপণ্যের আমদানি ও এলসি খোলার পরিমাণও বেড়েছে। এনবিআরের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সয়াবিন তেল আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ, চিনি ১১ শতাংশ, মসুর ডাল ৮৭ শতাংশ, ছোলা ২৭ শতাংশ, মটর ডাল ২৯৪ শতাংশ এবং খেজুর ২৩১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বরে মোট ৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার এবং অক্টোবরে ৫ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সয়াবিন তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৮৬৫ টন, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪ টন। একই সময়ে চিনি আমদানির এলসি হয়েছে ২ লাখ ৯২ হাজার ৫৭২ টন, আগের বছর ছিল ২ লাখ ৬৪ হাজার ৪৪৬ টন।
ডাল, ছোলা ও খেজুরসহ অন্যান্য পণ্যের আমদানিও বেড়েছে। চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ডাল আমদানির এলসি হয়েছে ৫০ হাজার ৩৫৫ টন, যা গত বছর ছিল ২৬ হাজার ৯১২ টন। ছোলার এলসি ৪২ হাজার ৮৯১ টন থেকে বেড়ে ৫৪ হাজার ৫১৬ টনে দাঁড়িয়েছে। খেজুর আমদানির এলসি হয়েছে ১০ হাজার ১৬৫ টন, আগের বছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ৬৩ টন। মটর ডালের ক্ষেত্রে এলসি বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮১০ টন, যা গত বছর ছিল ৪১ হাজার ৮১৫ টন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই আমদানির ধারা নভেম্বর-ডিসেম্বরেও অব্যাহত থাকবে। বেশির ভাগ পণ্য আগেভাগেই আনা হলেও রোজা শুরুর অন্তত এক মাস আগ পর্যন্ত আমদানি চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।



